ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আলো নেভানোর আগুন

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ৩০ জানুয়ারি ২০১৭

আলো নেভানোর আগুন

গাইবান্ধার দুর্গম চরাঞ্চলের একমাত্র মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি কতিপয় দুর্বৃত্ত কর্তৃক পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় হতবিহ্বল হয়ে পড়তে হয়। শিক্ষার আলো নেভানোর জন্য বিদ্যালয় যারা পোড়ায় তারা কি সভ্য মানুষ? লেখাপড়া শিখে মানুষ হওয়ার কথা বলেন প্রাজ্ঞজনরা। যারা লেখাপড়ার পীঠস্থান ধ্বংসের মতো অপকর্ম করে তারা তো মানুষও নয়! ব্রহ্মপুত্র তীরবর্তী চরাঞ্চল কুন্দেরপাড়ার গণউন্নয়ন একাডেমি স্কুলটিতে দুর্বৃত্তরা আগুন দেয় বৃহস্পতিবার গভীর রাতে। এতে বহু টাকার সম্পদ ভস্মীভূত হয়। তবে বড় ক্ষতি হলো অফিস কক্ষের আলমারীতে রাখা শিক্ষার্থীদের ১২ বছরের কয়েক হাজার স্কুল সার্টিফিকেট পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া। এসএসসি পরীক্ষার্থী ক’জনের প্রবেশপত্রও পুড়ে গেছে। স্কুলটি আশপাশের অন্তত সাতটি চরের ছেলেমেয়েদের শিক্ষাঅর্জনের ক্ষেত্রে প্রধান আলোকবর্তিকা হিসেবে ভূমিকা রেখে আসছিল। ছাই হয়ে যাওয়া স্কুলটির বর্তমান শিক্ষার্থী ছয় শ’র মতো। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে এই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মনের ভেতর কী প্রবল কষ্টের ঝড় বয়ে যাচ্ছে। এদের অনেকেই দগ্ধীভূত স্কুলের সামনে এসে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। অষ্টম শ্রেণীর এক ছাত্রী চোখ মুছতে মুছতে সাংবাদিকদের বলেছে, ‘স্কুলটি ছিল লেখাপড়া ছাড়াও আমাদের আনন্দ আর স্বপ্নের জায়গা। যারা মানুষের ক্ষতি করতে চায় তারাও তো মানুষ। তাদেরও তো ছেলেমেয়ে আছে। স্কুলে আগুন দিতে হবে কেন? আমরা এখন কোথায় পড়ব?’ ঘটনাটি এতটাই মর্মান্তিক ও সংবেদনশীল যে এলাকার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ছাত্রীদের কান্না দেখে নিজেও অশ্রু সংবরণ করতে পারেননি। দুর্বৃত্তদের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত না হওয়া গেলেও গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে সন্দেহভাজন মহল সম্বন্ধে যা জানা যায় তাতে শঙ্কিত না হয়ে পারা যায় না। কিছুদিন থেকে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশেই একটি চক্র মাদক, জুয়া ও যাত্রার নামে অশ্লীল নৃত্যের আসর বসায়। এর প্রতিবাদে স্কুল মাঠে সুধী সমাবেশও অনুষ্ঠিত হয়। এসব কারণে ওই চক্রটি ক্ষিপ্ত হয়ে স্কুল ভবনে আগুন লাগিয়ে দেয় বলে কারও কারও ধারণা। অসামাজিক কার্যকলাপ যারা করে বেড়ায় শিক্ষার দ্যুতিকে তারা কিভাবে সহ্য করবে? অপরদিকে আরেকটি চিত্রও উঠে এসেছে যা আরও মারাত্মক। স্থানীয় কিছু লোক সম্প্রতি স্কুলের কার্যক্রমে নানাভাবে বাধা দিয়ে আসছিল। তারা আরেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের পরিকল্পনা করছিল। কিন্তু এলাকার প্রভাবশালীরা তাতে বিশেষ আগ্রহ দেখায়নি। আক্রোশবশত মহলটি ওই ঘৃণ্য কাজে লিপ্ত হতে পারে। কথা হচ্ছে নিজেদের একটি স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য যারা এলাকার সুপ্রতিষ্ঠিত একটি স্কুলে আগুন দেয়ার মানসিকতা লালন করে তারা তো শিক্ষার বাহক বা লালনকারী হতে পারে না। তাদের হাতে শিক্ষার মশাল কিভাবে নিরাপদ থাকবে? দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য নতুন প্রবেশপত্রের ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক। তাকে ধন্যবাদ। স্কুলটি পুনর্গঠনের জন্য কর্তৃপক্ষের পাশে এসে দাঁড়াবে শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ ও স্থানীয় প্রশাসনÑ এটাই চাওয়া। আমরা আশা করব অচিরেই সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে স্কুল ধ্বংসের চক্রান্তের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের পরিচয় উদঘাটিত হবে। শিক্ষার আলো নেভানোর জন্য যারা বিদ্যাপীঠে আগুন লাগায় সেইসব কুলাঙ্গারকে অবশ্যই আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। দ্রুত বিচারের মাধ্যমে দুর্বৃত্তদের এমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে যাতে করে দেশের আর কোথাও এ ধরনের জঘন্য অপরাধকর্ম সংঘটিত না হতে পারে। নরম মনের শিক্ষার্থীদের হৃদয়ে যারা নির্মম আঘাত হানে তাদের কোন করুণা নয়।
×