ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

ফুসফুস ক্যান্সারের রোগী প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে বাঁচানো সম্ভব

প্রকাশিত: ০৫:২২, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

ফুসফুস ক্যান্সারের রোগী প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে বাঁচানো সম্ভব

নিখিল মানখিন ॥ ফুসফুসের ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে রোগীকে বাঁচানো সম্ভব বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, চূড়ান্ত পর্যায়ে ধরা পড়লে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রোগীরা পাঁচ বছরের বেশি বাঁচে না। এখন অনেক নতুন কেমোথেরাপি, রিসিপটর বেইজ কেমোথেরাপি চলে এসেছে। সেগুলো দিয়ে হয়তো একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চেষ্টা করে রোগীকে পাঁচ বছর পর্যন্ত বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব। আসলে প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়ার ওপর রোগীর সুস্থতা অনেকটা নির্ভর করে। তাই এ বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা দরকার। বাংলাদেশ লাং ফাউন্ডেশনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য বেরিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মরণঘাতক হিসেবে এইডসের পরই ক্যান্সারের অবস্থান। ফুসফুসের ক্যান্সার একটি ভয়াবহ ব্যাধি। প্রতিবছর বিশ্বের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। ইদানীং মহিলাদের মধ্যে ধূমপানের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় মহিলারাও অধিকসংখ্যক হারে ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি থাকলেও এ রোগ থেকে সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভের কোন চিকিৎসা পদ্ধতি অদ্যাবধি আবিষ্কৃৃত হয়নি। যদি একবারে প্রাথমিক অবস্থায় রোগটি ধরা পড়ে তবে তা থেকে মোটামুটি আরোগ্য লাভ করা যায়। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রাথমিক অবস্থায় রোগ নিরূপণ দুঃসাধ্যই বলা চলে। জীবাণুঘটিত রোগ না হওয়ায় এর বিরুদ্ধে উপযুক্ত প্রতিরোধক বা প্রতিষেধক আবিষ্কারে বিজ্ঞানীরা সাফল্য অর্জনে সক্ষম হয়নি। তাই জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে যতটা সম্ভব প্রাথমিক অবস্থায় রোগ নির্ণয় ও সাফল্য অর্জনের মাধ্যমে মৃত্যুহার এবং এ রোগের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক বিপন্নতা কমানোর চেষ্টা সামাজিক আন্দোলনে রূপ নিচ্ছে। ধূমপায়ী ব্যক্তিই এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন বেশি। তবে অধূমপায়ীদের যে এ রোগ হতে পারে না তা কিন্তু নয়। নগরায়নের এ বিশ্বে শিল্পকারখানা ও গাড়ির নির্গত কালো ধোঁয়াও ফুসফুসের ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। এছাড়া বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ যেমন- ক্রোমিয়াম, ক্যাডমিয়াম, এ্যাসবেটপস ইত্যাদি এ রোগ সৃষ্টি করতে পারে। ফুসফুসের প্রদাহজনিত রোগ যেমনÑ যক্ষ্মা নিউমোনিয়া ভাল হওয়ার পর ফুসফুসের আক্রান্ত স্থানে ক্যান্সার দেখা দিতে পারে। ফুসফুসের যে কোন স্থান ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারে। এ রোগের উপসর্গ বা লক্ষণ সবার ক্ষেত্রে এক রকম হয় না। সাধারণভাবে এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি কাশি, কাশির সঙ্গে কফ বা রক্ত, শাসকষ্ট, বুকের ব্যথা হালকা, জ্বর, খাদ্যে অনীহা, ওজন হ্রাস ইত্যাদি উপসর্গ বা লক্ষণ নিয়ে হাজির হতে পারে। অনেক সময় এ রোগ শরীরের অন্যান্য স্থানেও ছড়িয়ে পড়ে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ফুসফুসের বিভিন্ন ধরনের ব্যাধির মধ্যে একটি জটিল ব্যাধি হচ্ছেÑ এমফাইসিমা। এমফাইসিমার ফলে ফুসফুসে মাত্রাতিরিক্ত বাতাস জমা হয়। এটি প্রধানত শ্বাসকষ্টজনিত রোগ। কারণ যখন ফুসফুসের ভেতরের দিকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত বাতাস জমা হয় তখন রোগীর কফ, কাঁশির সঙ্গে সঙ্গে শ্বাসকষ্ট প্রকট আকার দেখা দেয়। এমফাইসিমা একটি কষ্টদায়ক ব্যাধি। এই রোগটি মানবদেহে একদিনে বাসা বাঁধে না। দীর্ঘসময় নিয়ে এটি সৃষ্টি হয়। বাড়তি বাতাস জমা হলে ফুসফুস খুব দ্রুত ফুলে ওঠে এবং এর অভ্যন্তরের অংশগুলো অকেজো হয়ে কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষ্যণসমূহ ফুসফুসের মাধ্যমে যেহেতু পরিবেশের সব ভাল-মন্দ আমাদের শরীরে প্রবেশ করে, তাই এখানে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও থাকে সবচেয়ে বেশি। ফুসফুস ক্যান্সারের হাত থেকে বাঁচতে আমাদের প্রথম থেকেই সচেতন থাকা জরুরী। গবেষকরা বলেছেন, সঠিক সময়ে রোগটি চিহ্নিত করা না গেলে শতকরা ১০০ ভাগ ক্ষেত্রে রোগীর মৃত্যু হয়। আবার প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা না পড়লে একে নিয়ন্ত্রণও করা সম্ভব নয়। তারা বলেছেন, অনেক সময় প্রাথমিক পর্যায়ে ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষণগুলো বোঝা যায় না। অনেকের ক্ষেত্রে পর্যায় ৩ এ চলে যাওয়ার পর ধরা পড়ে। তারপরও কিছু লক্ষণ রয়েছে যা দেখলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরী। অনেক সময় চাপা কাশি ফুসফুসের ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। আবার অন্য নানা কারণেও চাপা কাশি হতে পারে। তারপরও কফ দীর্ঘদিন থাকলে ফুসফুসের ক্যান্সার থেকে বাঁচতে সঙ্গে সঙ্গেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ধূমপায়ী হলে দীর্ঘস্থায়ী কফের সঙ্গে বেশি শ্লেষ্মা ও রক্ত গেলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। নতুবা বিপদ থেকে রেহাই মিলবে না। শ্বাসকষ্ট বা দম কম পড়া ফুসফুস ক্যান্সারের অন্যতম লক্ষণ হতে পারে। এছাড়া শ্বাস-প্রশ্বাসের পথে ব্লক হলে, পথ সরু হয়ে গেলে শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ হুইসেলের মতো শোনালেও সতর্ক হন। তবে শারীরিক আরও সমস্যার কারণেও এটি হতে পারে। তারপরও আগাম সতর্কতায় শ্বাস-প্রশ্বাসে কোনরকম অস্বস্তি হলেই চিকিৎসকের কাছে যান। বেশ কিছুদিন ধরে মাথা ব্যথা, বুক ব্যথা কিংবা কাঁধে ব্যথা হলেও সাবধান হোন। কেননা এটিও ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে। হঠাৎ করে অনেকটা ওজন কমে যাওয়াও এ রোগের লক্ষণ হতে পারে। কণ্ঠস্বর কর্কশ বা ফেঁসফেঁসে হলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যান। এই লক্ষণ সাধারণত কাশি বা কফের সময় হয়। তবে এটা যদি দুই সপ্তাহের বেশি হয় তবে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। ফুসফুসের টিউমার কণ্ঠস্বরের স্নায়ুর ওপর প্রভাব ফেললে এই সমস্যা হয়। হঠাৎ করে খিদে কমে যাওয়া খুব একটা ভাল লক্ষণ নয়। এর জন্য শরীরের ক্যান্সার কোষগুলো দায়ী। ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে এমন হতে পারে। অনেকেরই হাড় ও মাংসপেশিতে নানা সময়ে ব্যথা হয়। তবে তা সবসময় যে ক্লান্তি বা দুর্বলতার কারণে হয় তা নয়। ফুসফুসে ক্যান্সার হলে এই সমস্যা আরও বেড়ে যায়। কাজেই ক্যান্সারের হাত থেকে বাঁচতে আগেই সচেতন হোন। প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসকের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
×