ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

পদ্মা সেতুর আরও দুটি স্প্যান এসে পৌঁছেছে মাওয়ায়

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

পদ্মা সেতুর আরও দুটি স্প্যান এসে পৌঁছেছে মাওয়ায়

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মাওয়া থেকে ফিরে ॥ মাওয়ায় আরও দু’টি স্প্যান এসে পৌঁছেছে। এদিকে চীনাদের নববর্ষের ছুটি শেষে শুক্রবার থেকে আবার পুরোদমে কাজ শুরু হয়েছে। ১০টি বার্জে বিশাল এই চালান রবিবার থেকে আসতে শুরু করে। এর আগে আরও চারটি স্প্যান মাওয়ায় পৌঁছেছে। এর মধ্যে প্রথম স্প্যানটি ফিটিং করে লোড টেস্ট সম্পন্ন করে রাখা হয়েছে। এখন পিলার উঠলেই এই স্প্যানটি বসিয়ে দেয়া হবে। বাকি তিনটি স্প্যানও ফিটিংয়ের কাজ চলছে। নতুন দু’টি স্প্যানসহ মাওয়ায় এখন মোট স্প্যান ছয়টি। পদ্মা সেতুর ৪২টি পিলারে ৪১টি স্প্যান লাগবে। ১৫০ মিটার দীর্ঘ সেতুটির সুপার স্ট্রাকচারের প্রতিটি স্প্যানের ওজন প্রায় ২ হাজার ৯০০ টন। এদিকে মাওয়ায় ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে পাইল ড্রাইভ করার কথা থাকলে তা সম্ভব হয়নি। চার নম্বর পিলারের কাছে সয়েল টেস্টের জন্য করা মঞ্চ গত বর্ষায় ভেঙ্গে যায়। এতে পদ্মার তলদেশে মাটিতে লোহার টিউব রয়ে গেছে। এটি অপসারণ না করে পাইল স্থাপন শুরু করা যাচ্ছে না। তাই এগুলো অপসারণের কাজ চলছে। এদিকে জাজিরা প্রান্তে ট্রানজিট পিলারে লোড টেস্ট শুরু হয়েছে। তিনটি পাইল স্থাপনের পর নিয়ম অনুযায়ী এই লোড টেস্ট। ১৪ দিন ধরে এই লোড টেস্ট করা হবে। লোড পরীক্ষার পরই আবার পাইল স্থাপন শুরু হবে। এই ট্রানজিট পিলারে ১৬টি পাইল বসবে। জাজিরা প্রান্তে ভয়াডাক্টের কাজও এগিয়ে চলেছে। তবে মাওয়া প্রান্তে নতুন টেস্ট পাইল স্থাপন এবং লোড টেস্টের পরই এই প্রান্তের কাজ শুরু হবে। দেশের সর্ববৃহৎ এই প্রকল্পে কর্মরত চীনা কর্মীদের অনেকেই নববর্ষের ছুটিতে দেশে গিয়েছিলেন। তাদের ছুটি শেষে কাজে যোগদান করেছেন বুধবার। তবে পুরোদমে তারা কাজে লেগেছেন শুক্রবার। চলতি মাসই কাজের তদারকিতে যোগ দিচ্ছেন বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের বিশেষজ্ঞ। এদিকে পদ্মা সেতুর প্রকল্পের আওতায় পদ্মার ওপর দিয়ে ন্যাশনাল গ্রিডের বিদ্যুত লাইন স্থাপন হচ্ছে। তাই পদ্মার বুকে এই বিদ্যুত লাইনের জন্য সাতটি পিলার স্থাপন করার প্রক্রিয়ায় সয়েল টেস্ট শুরু হয়েছে। এই বিদ্যুত লাইনটি হচ্ছে শিমুলিয়া-মাঝিকান্দি ন্যাশনাল গ্রিড লাইন। নতুন এই লাইনের মাধ্যমে ন্যাশনাল গ্রিডে যুক্ত হবে শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জসহ আশপাশের জেলাগুলো। সব মিলিয়ে এখন নির্মাণযজ্ঞে অনেক স্বপ্নই দৃশ্যমান হতে চলেছে। কল্পনার খোলস থেকে বেরিয়ে আসছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৫ কোটি মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতু। ২০১৮ সালের মধ্যে কাজ শেষ করার লক্ষ্যে চলছে বিশাল এই কর্মযজ্ঞ। দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে, মূল সেতুর নির্মাণকাজ। তাই দিন বদলের সোনালি সময়ের দিকে তাকিয়ে পদ্মা পাড়ের বাসিন্দারা। পদ্মা সেতু ঘিরে এখন চারদিকে চরম ব্যস্ততা শ্রমিকদের। দিন যত যাচ্ছে, দৃশ্যমান হচ্ছে নানা স্থাপনা। এরই মধ্যে শেষ হয়েছে কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড, পুনর্বাসন প্রকল্পের নির্মাণকাজ, টোল প্লাজা, রিসোর্ট। আর শরীয়তপুর-মাদারীপুর অংশের সাড়ে ১১ কিলোমিটার সংযোগ সড়কের কাজ শেষ হচ্ছে আগামী মার্চে। পদ্মার পাড়ে দিনরাত কাজ করছে বিভিন্ন দেশের প্রকৌশলী ও শ্রমিকরা। তাদের পাশাপাশি কর্মসংস্থান হয়েছে এ দেশের অনেক শ্রমিকের। এমন মেগা প্রকল্পে কাজ করতে পেরে খুশি তারা। এমনই একজন বগুড়ার প্রকৌশলী মো. সাজেদুর রহমান। তিনি জানান, এই কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পেরে অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করছে। আর ট্রানজিট পিলারের কাছে শ্রমিকের কাজ করা ফরিদপুরের মো. সবুজ জনকণ্ঠকে বলেন, ‘এই সেতু তো আমাগো সেতু। এই সেতু বানানের কাজে থাকতে পারছি, এইডাই আমার জীবনের বড় অর্জন।’ পদ্মা সেতু ঘিরে দিন বদলের স্বপ্ন বিভোর এই অঞ্চলের মানুষ।
×