ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

বিআরটিএর বক্তব্য, তাদের কিছু করার নেই- হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা আছে

ইজিবাইক চলাচলে বৈধতা দিতে অসুবিধা কোথায়?

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

ইজিবাইক চলাচলে বৈধতা দিতে অসুবিধা কোথায়?

রাজন ভট্টাচার্য ॥ তিন চাকার ব্যাটারিচালিত গাড়ি ইজিবাইক। রাজধানীর অলি গলি থেকে শুরু করে জেলা, মফস্বল শহর থেকে গ্রামের রাস্তায় ছড়িয়ে গেছে জনপ্রিয় এই বাহন। মধ্য ও নিম্ন বিত্তের প্রাইভেট কারও বলা হয়ে থাকে এটিকে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বর্তমানে সারাদেশে ১০ লাখের বেশি এ গাড়ি চলছে। এর ওপর জীবিকা নির্বাহ করছেন প্রায় ৫০ লাখ মানুষ। প্রতিমাসে বিক্রি হচ্ছে কমপক্ষে দুই হাজার গাড়ি। অথচ সরকারীভাবে গাড়ি আমদানি নিষিদ্ধ। কিন্তু বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে পার্টস আমদানির অনুমতি দেয়া হয়েছে। আমদানিকৃত পার্টস দিয়ে দেশেই তৈরি হচ্ছে ইজি বাইক। এসব গাড়ির পার্টস আমদানির সঙ্গে যুক্ত ৩০টির বেশি প্রতিষ্ঠান। সব মিলিয়ে গোটা দেশেই নিষিদ্ধ ও অনুমোদনহীন এই পরিবহনের সুবিধা নিচ্ছে বেশিরভাগ মানুষ। প্রশ্ন হলো, ইজি বাইক বৈধভাবে চলাচলের অনুমতি দিতে অসুবিধা কোথায়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, রিক্সা থেকে চলাচলে ইজিবাইক গাড়ি সময় সাশ্রয়ী। রিক্সা ও সিএনজি থেকে ভাড়াও কম। একসঙ্গে বেশি মানুষ যাতায়াত করতে পারেন। অল্প টাকায় বেশি দূরত্বে যাতায়াত করা সম্ভব। সেইসঙ্গে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের অর্থনৈতিক উন্নতি হচ্ছে ব্যাপকভাবে। চালকরাও হচ্ছেন সাবলম্বী। পাশাপাশি রিক্সা চালানোর মতো কঠিন কায়িক পরিশ্রম থেকে ইজিবাইক চালানো খুবই সহজ। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) ইজিবাইক চালানোর অনুমতি দিলে গাড়ি প্রতি পাঁচ হাজার টাকা করে ১০ লাখ গাড়ি থেকে বছরে ৫০০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করা সম্ভব। পাশাপাশি রাজধানী ঢাকাসহ দেশজুড়ে ইজিবাইক চলাচলের অনুমতি দেয়া হলে পরিবহন সংকট সমাধান সম্ভব। তারা বলছেন, সরকারীভাবে এই গাড়িটি চলাচলের বৈধতা দেয়া হলে প্রয়োজনে মহাসড়কের বাইরে চলাচল করবে। সড়ক নিরাপত্তায় সরকারকে সহযোগিতার আশ্বাসও দিয়েছেন তারা। বাস্তবতা হলো নিষিদ্ধ হলেও এই শিল্পখাত বিস্তার লাভ করেছে অনেক বেশি। এখন ব্যবসায়ীদের পণ্য আমদানিতে লোন দিচ্ছে ব্যাংক। খোলা হচ্ছে একের পর এক এলসি। এর পরও ইজি বাইক খাতকে ইতিবচাক দৃষ্টিতে দেখা হচ্ছে না। চলাচলে বৈধতা না থাকায় পুলিশী হয়রানির শিকার হচ্ছেন চালকসহ ব্যবসায়ীরা। ২০০১ সালের ৫ মে ইজিবাইকের আমদানি বন্ধে সরকারী সিদ্ধান্ত হয়। ২০১৫ সালের ২৭ জুলাই সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় ২২ জাতীয় মহাসড়কে অটোরিকশাসহ তিন চাকার সব ধরনের যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করে। আগামী সাত দিনের মধ্যে ১০ জেলার মহাসড়কে নছিমন করিমন বন্ধের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। সম্প্রতি উচ্চ আদালত থেকে এই নির্দেশনা জারি করা হয়। বিআরটিএ বলছে, আদালতের নির্দেশনার পরে ইজিবাইক নিয়ে ইতিবাচক চিন্তার সুযোগ নেই। পরিবহন সংকট সমাধানে বিকল্প চিন্তার কথা বলছেন তারা। ব্যবসায়ীদের দাবি ইজিবাইক চলাচলের জন্য একটি সুনির্র্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করা হোক। এতে দেশের বেকার সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে। সড়ক নিরাপত্তার হুমকি এড়াতে ইজি বাইক চালকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণেরও দাবি ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকদের। চলতি অধিবেশনে জাতীয় সংসদে এক প্রশ্নের উত্তেরে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও ক্ষুদ্র যানবাহন অবৈধভাবে চলাচল করে। ১৯৮৩ সালের মোটরযান অধ্যাদেশ অনুযায়ী, ব্যাটারি চালিত যানবাহন মোটরযান নয়, ফলে বিআরটিএ থেকে কোন রেজিস্ট্রেশন দেয়া হয় না। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। বিআরটিএ সূত্রগুলো বলছে, সম্প্রতি ইজি বাইকের বৈধতা নিয়ে পরিবহন নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি কার্যালয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) পক্ষ থেকে বলা হয়, ইজিবাইক আমদানির সময় তাদের অনুমোদন নিতে আমদানিকারকরা এসেছিল। কিন্তু এই বাইকগুলো যে যান্ত্রিকভাবে ত্রুটিমুক্ত এবং পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নয়, সে সংক্রান্ত সনদ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়ে আসার পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু আমদানিকারকরা সে ধরনের কোন সনদ জমা দিতে পারেনি। তাই বিআরটিএ নিবন্ধন দেয়নি। আমদানিকারকদের সঙ্গে কথা বলা জানা যায়, বর্তমানে ইজি বাইক আমদানির জন্য এক লাখের বেশি এলসি খোলা আছে। চীন থেকে আসছে পার্টস ॥ চীন থেকে আমদানি করা পার্টস দিয়ে তৈরি হচ্ছে ইজি বাইকগুলো। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই যান পরিবেশবান্ধব। এ ছাড়া সেনাবাহিনীর অধীন বাংলাদেশ ডিজেল প্লান্টে সংযোজন করা হয়েছে আরও প্রায় ১০ হাজার ইজিবাইক। এসব ইজিবাইকের প্রতিটির ব্যাটারি চার্জ দিতে গড়ে প্রতিদিন ৯ কিলোওয়াট বিদ্যুত খরচ হচ্ছে। আর এ কারণে ইজিবাইকের আমদানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ৩০টি প্রতিষ্ঠান আমদানি করছে ॥ ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ইজিবাইক আমদানির সঙ্গে জড়িত প্রায় ৩০টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে বাংলাদেশে। এসব প্রতিষ্ঠান সারাদেশে জিলারের মাধ্যমে গ্রাহক পর্যায়ে গাড়ি সরবরাহ করছে। চীন থেকে আমদানি করা হচ্ছে গাড়ির সব ধরনের সরঞ্জাম। গত ৮ থেকে ১০ বছরে সারাদেশে ছড়িয়ে গেছে সহজলভ্য এই গাড়ি। দেশে প্রতি মাসে রয়েছে দুই হাজারের বেশি গাড়ির চাহিদা। চট্টগ্রাম ও মংলা পোর্ট দিয়ে এসব গাড়ির সরঞ্জাম আমদানি করা হয়। তারপর দেশীয় কারখানায় পার্টসগুলো জোড়া দিয়ে তৈরি হয় পুরো ইজিবাইক। বাংলাদেশে ইজিবাইক সরঞ্জাম আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রানার মোটরস ও তেরা মোটরস অন্যতম। লাবিব এন্টাপ্রাইজের স্বত্ব¡াধিকারী নাসির আহমেদ চৌধুরী বলেন, সারাদেশে মানুষ এখন ইজিবাইকের ওপর খুব বেশি নির্ভরশীল হয়ে যাচ্ছে। কারণ একজন চালক প্রতিদিন কমপক্ষে এই গাড়ি চালিয়ে এক হাজার টাকা আয় করছেন। কিন্তু চার লাখ টাকা ব্যয় করে বিদেশী গিয়ে মাসে ২০ হাজার টাকা আয় করতে শ্রমিকদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। তিনি বলেন, এই ব্যবসায় দেশের টাকা দেশেই থাকছে। তাছাড়া আমাদের এখন বিভিন্ন ব্যাংক ব্যবসার জন্য লোন দিচ্ছে। পণ্য আমদানির জন্য ব্যাংকগুলোতে বিপুল পরিমাণ এলসি খোলা হচ্ছে। আমরা মনে করি সরকার একটু সুযোগ দিলে এ খাত আরও দ্রুত এগিয়ে যাবে। নীতিমালা প্রণয়নের দাবি ॥ ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকারীভাবে নিষিদ্ধ থাকায় এখন পুরো গাড়ি আমদানি হচ্ছে না। পার্টস আমদানির পর তিনটি প্রতিষ্ঠান সরকারীভাবে থ্রি হুইলার বানানোর অনুমতি পেয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে, আফজাল মোটরস, নেহা এন্টারপ্রাইজ ও নাহার গ্রুপ। এছাড়াও ইফাদ অটোস ও রানার গ্রুপ গাড়ি তৈরির অনুমতির চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে। বর্তমানে প্রতিটি ইজিবাইক সর্বনিম্ন বিক্রি হচ্ছে এক লাখ ২২ হাজার টাকা পর্যন্ত, সর্বোচ্চ বিক্রি হচ্ছে এক লাখ ৪২ হাজার টাকা পর্যন্ত। ইজিবাইক পার্টস আমদানির সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, পরিবহনটির বৈধতার জন্য তারা বছরের পর বছর সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়সহ বিআরটিএ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। কিন্তু অনুমতি মেলেনি। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে বিআরটিএ পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই পরিবহনটিতে ইঞ্জিন ফাংশন নেই। তেলে চলে না। তাই তাদের পক্ষে রেজিস্ট্রেশন দেয়াও সম্ভব নয়। এরপর ব্যবসায়ীরা বলেছেন, রিক্সা চলাচলের জন্য যেভাবে বৈধতা দেয়া হয়েছে সেভাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ইজিবাইককেও বৈধতা দেয়া হোক। এতেও সাড়া মেলেনি। এরপর ব্যবসায়ীরা সরকারের কাছে ভিন্ন আবেদন নিয়ে যান। তারা বলেন, বিআরটিএ যদি অনুমতি না দেয় তাহলে বিকল্প হিসেবে বিভিন্ন এলাকার পৌরসভা ও ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের কার্যালয় থেকে এসব গাড়ি চলাচলের অনুমতি দেয়ার ব্যবস্থা করার অনুরোধ করা হয়। তাহলে দেশের সকল মফস্বল শহর সহ গ্রাম পর্যায়ে ইজি বাইক চলাচলে কোন প্রতিবন্ধকতা থাকবে না। এ প্রস্তাবেও মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কোন সদুত্তর পাওয়া যায়নি। ২০১৪ সালের আট ডিসেম্বর ইজিবাইক ব্যবসায়ীদের আয়োজনে রাজধানীতে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে বলা হয়েছে, দেশের বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে প্রায় ৮ লাখ ইজিবাইক চলছে। ব্যাটারিচালিত এই যান নীতিমালার আওতায় এনে প্রতি ইজিবাইক থেকে বছরে ৫ হাজার টাকা করে আদায় করলে বার্ষিক ৪০০শ’ কোটি টাকার রাজস্ব সংগ্রহ করা সম্ভব বলে মনে করেন ইজিবাইক আমদানিকারকরা। বাংলাদেশ ইজিবাইক আমদানি ও সরবরাহকারী ব্যবসায়ী সমিতি আয়োজিত অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয়, এই পরিবহনের সঙ্গে জড়িত প্রায় ৩০ লাখ পরিবার। কিন্তু নীতিমালা প্রণয়ন না করলে এই পরিবহনের সঙ্গে জড়িতদের জীবিকা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। ইজিবাইক গাড়ির জন্য খসড়া নীতিমালা প্রণয়নেরও দাবি জানানো হয়। জিম ট্রেড অটো লিমিটেডের স্বত্ব¡াধিকারী নজরুল ইসলাম নয়ন জনকণ্ঠকে বলেন, দিন দিন ইজিবাইকের চাহিদা বাড়ছে। কিন্তু ব্যবসা করতে গিয়ে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। একদিকে সরকার বলছে এসব গাড়ি চলবে না। বাস্তবতা হলো সবখানেই এখন ইজি বাইক। কিন্তু রাস্তায় বের হলেই পুলিশ ধরছে। এতে বিপাকে পড়তে হচ্ছে চালকসহ ব্যবসায়ীদের। তিনি বলেন, এই পরিবহনটির বিষয়ে সরকারের দ্বৈত অবস্থান থেকে সরে আসা উচিত। কর্মসংস্থান, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, চলাচলের সুবিধা থেকে শুরু করে এই পরিবহনটির ইতিবাচক দিকই বেশি। এসব বিবেচনায় নিয়ে ইজি বাইকের অনুমোদন দিলে দ্রুত আরও সম্প্রসারিত হবে এই শিল্পখাত। তিনি বলেন, পার্টস আমদানিতে কোন সমস্যা হচ্ছে না। এসপিআর পার্টস হিসেবে এসব গাড়ির যন্ত্রাংশ চীন থেকে আনা হচ্ছে। তিনি জানান, গাড়ির চেসিস ও পার্টস সবই ওজনের ওপর টাকা গুনতে হয়। চেসিসের ওপর ভ্যাট ও ট্যাক্স বেশি আরোপ করায় গাড়ির দাম আগের চেয়ে বেড়েছে বলেও জানান তিনি। ইজিবাইক চলাচলের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়নের দাবি জানিয়ে নিপ্পন সিটি বাইকের স্বত্ব¡¡াধিকারী মোঃ জিয়া উদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, ইজি বাইকের পার্টস আমদানির বৈধতা আছে। ইতোমধ্যে সারাদেশে ইজিবাইক ছড়িয়ে গেছে। প্রায় ৫০ লাখ মানুষের জীবিকা নির্বাহ হচ্ছে এই গাড়ি চালিয়ে। তাই আমরা চাই একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করে ইজিবাইক চলাচলের বৈধতা দেয়া হোক। এতে বিপুল পরিমাণ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। কমলাপুর থেকে নিয়ন্ত্রিত হয় সারা দেশের বাণিজ্য ॥ রাজধানীর কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়াম মূলত সারাদেশের ইজিবাইক বাণিজ্যের ঠিকানা। এই মার্কেটজুড়ে রয়েছে শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। যাদের বেশিরভাগই ডিলার। আবার খুচরা বিক্রেতাও রয়েছেন। ব্যবসায়ীরা জানান, আগে প্রতিদিন ২০০ বেশি খুচরা গাড়ি বিক্রি হতো। এখন পুলিশী তৎপরতা ও আইনী জটিলতাসহ নানা কারণে এখন খুচরা রিক্রি কমেছে। মা এন্টারপ্রাইজের হাফিজুর রহমান বলেন, আমরা ইজিবাইকের বৈধতা চাই। তাহলে বিক্রিও বাড়বে। তিনি বলেন, আশাকরি সরকার এ ব্যাপারে আন্তরিক হবে। মেইন বন কর্পোরেশনের মাহফুজুর রহমান বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশে ইজি বাইক একটি জনপ্রিয় পরিবহন। আমাদের দেশের জনপ্রিয়তা পেয়েছে বেশ। অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের পথ তৈরি হয়েছে। আশাকরি এই সেক্টরকে এগিয়ে নিতে সরকার আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসবে। রিক্সা চালকদের হাতে ইজি বাইক ॥ সাত্তার মিয়া। এক সময় যার উপার্জনের প্রধান মাধ্যম ছিল রিক্সা। দিনভর রিক্সা চালাতেন তিনি। বাড়ি নেত্রকোনা জেলার সদর উপজেলার নারায়ণপুর গ্রাম। চার বছর ধরে তার পরিচয় বদলে গেছে। এখন আর রিক্সা চালক বলে তাকে কেউ জানে না। অটোর ড্রাইভার সাত্তার। জনকণ্ঠকে সাত্তার জানালেন, সময় বদলে গেছে। রিক্সার বদলে অটো এসেছে এখন। তাই সবাই অটোমুখী। অল্প সময়ের মধ্যে বেশি পথ অতিক্রম করা যায়। যাত্রী পরিবহন করা যায় অনেক বেশি। আয়ও বেশি। আগে আমাদের বাজার থেকে প্রতিদিন শহরে দুই শতাধিক রিক্স চলাচল করত। এখন ৯৫ ভাগ রিক্সা চালকই অটোরিক্সা চালাচ্ছেন। কেউ নিজ অর্থায়নে গাড়ি কিনেছেন। কেউবা ভাড়া গাড়ি চালাচ্ছেন। যান্ত্রিক এই পরিবহনটি চালাতে কারও প্রশিক্ষণ নেই একথা জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা পৌর কর্তৃপক্ষে অস্থায়ী অনুমতি নিয়ে গাড়ি চালাই। পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এখন গ্রাম থেকে খোদ রাজধানী পর্যন্ত অটোর চলাচল। সব শহরেই কমছে রিক্সার সংখ্যা। তবে সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীতে অটো রিক্সার চলাচল অনেকটাই সীমিত করা হয়েছে। পুলিশী বাঁধায় অটোরিক্সা ছেড়ে অল্প দূরত্বে সিএনজি চালানো শুরু হয়েছে আবারও। তবে ঢাকার বেশ কিছু অলি-গলিতে অটোরিক্সা দেখা মেলে এখনও। গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. শামছুল হক বলেন, ইজিবাইক চলাচলের অনুমতি নেই। আবার আমদানিতেও বাধা নেই। ১১ লাখেরও বেশি ইজিবাইক রাস্তায় চলছে। যা নিষিদ্ধ, তা আমদানি করতে দেয়া উচিত নয়। নৌ-সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির মহাসচিব আশীষ কুমার দে জনকণ্ঠকে বলেন, সরকারীভাবে নিষিদ্ধ হলেও সারাদেশে ইজিবাইক চলছে। বলতে গেলে গোটা দেশ ছেয়ে গেছে এই পরিবহনে। তাই এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে এখন সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় এসেছে। যদি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয় তবে সব বন্ধ করে দেয়া উচিত। নইলে গাড়িগুলো চলাচলের জন্য আইনী বৈধতা জরুরী বলেও মনে করেন তিনি। ইজি বাইক বৈধতা দেয়ার সুযোগ নেইÑবিআরটিএ ॥ সারাদেশ এখন ইজিবাইকের দখলে। তাহলে জনপ্রিয় এই পরিবহনটি বৈধতা দেয়ার ক্ষেত্রে বিআরটিএ‘র কোন পরিকল্পনা আছে কিনা। এমন প্রশ্নে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) সচিব শওকত আলী জনকণ্ঠকে বলেন, সারাদেশে এই পরিবহনটির চাহিদা থাকলেও এখন উচ্চ আদালত থেকে চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আদালত যেখানে ইজি বাইক চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ক্ষেত্রে পরিবহনটির বৈধতা দেয়ার আর কোন সুযোগ নেই। তিনি বলেন, এখন এ নিয়ে আর কোন কিছু করা যাবে না। আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে পুলিশ প্রশাসন কাজ শুরু করেছে। শহরাঞ্চল থেকে শুরু করে মহাসড়কে ইজি বাইক ও অটোরিক্সা চলাচল বন্ধে আমরা বিআরটিএ’র পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নিচ্ছি। ইজিবাইকের পার্টস আমদানি হচ্ছে এমন প্রশ্নে সচিব বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে পার্টস আমদানির অনুমতি দেয়া হয়েছে। এখানে আমাদের করণীয় কিছু নেই। পার্টস আমদানির উৎস বন্ধ না হলে ইজি বাইকের উৎপাদনও বন্ধ হবে না। তাছাড়া পুরো বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আমদানি নীতির ওপর নির্ভরশীল। তিনি বলেন, স্বল্প দূরত্বে ইজিবাইক চলাচল করে। অল্প টাকায় চলাচল করা যায় বলেই সাধারণ মানুষ এটি ব্যবহার করছেন। অথচ সড়ক নিরাপত্তার জন্য ইজি বাইক খুবই হুমকি। তাই আমাদের বিকল্প চিন্তা করতে হবে। সাধারণ মানুষের যাতায়াতের সুযোগ নিশ্চিত করতে সরকারীভাবে বাস, মিনিবাস, লেগুনাসহ অটোরিক্সা বিপুল পরিমাণে আদানির বিকল্প নেই বলেও মত দেন তিনি।
×