ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

নিউইয়র্কে উদ্বিগ্ন প্রবাসীরা

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

নিউইয়র্কে উদ্বিগ্ন প্রবাসীরা

এনআরবি নিউজ, নিউইয়র্ক থেকে ॥ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাত মুসলিম দেশের নাগরিকের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করার পরিপ্রেক্ষিতে সৃষ্ট হ-য-ব-র-ল পরিস্থিতির মধ্যে নিউইয়র্কে প্রতিদিনই নানা গুজব ছড়াচ্ছে। জেএফকে এয়ারপোর্টে বাংলাদেশীদের গ্রেফতার করা হয়েছে, ডিটেনশন সেন্টারে নেয়া হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণকারীরাও হয়রানির শিকার হচ্ছেন, গ্রীনকার্ডধারী একটি পরিবারকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে, দুবাই এয়ারপোর্টে স্ক্রিনিংয়ের সময়ে কয়েক ডজন বাংলাদেশীকে ঢাকায় ফেরত পাঠানো হয়েছে- এ রকম নানা গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। সর্বশেষ বুধবার গুজব রটানো হয়, জেএফকে এয়ারপোর্টে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভের সময় এক বাংলাদেশীকে আটক করা হয়েছে। এ ধরনের রটনার পরিপ্রেক্ষিতে জেএফকে এয়ারপোর্টে গত শুক্রবার অপরাহ্ণ থেকে স্বেচ্ছায় কর্মরত ‘নিউইয়র্ক ইমিগ্রেশন কোয়ালিশন’র পরিচালক হ্যালাম টাকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ওই নির্বাহী আদেশ জারির পর সৃষ্ট উদ্ভূত পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গে আমরা জেএফকে এয়ারপোর্টে অবস্থান নিয়েছি। দিনরাত ২৪ ঘণ্টায় বিভিন্ন শিফটে ৫০০ ভলান্টিয়ার কাজ করছি। এর মধ্যে প্রতিশিফটে তিনজন করে এ্যাটর্নি থাকেন। হ্যালাম টাক উল্লেখ করেন, এ যাবত ২৩৬ জনকে আমরা আইনগত সহায়তা দিয়েছি। এর মধ্যে ৭১ জনকে হেনস্থার প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হয়েছিল। কয়েকজনকে ডিটেনশন সেন্টারে নেয়া হয়েছিল। এই ৭১ জনের মধ্যে একজনও বাংলাদেশী ছিলেন না। যাদের ডিটেনশন সেন্টারে নেয়া হয়েছিল, তার মধ্যেও বাংলাদেশী ছিলেন না। নিউইয়র্ক ইমিগ্রেশন কোয়ালিশনের এই কর্মসূচীর নাম দেয়া হয়েছে, ‘নো ব্যান জেএফকে’। এ প্রসঙ্গে নিউইয়র্ক ইমিগ্রেশন কোয়ালিশনের লিগ্যাল ইনিশিয়েটিভ পরিচালক ক্যামিলি ম্যাকলার বলেন, ট্রাম্পের এই নিষেধাজ্ঞার ভিকটিম শুধুই সাত দেশের নাগরিকেরা হচ্ছেন না। এ পর্যন্ত ২০ দেশের নাগরিক ভিকটিম হয়েছেন। এর মধ্যে বাংলাদেশ নেই। ভিকটিম হওয়া দেশগুলো হচ্ছে ইরান, ইরাক, সিরিয়া, সুদান, তুরস্ক, লিবিয়া, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, ফ্রান্স, আলজিরিয়া, জর্দান, চীন, মালয়েশিয়া, কাতার, সেনেগাল, সুইজারল্যান্ড, মিসর, গিনি। অর্থাৎ মুসলিম রাষ্ট্রের বাইরের লোকজনও ভিকটিম হচ্ছেন। দক্ষিণ-এশিয়ান আমেরিকানদের অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে কর্মরত নিউইয়র্কভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘দেশীজ রাইজিং আপ এ্যান্ড মুভিং’ (ড্রাম) এর সংগঠক কাজী ফৌজিয়া ট্রাম্প প্রশাসনের ওই নির্বাহী আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশীদের মধ্যেও গভীর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বুধবার রাতে এ সংবাদদাতাকে বলেন, ‘কান ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে। আজো জেএফকে এয়ারপোর্টে বিক্ষোভকালে এক বাংলাদেশীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে বলে আমাদের জানানো হয়েছে। অথচ আজ জেএফকে এয়ারপোর্টে কোন বিক্ষোভ/মানববন্ধন হয়নি। এভাবেই গুজব ছড়ানো হচ্ছে।’ এরই মধ্যে তারিক হাসান নামে এক বাংলাদেশী ছাত্র এফ-১ ভিসায় জেএফকে এয়ারপোর্টে অবতরণের পরই নাকি তাকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদের নামে হয়রানি-অপদস্ত করার পর নিউজার্সি ও এলিজাবেথ ইমিগ্রেশন বিভাগের ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হয়েছে। এক্ষেত্রে নিউইয়র্ক ইন্টারফেইথ গ্রুপের এ্যাটর্নি ইমান বোকাডমকে উদ্ধৃত করে তারিক হাসানের অবর্ণনীয় দুর্দশায় নিপতিত হবার সংবাদ জেনে কাজী ফৌজিয়া বিভিন্ন স্থানে দৌড়ঝাঁপ করেন। কিন্তু তিনিও নিশ্চিত হতে পারেননি যে, চট্টগ্রামের সন্তান তারিক হাসান কবে এ ধরনের পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন। বুধবার রাত ১১টায় এ্যাটর্নি ইমান ইমেইলে এ সংবাদদাতাকে জানান, সে ১৯ ডিসেম্বর গ্রেফতার হয়েছে। অর্থাৎ ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের সঙ্গে এর কোনই সম্পর্ক নেই। প্রবাসীদের মধ্যে আরও গুঞ্জন উঠেছে যে, দু’একদিনের মধ্যেই পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তানের নাম যুক্ত হবে ওই সাত দেশের তালিকায়। এসব কারণে নিউইয়র্ক অঞ্চলের প্রবাসীরা গভীর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন। ইউএস সুপ্রীমকোর্টের এ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী, ম্যানহাটানের প্রখ্যাত একটি ল’ ফার্মের বাংলাদেশী আইনজীবী মোহাম্মদ এন মজুমদার এবং এ্যাটর্নি অশোক কে কর্মকার বলেন, অভিবাসনের মর্যাদা রয়েছে অর্থাৎ যারা গ্রীনকার্ড পেয়েছেন অথবা সিটিজেনশিপ গ্রহণ করেছেন তাদের বিচলিত হবার কোনও কারণ নেই। গ্রীনকার্ডধারীরা যেন আপাতত যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে না যান এবং যারা বাইরে রয়েছেন, তারা যেন দ্রুত প্রত্যাবর্তন করেন। আর যাদের অভিবাসনের আইনগত অধিকার এখনও প্রতিষ্ঠিত হয়নি, তারা যেন স্ব স্ব এ্যাটর্নির পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করেন। নিউইয়র্ক ইমিগ্রেশন কোয়ালিশনের পরিচালক হ্যালাম বলেছেন, ‘ট্রাম্পের ঐ নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে একাধিক আদালতের নিষেধাজ্ঞা জারির পর বর্ডার এ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট এজেন্টদের তৎপরতা হ্রাস পেয়েছে।
×