ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

মেয়র মিরু জেলে ফাঁসির দাবিতে শাহজাদপুরে মিছিল

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

মেয়র মিরু জেলে ফাঁসির দাবিতে শাহজাদপুরে মিছিল

স্টাফ রিপোর্টার, সিরাজগঞ্জ/নিজস্ব সংবাদদাতা, শাহজাদপুর ॥ শাহজাদপুরের সাংবাদিক শিমুল হত্যা মামলার প্রধান আসামি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার সাংঠনিক সম্পাদক ও শাহজাদপুর পৌর মেয়র হালিমুল হক মিরুকে সোমবার বিকেলে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে সিরাজগঞ্জের চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। পরে অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোরশেদ আলম তাকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। সিরাজগঞ্জ কোর্ট পরিদর্শক মোঃ শহীদুল্লাহ জানান, আসামি মিরুকে নিয়ম অনুযায়ী নিকটবর্তী আদালতে হাজির করা হয়। পরবর্তীতে তাকে শাহজাদপুর আদালতে হাজির করে রিমান্ডের আবেদন করা হবে। এদিকে সকালে পুলিশ সুপার মিরাজ উদ্দিন আহম্মেদ তাঁর অফিসে এক প্রেস ব্রিফিং-এ জানান, মিরু শাহজাদপুর থানায় দায়ের করা শিমুল হত্যা মামলার প্রধান আসামি এবং শাহজাদপুর সরকারী কলেজ ছাত্রলীগ শাখার সভাপতি বিজয় মাহমুদকে হত্যা চেষ্টা মামলারও আসামি। তাকে সিরাজগঞ্জের গোয়েন্দা পুলিশ ঢাকার শ্যামলী থেকে শনিবার সন্ধ্যায় গ্রেফতার করেছে। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় শাহজাদপুর পৌরসভার মেয়র মিরু তার ছোট ভাই পিন্টু ও মিন্টুসহ ৮ জনকে পুলিশ আটক করেছে। এ মামলায় মেয়র মিরুকে প্রধান আসামি করে ১৮ জনের নামে শিমুলের স্ত্রী নুরন্নাহার মামলা করেছেন। এদিকে আদালতে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র হালিমুল হক মিরু দাবি করেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করেন। তিনি কখনও সাংবাদিককে হত্যা করতে পারেন না। তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলেও তিনি দাবি করেছেন। তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। তিনি আরও বলেন, যারা সরাসরি বলছে, আমিই গুলি করেছি, তারাই আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। গণবাহিনী থেকে আওয়ামী লীগে আসেন মিরু ॥ সাংবাদিক শিমুলকে গুলি করে হত্যাকারী সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের পৌর মেয়র হালিমুল হক মিরু জাসদ গণবাহিনীর সদস্য ছিলেন। জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন। সেখান থেকে সরে এসে দীর্ঘদিন ছিলেন নিষ্ক্রিয়, পরে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে শাহজাদপুর পৌর সভার চেয়ারম্যান হন। এক টার্ম পৌর নির্বাচনে হেরে গিয়ে পরবর্তীতে আবারও আওয়ামী লীগের টিকেটে মেয়র হয়েছেন। ২০১৫ সালে সিরাজগঞ্জে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে তাকে সাংগঠনিক সম্পাদক মনোনয়ন দেয়া হয়। তবে সাংবাদিককে গুলি করে হত্যা ঘটনায় তাঁর রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে কলঙ্ক জড়িয়ে পড়ে। গত রবিবার শাহজাদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের এক জরুরী সভায় জেলা আওয়ামী লীগ বরাবর তাকে দল থেকে বহিষ্কার করার সুপারিশ করা হয়েছে। হালিমুল হক মিরুর সঙ্গে তার অন্যতম সহযোগী এম নাসিরকেও আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এরা দুজনই উপজেলা আওয়ামী লীগে সদস্য ছিলেন। সাংবাদিকদের কাছে বহিষ্কারের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য হাসিবুর রহমান স্বপন বলেন, পৌর মেয়র মিরুর দলবিরোধী বিতর্কিত কর্মকা- এবং সর্বশেষ সংবাদ সংগ্রহে যাওয়া সমকাল প্রতিনিধি শিমুলকে গুলি করে হত্যার ঘটনা আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণœ করেছে। এজন্য উপজেলা আওয়ামী আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে তাদের বহিষ্কার করার সুপারিশ জেলায় পাঠানো হয়েছে। প্রসঙ্গত, ঠিকাদার কাজ না করায় শাহজাদপুর সরকারী কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি বিজয় মাহমুদ প্রতিবাদ করলে মেয়র হালিমুল হক মিরুর ছোট ভাই পিন্টু লোকজন নিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে তাকে বেদম মারধর করে হাত-পা ভেঙ্গে দেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে দলের কর্মী-সমর্থক ও তার মহল্লা কান্দাপাড়ার লোকজন লাঠিসোটা নিয়ে মনিরামপুর এলাকায় অবস্থিত পৌর মেয়র হালিমুল হক মিরুর বাড়ি ঘেরাও করে। এ সময় মেয়রের সমর্থকরা তাদের ওপরে হামলা চালালে উভয় পক্ষে সংঘর্ষ বাঁধে। এক পর্যায়ে মেয়র মিরু গুলি ছুঁড়লে ঘটনাস্থলে কর্তব্যরত দৈনিক সমকাল পত্রিকার শাহজাদপুর প্রতিনিধি আব্দুল হাকিম শিমুলের মাথায় ও মুখে গুলি লেগে গুরুতর আহত এবং তার অবস্থার অবনতি হলে শুক্রবার দুপুরে ঢাকায় নেয়ার পথে তিনি মারা যান। মিরুর ফাঁসির দাবিতে মিছিল ॥ এদিকে খুনী মেয়র হালিমুল হক মিরু ও তার ভাইদের ফাঁসির দাবিতে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল করেছে শাহজাদপুরবাসী। সোমবার বিকেলে ৪টায় গ্রেফতারকৃত খুনী পৌর মেয়র হালিমুল হক মিরু ও তার ভাইদের ফাঁসির দাবিতে শাহজাদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বানে শাহজাদপুরের সকল শ্রেণী পেশার মানুষ বিশাল বিক্ষোভ মিছিল করেছে। মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এ সময় মহিলারাও ঝাঁড়ু নিয়ে মিছিলে যোগ দেয়। মিছিলে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রফেসর আজাদ রহমান, পৌর আওয়ামী লীগ সাবেক সভাপতি আঃ রহিম, বর্তমাান সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম শাহুসহ হাজার হাজার লোক অংশগ্রহণ করে। উক্ত মিছিলটি বের হলে শাহজাদপুর শহড়জুরে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এ সময় গুরুত্বপূর্ণ স্থানসহ মেয়রের বাড়ির সামনে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এছাড়াও গত রবিবার রাতে মিরুর গ্রেফতারের খবর ছড়িয়ে পড়লে মধ্য রাতে এলাকাবাসী তার ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ করেছে এবং বিভিন্ন এলাকা থেকে উল্লাস প্রকাশ করে খ- খ- মিছিল বের হয়।
×