ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

যৌথ সভায় সিদ্ধান্ত

পাঁচজনের নাম বাছাই করে সার্চ কমিটিকে দেবে আওয়ামী লীগ

প্রকাশিত: ০৮:৫৩, ৩১ জানুয়ারি ২০১৭

পাঁচজনের নাম বাছাই করে সার্চ কমিটিকে দেবে আওয়ামী লীগ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে রাষ্ট্রপতির গঠিত সার্চ কমিটিতে নামের প্রস্তাব পাঠাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সোমবার রাতে গণভবনে দলের কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের যৌথ সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠক সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী নতুন নির্বাচন কমিশনের নাম আহ্বান করলে নেতারা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভার প্রধানমন্ত্রীর হাতে ন্যস্ত করেন। প্রধানমন্ত্রী এসময় গোপন ব্যালটে কেন্দ্রীয় নেতা এবং উপদেষ্টাদের পাঁচজনের নাম প্রস্তাব করে ওই বাক্সে ফেলার আহ্বান জানান। এসময় নেতারা নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী নাম লিখে গোপন বাক্সে ফেলেন। আজ সকালে এখান থেকে পাঁচ জনের নাম বাছাই করে সার্চ কমিটির কাছে জমা দেবে আওয়ামী লীগ। গতকাল রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এই যৌথ সভা শুরু হয়। সভার সূচনা বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করা তার সরকারের মূল লক্ষ্য। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের উদাহরণ হিসেবে তিনি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের কথা উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বিশ্বাস করি গণতন্ত্রে, জনগণের ক্ষমতায়নে। আমরা চাই জনগণ ভোট দিয়ে নিজেদের জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করবে। ভোট নিয়ে আর কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে দেশের মানুষের উন্নয়ন হয়, মানুষ ভাল থাকে। আর বিএনপি ক্ষমতায় আসলে দেশ পিছিয়ে যায়, উল্টোপথে চলে। আমরা উন্নয়ন করে যাচ্ছি। দেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নেবে তারা উন্নয়ন চায় না ওই অশান্তি বেগমের অশান্তি চায়। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ক্ষমতাসীন হওয়ার পার রাজনৈতিক নিপীড়নের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামাত যখন ক্ষমতায় এসেছে, তখনই মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে। বিএনপি-জামায়াত জোট এবং আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শাসনামলের তুলনা করার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, জনগণ বিবেচনা করবে, বিএনপি-জামাত জোট ক্ষমতায় থাকার সময় কেমন ছিল। আর, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর কেমন আছে। তিনি বলেন, জনগণের কল্যাণ কতটুকু করতে পারলাম; জনগণ তা বিবেচনা করবে। গত শনিবার সকালে অনুষ্ঠিত সার্চ কমিটির প্রথম বৈঠকে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে যোগ্য ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে অংশ নেয়া রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঁচটি করে নাম চাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আজ ৩১ জানুয়ারি বিকেল ৩টার মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব বরাবর প্রস্তাবিত নামগুলো জমা দিতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি সার্চ কমিটির পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়। বৈঠক সূত্র জানায়, সোমবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর সূচনা বক্তব্যের পর সাংবাদিকরা বেরিয়ে গেলে দলীয় ফোরামে শেখ হাসিনা বলেন, আজকের মিটিংটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাষ্ট্রপতির গঠিত সার্চ কমিটি ইসি গঠনে নাম চেয়ে রাজনৈতিক দলগুলো চিঠি পাঠিয়েছে। আমরাও সে চিঠি পেয়েছি। এসময় দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, নেত্রী এই দায়িত্ব আপনাকে নিতে হবে। আপনিই নামগুলো চূড়ান্ত করবেন। তার এ বক্তব্য সমর্থন করে দলের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ ও আইন সম্পাদক আবদুল মতিন খসরু বলেন, নেত্রী প্রয়োজনে আপনি যে কারোর মতামত নিতে পারেন। এর জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা (দলীয় নেতা) সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এসময় দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ ও সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, নেত্রী আমরা কেন নাম দিব? নাম দিলে যদি বিতর্ক হয়? জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যেহেতু সার্চ কমিটি একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যাচ্ছে-তারা চিঠি দিয়ে নাম চেয়েছে। নাম দিলে কোন বিতর্ক হবে না। বরং সার্চ কমিটিকে সহায়তা করা হবে। এ সময় কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছ থেকে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে নাম সংগ্রহ করেন নেতারা। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা জানান, নামগুলোর মধ্যে থেকে যাচাই-বাছাই করে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত নেবেন। পরে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সই করা চিঠি পাঠানো হবে সার্চ কমিটির কাছে। সেই চিঠিতে এই নামগুলো প্রস্তাব করা হবে। আজ বিকেল তিনটার মধ্যেই আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত নামগুলো কমিটির কাছে পৌঁছে দেয়া হবে বলে জানায় সূত্র। বৈঠকে দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মহিউদ্দীন খান আলমগীর, কাজী আকরাম, এ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ, আইন সম্পাদক আবদুল মতিন খসরুসহ বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও কেন্দ্রীয় নেতা বক্তৃতা করেন।
×