ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অমর একুশে গ্রন্থমেলা

বিতর্কিত বই, ত্রুটিপূর্ণ আয়োজন প্রশ্নবিদ্ধ বাংলা একাডেমি

প্রকাশিত: ০৬:০০, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

বিতর্কিত বই, ত্রুটিপূর্ণ আয়োজন প্রশ্নবিদ্ধ বাংলা একাডেমি

মনোয়ার হোসেন ॥ হাঁটি হাঁটি পা পা করে সোমবার ষষ্ঠ দিনে পা ফেলেছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। তবে ভাষা শহীদদের নিবেদিত একুশের গ্রন্থমেলাটি যেন এখন অশুভ শক্তির নিশ্বাসে সন্ত্রস্ত। উগ্রবাদীদের অঘটন ঘটানোর অজুহাত-ধর্মীয় আঘাত হানে এমন বইয়ের ব্যাপারে দারুণ সতর্ক আয়োজক বাংলা একাডেমি। সেই সুবাদে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে কিংবা বিতর্কিত বই খুঁজে বের করার দায়িত্বটি একাডেমি নিজের পরিবর্তে ছেড়ে দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওপর। কোন লেখক, প্রকাশক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব বা সুশীল সমাজের প্রতিনিধির পরিবর্তে বিতর্কিত বই চিহ্নিত করার দায়িত্বটি তুলে দেয়া হয়েছে পুলিশের হাতে। এমন সিদ্ধান্ত সহজেই ধর্মান্ধদের দাবিকে পরোক্ষভাবে প্রতিষ্ঠিত করে বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে। বই বিকিকিনির বাইরে সম্প্রীতির চেতনা ও মুক্তচিন্তার কথা বলা মেলাটি যেন কেমন করে ম্লান হয়ে যায়। ধর্মীয় অনুভূতিজুড়ে দেয়ার শর্তে দ্বিধাগ্রস্ত ও শঙ্কিত হন প্রকাশক। সেই সঙ্গে ক্ষুব্ধ হন লেখকও। অন্যদিকে ছয়দিন পেরুলেও কাটেনি মেলার অগোছালো ভাব। এ বছর মেলা অনেক নান্দনিক ও সুশৃঙ্খল হবেÑ আয়োজক বাংলা একাডেমির সেই প্রতিশ্রুতি এখন পরিণত হয়েছে বাগাড়ম্বরে। স্টল বিন্যাস সুন্দর হলেও একাডেমির প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে এখনও পাঠকদের বসার স্থান তৈরি হয়নি। মাঠের মাঝে একটি ফোয়ারা তৈরি করা হলেও ষষ্ঠ দিন পর্যন্ত সেটি থেকে জলের দেখা মেলেনি। সৌন্দর্য বাড়াতে গিয়ে মাঠের মধ্যে বড় একটি ব্যানারে জাতীয় সঙ্গীতের লাইন জুড়ে দিয়ে দৃষ্টিকটুভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে। সিনেমার পোস্টারের আদলে বিশ্বকবির বিশাল ছবিটির দুই পাশে ছোট করে জুড়ে দেয়া হয়েছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও বাউলসাধক শাহ আবদুল করিমকে। মেলার দুই প্রবেশপথ টিএসসি ও দোয়েল চত্বরের তোরণে মেলা সংক্রান্ত তথ্য উপস্থাপনে ডিজিটাল স্ক্রিনের কথা বলা হলেও সেটি এখনও দেখতে পাননি দর্শনার্থীরা। সব মিলিয়ে বিতর্কিক বই ইস্যু ও ত্রুটিপূর্ণ আয়োজনের কারণে এখন প্রশ্নবিদ্ধ বাংলা একাডেমি। বিতর্কিত বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে এমন বইয়ের বিষয়ে একাডেমির সিদ্ধান্তের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে লেখক ও ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা দেখছি ক্রমেই যেন মুক্তচিন্তার স্পেসটি সংকুচিত হচ্ছে। ধর্মীয় অনুভূতির দোহাই তুলে মৌলবাদীরা যখনই কোন হুমকি দিচ্ছে সেটা মেনে নিচ্ছে সরকার কিংবা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান। সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবইয়ে সাম্প্রদায়িকীকরণেও সেটার প্রমাণ মেলে। আমরাও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের বিরোধী। তবে কোন বইকে বিতর্কিত হিসেবে চিহ্নিত বা নিষিদ্ধ করতে হলে সেটি যথাযথ ও যুক্তিযুক্ত প্রক্রিয়ায় করতে হবে। অথচ এ বিষয়ে বাংলা একাডেমি যেন সব সময় আতঙ্কে ভুগছে। এসব কারণে মেলার দায়িত্ব একাডেমির ছেড়ে দিয়ে প্রকাশকদের ওপর ন্যস্ত করা উচিত। কারণ মেলা পরিচালনা করা বাংলা একাডেমির মৌলিক কোন কাজ নয়। তিনি আরও বলেন, জঙ্গী দমনে প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় অবস্থান যখন আমাদের আশাবাদী করে তখন আবার বইমেলাসহ নানা কিছুতে সরকারীভাবে ইসলামীকরণের তৎপরতা একইভাবে আশাহত করে। এ বিষয়ে শ্রাবণ প্রকাশনীর প্রকাশক রবীন আহসান বলেন, বাংলা একাডেমির কার্যনির্বাহী পরিষদে অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তি আছেন। তাঁদের পরিবর্তে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে বা বিতর্কিত বই খুঁজে বের করার দায়িত্ব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওপর ছেড়ে দেয়া অপরিণত সিদ্ধান্ত। বিতর্কিত বই চিহ্নিত করার এখতিয়ার পুলিশের নেই। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক বিধিবহির্ভূতভাবে এটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এছাড়া প্রকাশকদের সব গ্রন্থই জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের আর্কাইভেই জমা দিতে হয়। এমনকি এজন্য প্রকাশকদের সম্পাদনা পরিষদও রয়েছে। তাই বিতর্কিত বই খোঁজার দায়িত্ব সরাসরি পুলিশের হাতে তুলে দেয়া অযৌক্তিক। এসব বিষয়ে কথা হয় একুশে গ্রন্থমেলা পরিচালনা কমিটি সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদের সঙ্গে। তিনি বিতর্কিত গ্রন্থ চিহ্নিত করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওপর বাংলা একাডেমির দায়িত্ব দেয়ার কথা অস্বীকার করেন। বলেন, এ বিষয়ে তাদের কোন দায়িত্ব দেয়া হয়নি। তবে একাডেমির সঙ্গে গ্রন্থমেলা সংক্রান্ত বৈঠকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, কোন বই ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে কিনা সে বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন নজরদারি করবে। যদিও গত ৩০ জানুয়ারি একুশে গ্রন্থমেলার সংবাদ সম্মেলনে একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান বলেন, বিতর্কিত বই খুঁজে বের করার দায়িত্ব বাংলা একাডেমি নেবে না। এটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। গ্রন্থমেলা আয়োজনের বিভিন্ন ত্রুটি নিয়ে জালাল আহমেদ বলেন, নিরাপদ মিডিয়া নামের একটি নতুন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানকে এই দায়িত্ব দেয়ায় তারা এখনও সুষ্ঠুভাবে মেলার কাজ সম্পন্ন করতে পারেনি। আশা করছি আগামী দুই-একদিনের মধ্যে দর্শনার্থীদের বসার স্থান, ফোয়ারা ও তোরণের ডিজিটাল ডিসপ্লের কাজ সম্পন্ন হবে। কলকাতা বইমেলায় অংশগ্রহণের [জঞঋ নড়ড়শসধৎশ ংঃধৎঃ: }থএড়ইধপশ[জঞঋ নড়ড়শসধৎশ বহফ: }থএড়ইধপশকারণে এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামানকে পাওয়া যায়নি। তবে গত ৩০ জানুয়ারি গ্রন্থমেলার সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে এমন বিতর্কিত বই খুঁজে দেখার দায়িত্ব আমার নয়। এটা দেখবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে আমি কোনও কথা বলবও না। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা বিতর্কিত বইয়ের তকমা দিয়ে কোনও প্রকাশনীকে নিষিদ্ধ বা প্রকাশককে গ্রেফতার করা পক্ষান্তরে মৌলবাদীদের সমর্থন করে কিনাÑএমন প্রশ্নের জবাব কৌশলে এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমরা এখানে কথা বলবও না। পরবর্তীতে এ বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। ষষ্ঠ দিনের মেলাচিত্র ॥ সবে শৈশব পেরিয়ে কৈশোরে পড়েছে গ্রন্থমেলা। সোমবার ষষ্ঠ দিনে যথারীতি বেলা ৩টায় খুলে দেয়া হয় মেলার দুয়ার। দুপুরবেলায় তেমনভাবে পাঠকের দেখা না মিললেও বিকেল বেলায় বিভিন্ন স্টলে তাদের দেখা মেলে। তাই বলে বিপুল বই বিকিকিনি হয়েছেÑ বিষয়টা তেমন নয়। দর্শনার্থী হিসেবে মেলায় ঘুরে বেড়ানোতে ব্যস্ত ছিলেন বেশিরভাগ মানুষ। তবে অনুভূত হয়েছে ধীরে ধীরে মেলা জমে ওঠার লক্ষণটি। বেশিরভাগ প্রকাশনী সংস্থায় বিপণন কর্মী থাকলেও প্রকাশকদের দেখা মেলেনি। মেলায় আসা লেখকের সংখ্যাও ছিল হাতেগোনা। এদিন মেলায় দেখা মেলে ঢাকার বাইরে থেকে আসা এক গ্রন্থপ্রেমীর। এদিন সকালেই নরসিংদী থেকে মেলায় এসেছিলেন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা শহীদ উদ্দিন। কথা বলে জানা গেল এবারই প্রথম তিনি গ্রন্থমেলায় এসেছেন। কথা প্রসঙ্গে এই পাঠক বলেন, ভাল লাগার টানে ছুটে এসেছি মেলায়। বিভিন্ন স্টল ঘরে দশটি বই সংগ্রহ করেছি। গল্প, উপন্যাস ও কবিতার সঙ্গে আছে রম্যরচনা। এই প্রথমবারের মতো মেলায় এসে ভাল লাগছে। ইচ্ছে আছে মেলার শেষ দিকে আরেকবার আসব। মেলার উদ্যান অংশ কথা হয় ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশের প্রকাশক আদিত্য অন্তরের সঙ্গে। এই প্রকাশক বলেন, এখনও সেই অর্থে জমে উঠেনি মেলা। তবে মেলা ওঠার পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে। দর্শনার্থীদের সঙ্গে পাঠকরাও আসতে শুরু করেছেন। আশা করছি, আলস্য কাটিয়ে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে পুরোপুরি জমে উঠুক গ্রন্থমেলা। একাডেমির অব্যবস্থা নিয়ে এই প্রকাশক বলেন, এবার স্টলের বিন্যাস ভাল হলেও মেলায় আলোক স্বল্পতা রয়েছে। সন্ধ্যার পর মেলার কিছু অংশের আলোর ঘাটতি দেখা যায়। মাহবুবুল হক শাকিলের কাব্যগ্রন্থের প্রকাশনা : প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী সদ্য প্রয়াত কবি মাহবুবুল হক শাকিলের তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘জলে খুঁজি ধাতব মুদ্রা’র প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয় সোমবার বিকেলে। বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে এক বৈঠকি আড্ডায় বইটি নিয়ে আলোচনা করেছেন বইয়ের কবি হেলাল হাফিজ, কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ডাঃ দীপু মনি, মাহবুবুল হক শাকিলের সহধর্মিণী এ্যাডভোকেট নিলুফার আনজুম পপি ও তাঁর মেয়ে মৌমি এবং বইটির প্রকাশনা সংস্থা অন্বেষা প্রকাশনের প্রকাশক শাহাদাত হোসেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেছেন পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায়। কবি হেলাল হাফিজ বলেন, এই মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানকে আমি হৃদয় উন্মোচন বলছি। যারা কবিতার পাঠক, কবি শাকিলের আত্মার খবর রাখে তারা জানেন এই মোড়ক ইন্মোচনের পিছনে জড়িয়ে আছে কান্না, হাহাকার আর ভালবাসা। আমরা তাকে স্পর্শ করতে চাই, জড়িয়ে ধরতে চাই, ভালবাসতে চাই, আর তা হতে পারে তার বইকে পাঠ করে। ডাঃ দীপু মনি বলেন, শাকিল ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থেকেও ক্ষমতার কখনও অপব্যবহার করেননি। শাকিল বুঝতো মানুষের জন্য, রাজনীতির জন্য কী করতে হয়। তাই তিনি করতেন। শাকিল ছিল সুবিধাবঞ্চিত মানুষের অতি আপনজন। নিলুফার আনজুম পপি বলেন, ভালবাসার মানুষেরা কখনও হারায় না। আমার প্রতিটি সত্তায় তিনি বেঁচে থাকবেন। শাকিলের মেয়ে মৌমি বলেন, আমার বাবা আমার কাছে কবি হওয়ার আগে সব মানুষের কাছে কবি হয়েছেন। আমার ভাবতে ভাল লাগছে যে, আমার বাবার কবিতাকে এত মানুষ ভালবাসেন। ধ্রুব এষের প্রচ্ছদে ‘জলে খুঁজি ধাতব মুদ্রা’ বইয়ের ভূমিকা লিখেছেন অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। নির্বাচিত বই ॥ তরুণ প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের কথা, শহীদের কথা ও বীরাঙ্গনার তুলে ধরে ‘এ লড়াই অনিবার্য ছিল’ শীর্ষক বই লিখেছেন শহীদ বুদ্ধিজীবী কন্যা ডাঃ নুজহাত চৌধুরী। সেই খরস্রোতা সময়ের ঘটনাপঞ্জির সঙ্গে পরিসংখ্যান মেলে ধরা হয়েছে গ্রন্থটিতে। বইটি প্রকাশ করেছে মাওলা ব্রাদার্স। বিশ্ববিশ্রুত সেতারবাদক রবিশঙ্কর ও তাঁরই সমকালীন আরেক সেতারিয়া বিলায়েৎ খাঁ। ভিন্ন ঘরানার বাদনশৈলীর এই দুই বিখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞের জীবনস্মৃতি উঠে এসেছে ‘রবিশঙ্কর-বিলায়েৎ একটি অশ্রুত যুগলবন্দি শীর্ষক’ বইয়ে। সঙ্গীতবোদ্ধা শঙ্করলাল ভট্টাচার্যের অনুলিখন ও সম্পাদনায় বইটি প্রকাশ করেছে বেঙ্গল পাবলিকেশন্স। সম্প্রতি প্রবাসী হওয়া কবি মহাদেব সাহার ‘আমার কবিতাগ্রাম’ শীর্ষক কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেছে মাওলা ব্রাদার্স। একই প্রকাশনী থেকে এসেছে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত রচিত প্রবন্ধ গ্রন্থ ‘মুক্তিযুদ্ধের রচনাসমগ্র’। ধর্মান্ধ সমাজে মানবতার বাণী ফকির লালন সাঁইকে নিয়ে এসেছে লালন-গবেষক আবুল আহসান চৌধুরীর নতুন বই ‘লালন সাঁই মরমি ও দ্রোহী’। প্রকাশ করেছে বেঙ্গল পাবলিকেশন্স। বইটিতে লেখক প্রচলিত সংস্কার ও ধারণার বলয় থেকে বেরিয়ে নতুন চেতনা, উপলব্ধি, তথ্য, ব্যাখ্যা ও ভাষ্যে উপস্থাপন করেছেন লালন ফকিরকে। একই প্রকাশনী থেকে থেকে এসেছে সময়ের আলোচিত লেখক হরিশঙ্কর জলদাসের উপন্যাসগ্রন্থ ‘ইরাবতী’। নতুন বই ॥ বাংলা একাডেমির জনসংযোগ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী মেলার ষষ্ঠ দিনে নতুন বই এসেছে ৯০টি। এর মধ্যে গল্প ১৪, উপন্যাস ১১, প্রবন্ধ ১০, কবিতা ২২, ছড়া ২, শিশুসাহিত্য ৪, জীবনী ২, রচনাবলি ১, মুক্তিযুদ্ধ ১, বিজ্ঞান ৫, ভ্রমণ ২, ইতিহাস ২, চিকিৎসা/স্বাস্থ্য ৩, কম্পিউটার ১, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী ১ এবং অন্যান্য বিষয়ের ওপর নতুন বই এসেছে ৯টি। এছাড়া মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশের মোড়ক উন্মোচন মঞ্চে ৮টি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হয়। একাডেমির তথ্য থেকে নতুন বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলোÑ হরিশঙ্কর জলদাসের ‘জীবনানন্দ ও তাঁর কাল’, অবসর; আবু হাসান শাহরিয়ারের ‘অসময়ে নদী ডাকে’, প্লাটফর্ম; পিয়াস মজিদের ‘করুণ মাল্যবান ও অন্যান্য প্রসঙ্গ’, কথাপ্রকাশ; আহসান হাবীবের ‘মেছো ভূত’, রাত্রি প্রকাশনী; আবদুল মান্নান সৈয়দের ‘সুধীন্দ্রনাথ দত্ত: কালো সূর্যের নিচে বহ্ন্যূৎসব’, ঐতিহ্য; হুমায়ূন আহমেদের ‘সায়েন্স ফিকশন গল্পসমগ্র’, অনুপম প্রকাশনী; সেলিনা হোসেনের ‘উত্তর সারথি’, ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ, আনিসুল হকের ‘দ্য বস ইজ অলওয়েজ রাইট’, পার্ল পাবলিকেশন্স। মেলামঞ্চের আয়োজন ॥ সোমবার বিকেলে গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর অভিধান : দেড়শোতম জন্মবর্ষের স্মরণ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. স্বরোচিষ সরকার। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন অধ্যাপক আহমদ কবির, অধ্যাপক মহাম্মদ দানীউল হক ও হাকিম আরিফ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ড. গোলাম মুরশিদ। প্রাবন্ধিক বলেন, হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অসামান্য কীর্তি বঙ্গীয় শব্দকোষ। তিনি বাংলাদেশ অঞ্চলের লিখিত শব্দভা-ারকে ধারণ করার চেষ্টা করেছেন। তাঁর সংকলিত সংস্কৃত শব্দও বঙ্গীয়, অ-সংস্কৃত শব্দও বঙ্গীয়। বঙ্গদেশে প্রচলিত এবং লিখিত রূপে প্রাপ্ত যাবতীয় শব্দ নিয়ে তিনি অভিধান রচনা করতে চেয়েছিলেন, সফলতার সঙ্গে তা তিনি সম্পন্নও করেছেন। এটাই তাঁর কীর্তি। এই কীর্তির জন্য তিনি বঙ্গবাসীর নিকট কৃতজ্ঞতাভাজন। যতদিন বাংলা ভাষা থাকবে, বাংলা ভাষা ব্যবহারকারীদের নিকট হরিচরণের অভিধান ততদিন স্মরণীয় হয়ে থাকবে। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন ফাতেমা-তুজ-জোহরা, সুজিত মোস্তফা, ইয়াসমিন মুশতারী ও এ কে এম শহীদ কবীর পলাশ। আজকের আয়োজন ॥ আজ মঙ্গলবার অমর একুশে গ্রন্থমেলা সপ্তম দিনে গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘হরিচরণ বাংলা ভাষার প্রযুক্তি ব্যবহার’ শীর্ষক আলোচনাসভা। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন মোস্তাফা জব্বার। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন মোঃ নজরুল ইসলাম খান ও শ্যামসুন্দর সিকদার। সভাপতিত্ব করবেন অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী। সন্ধ্যায় রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
×