ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারী নির্দেশ অগ্রাহ্য, কাঁচা চামড়া নেয়া হচ্ছে হাজারীবাগে

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

সরকারী নির্দেশ অগ্রাহ্য, কাঁচা চামড়া নেয়া হচ্ছে হাজারীবাগে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সরকারী নির্দেশ উপেক্ষা করে হাজারীবাগে কাঁচা চামড়া নেয়া হচ্ছে। ট্যানারি সরানোর প্রস্তুতি নেয়ার বদলে অনেক কারখানায় উৎ?পাদন কার্যক্রম চলতেও দেখা গেছে। বেশিরভাগ ট্যানারি এখনও হাজারীবাগ ছাড়তে পারেনি। সর্বশেষ হিসাবে মাত্র ৪৩ ট্যানারি সাভারে তাদের চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের প্রথম অংশ ওয়েট ব্লুর কাজ শুরু করতে পেরেছে। অথচ হাজারীবাগের ১৫৪ ট্যানারি সাভারে জমি পেয়েছে। জানা গেছে, হাজারীবাগে চামড়া প্রবেশ ঠেকাতে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে হাজারীবাগ থানা কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে একটি চিঠি প্রেরণ করেছে। চিঠি পাওয়ার পর পুলিশের পক্ষ থেকে নজরদারি বাড়ানো হলেও বিভিন্ন কায়দা-কৌশলে হাজারীবাগে কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন এ শিল্পের উদ্যোক্তারা। প্রসঙ্গত, শিল্প সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া গত ১ জানুয়ারি ট্যানারি মালিকদের দুটি সমিতির সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কারখানার ওয়েট ব্লু অংশ সাভারে নেয়ার জন্য ৩১ জানুয়ারি সময় বেঁধে দেন। আর পুরো ট্যানারি সরানোর জন্য মার্চ পর্যন্ত সময় দেন তিনি। এদিকে, মঙ্গলবার ছিল ওয়েট ব্লু অংশ সরানোর শেষ সময়। কিন্তু শিল্প মন্ত্রণালয়ের এ নির্দেশনা আমলে নিচ্ছে না হাজারীবাগের ব্যবসায়ীরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যবসায়ী বলেন, এ ধরনের নোটিস ও নির্দেশ বহু দেয়া হয়েছে। তারপরও কাজ চালিয়ে যাওয়া হয়েছে। এবারও সরকারকে আরও সময় দিতে হবে। এটা মাথায় করে সরিয়ে নেয়ার বিষয় নয় যে চাইলেই হাজারীবাগ থেকে সাভারে নিয়ে গেলাম। এর সঙ্গে অনেক কিছু জড়িত। এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারকে নমনীয় হতে হবে। অন্যথায় এ শিল্প আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ করা হোক। জানা গেছে, পরিবেশ দূষণের কারণে হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি সাভারে নিতে ২০০৩ সালে চামড়া শিল্পনগর প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার। এ শিল্পনগরে কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার (সিইটিপি) নির্মাণ করে দিয়েছে সরকার। সাভারে এখন পর্যন্ত মাত্র ৩৪ ট্যানারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান পুরো উৎপাদন শুরু করতে পেরেছে। বাকি ১২০টির মধ্যে কিছু ট্যানারি কারখানার ভবনের কাজ বেশ এগিয়ে নিয়েছে। প্রকল্পের সরকারী অংশের কাজ শেষ করে আনা হলেও উদ্যোক্তারা নানা অজুহাতে কারখানা সরাতে কালক্ষেপণ করছেন। বহু দফা সময় বেঁধে দিয়ে ট্যানারি সাভারে নেয়া যায়নি। সর্বশেষ ৩১ জানুয়ারি সময়সীমা বেঁধে দিয়ে শিল্প সচিব বলেছিলেন, আগেও সময় দেয়া হয়েছিল। তবে এরপর আর সময় দেয়া হবে না। এই সময়ের মধ্যে হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি না সরালে গ্যাস ও বিদ্যুতের লাইন কেটে দেয়া হবে। এটাই চূড়ান্ত। ট্যানারিগুলো হাজারীবাগ ছাড়তে না পারলেও মালিকদের দুই সমিতি জানিয়েছে, হাজারীবাগে আর কোন ক৭াচা চামড়া ঢুকবে না। এটি তারা তাদের সদস্যদের চিঠি দিয়ে জানিয়েছে। অন্যদিকে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে একটি চিঠি পুলিশকে দেয়া হয়। বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস এ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএল-এলএফইএ) চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, সরকারের সিদ্ধান্তকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে আমরা সদস্যদের জানিয়ে দিয়েছি, হাজারীবাগে আর কাঁচা চামড়া প্রবেশ করতে পারবে না। বাংলাদেশ ট্যানার্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদও বলেন, হাজারীবাগে আর ওয়েট ব্লু করা যাবে না। অনেক হয়েছে। এখন এই ব্যবসা করতে হলে সাভারে যেতে হবে। এর আগে ট্যানারি সরিয়ে নিতে ব্যর্থ মালিকদের কাছ থেকে দৈনিক ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা আদায়ের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। এই আদেশ যথাযথভাবে পালন না করায় আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি শিল্প সচিবকে তলব করেছে হাইকোর্ট। পরিবেশবাদীরা বলছেন, কোর্টের নির্দেশ অমান্য করায় চামড়া শিল্প উদ্যোক্তাদের দ্রুত শাস্তির আওতায় আনা উচিত। দেশে বাজে নজির তৈরি হচ্ছে।
×