ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে অফিস গুটিয়েছে বীমা কোম্পানি

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে অফিস গুটিয়েছে বীমা কোম্পানি

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও, ৩ ফেব্রুয়ারি ॥ ঠাকুরগাঁও এলাকার বিভিন্নজনের কাছ থেকে প্রায় ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে গা ঢাকা দিয়েছে বায়রা লাইফ ইন্সু্যুরেন্স কমিটি লিমিটেডের নামে একটি কোম্পানি। তারা ঠাকুরগাঁও শহর থেকে অফিস গুটিয়ে নিয়েছে। আর প্রায় ৩০০ গ্রাহক হন্যে হয়ে খুঁজছে কোম্পানির লোকজনকে। ২০০৩-০৪ সালে বায়রা লাইফ ইন্সু্যুরেন্স কমিটি লিমিটেড সদর উপজেলা কার্যালয়ের সামনে একটি অফিস খুলে তাদের জীবন বীমার ব্যবসা শুরু করে। এই কোম্পানির লোকজন নানা সুবিধার কথা বলে চার শতাধিক নারী-পুরুষের কাছে বীমা পলিসি বিক্রি করে। ইতোমধ্যে প্রায় ৩০০ জনের মেয়াদ পূর্তি হয়েছে এবং টাকা ছাড়ের জন্য নির্বাহী রশিদও গ্রাহকেরা পেয়েছেন। গ্রাহকেরা প্রয়োজনীয় তথ্যসহ এই রশিদ পূরণ করে সংশ্লিষ্ট দফতরে জমাও দিয়েছেন। কিন্তু ওই পর্যন্তই। ২/৩ বছর গত হলেও গ্রাহকেরা কোন চেক বা টাকা পাচ্ছেন না। বার বার তাগাদা দেয়ার পরও আজ দেব কাল দেব করে কোম্পানি কালক্ষেপণ করতে থাকে। কিছুদিন আগে গ্রাহকেরা গিয়ে দেখেন সেখানে কোম্পানির কোন অফিস নেই, অফিসের লোকজনও উধাও। এ বিষয়ে শহরের হাজীপাড়ার বাসিন্দা লুৎফা খাতুন জানান, ২০১৫ সালের ১৪ অক্টোবর তার পলিসির রশিদ তিনি পূরণ করে পাঠিয়েছেন। কিন্তু বার বার তাগাদা দেয়ার পরও তার পাওনা এক লাখ ৪৭ হাজার টাকা তিনি আজও পাননি। শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকার আসমা বেগম, মনোয়ারা বেওয়া, জগন্নাতপুরের মনমোহন দেব ও শফিকুল ইসলাম জানান, তারা নির্বাহী রশিদ পূরণ করে প্রায় দুই বছর আগে দাখিল করেছেন। কিন্তু টাকা পাচ্ছেন না। এদিকে কোম্পানির স্থানীয় অফিসের ১২/১৩ কর্মী গ্রাহকের হাত থেকে বাঁচতে কেউ গা ঢাকা দিয়েছেন, কেউ পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। আজাদ রহমান নামে এক কর্মকর্তা ঠাকুরগাঁও অফিসের দায়িত্বে ছিলেন। তার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, হেড অফিস টাকা দিচ্ছে না, আমরা কি করব। হেড অফিসের নির্দেশেই আমরা ঠাকুরগাঁওয়ের অফিস গুটিয়ে নিয়ে চলে এসেছি। তিনি জানান, ঠাকুরগাঁওয়ে প্রায় ৩০০ গ্রাহকের হিসাবের মেয়াদ পূর্তি হয়েছে। তাদের পাওনা আসল টাকার পরিমাণ ৩০ লাখ টাকার মতো হতে পারে। গ্রাহকের জমা দেয়া টাকা এখন কোথায় জানতে চাইলে তিনি জানান, হেড অফিস সব টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করেছে। সেই ফিক্সড ডিপোজিটের মেয়াদ পূর্ণ হতে আরও প্রায় ৪ বছর বাকি আছে। গ্রাহকের টাকা ফেরত না দিয়ে আরও নতুন নতুন গ্রাহক ধরে ব্যবসা বাড়াতে নাকি পরামর্শ দিয়েছে হেড অফিস। কয়েক গ্রাহক জানান, তারা ঢাকায় বায়রা লাইফ ইন্সু্যুরেন্স কমিটি লিমিটেডের হেড অফিসে যোগাযোগ করেছেন। কিন্তু তারা টালবাহানা করে কালক্ষেপণ করছে। এদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের দিনাজপুর সমন্বিত দফতরে যোগাযোগ করলে জানানো হয়, তারা ব্যাংকিং খাতের দুর্নীতি তদন্ত করেন, বীমা কোম্পানির দুর্নীতি দেখার দায়িত্ব তাদের নয়। এদিকে বীমা কোম্পানির কাজ তদারকির জন্য গঠিত বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (ইদরা) নাকি কোন কাজই করেন না। ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকজন গ্রাহক তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বায়রা লাইফ ইন্সুুরেন্স কমিটি লিমিটেডের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে তারা কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
×