ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

জামা থেকে জুয়েলারি গৃহস্থালি থেকে শখের পণ্য- সর্বত্র ছাড়

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ২৮ জানুয়ারি ২০১৭

জামা থেকে জুয়েলারি গৃহস্থালি থেকে শখের পণ্য- সর্বত্র ছাড়

ওয়াজেদ হীরা ॥ হালকা হিমেল হাওয়া সেই সঙ্গে আকাশে নেই একটু রোদেলা ঝিলিকও। দিনভর মনে হলো মেঘলা আকাশের মতোই। এমন আবহাওয়াতেও মানুষের আগ্রহের কমতি ছিল না ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায়। ছুটির দিন আর মেলার শেষ শুক্রবার হওয়ার কারণে সে আগ্রহ ছিল আরও বেশি। পূর্বের দিনগুলোতে যারা আসতে পারেনি মেলায় তারা আর ‘মিস’ করতে চাননি শেষ শুক্রবারের ছুটির দিনটি। প্রিয়জন বা বন্ধুদের সঙ্গে বিনোদন আর কেনাকাটা করতে এসেছেন বাণিজ্যমেলায়। আর মেলায় শেষ সময়ে বিক্রেতারা তাদের পণ্য বিক্রিতে দিচ্ছে নানা রকম ছাড়। জমজমাট বাণিজ্যমেলায় মানুষের ভিড়ে এ যেন এক ছাড়ের মহোৎসব। ক্রেতারা স্টলগুলোতে ভিড় করেছেন এসব ছাড়ের অফার লুফে নিতে। কি নেই সেই অফারে! গৃহস্থালি থেকে শখের পণ্য, জামা থেকে জুয়েলারি কিংবা বাহারি জুতা সবই চলছে নানা ছাড়ের অফার দিয়ে। মেলার শেষ সময় যত ঘনিয়ে আসছে বিক্রেতারা নানা ছাড়ের অফার দিয়ে তাদের পণ্য বিক্রি বাড়াচ্ছে। আর ক্রেতারা জানিয়েছেন মেলার শেষ সময়ের এই ছাড়ের অফারের সুযোগ অন্য সময় মেলে না। একটু কম মূল্যে ভাল জিনিস পাওয়ার জন্যই কিনছেন ক্রেতারা। বাণিজ্যমেলা ঘুরে দেখা গেল গোটা মেলাজুড়েই দেখা গেছে নানা অক্ষর সম্বলিত ছাড়ের কথাগুলো। সেই সঙ্গে বিক্রেতাদের হাক ডাকও ছিল প্রচুর। ছাড় দেয়া স্টলগুলোর প্রতি মানুষের আগ্রহও ছিল একটু বেশি। সকাল থেকে মানুষের ভিড় বাড়তে বাড়তে টিকেট কাটতেও থাকতে হয়েছে লাইনে দাঁড়িয়ে। প্রবেশেও ছিল ঠেলাঠেলির বিপত্তি। কষ্ট করে ভেতরে প্রবেশ করেও ‘ধাক্কাধাক্কির’ ভিড় থেকে মুক্তি মেলেনি। বেলা যত বেড়েছে মানুষের আগমন বেড়েছে কয়েকগুণ বেশি। সন্ধ্যায় তা এক জনসমুদ্রের মতো পরিণত হয়। কেউ দল বেঁধে মেলায় আসছে আবার কেউ দল বেঁধে মেলা থেকে বের হচ্ছে। তবে এই দলবদ্ধ মানুষগুলো কেউ কারও পরিচিত নন! শৃঙ্খলা রক্ষার জন্যই অনেকটা দলবদ্ধ হওয়া। কেন না, তা না হলে হট্টগোল আরৗ বেশি লেগে যায়। এদিকে, মেলার বিদায় ঘণ্টা যত ঘনিয়ে আসছে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিক্রি প্রতিযোগিতা। স্টলে কোন ক্রেতা আসলে যেন ছাড়তে নারাজ বিক্রেতারা। এদিন গৃহস্থালি স্টলে ছুটেছেন নারীরা। সংসারের প্রয়োজনীয় পণ্যগুলো ছাড়ের মাধ্যমে কেনার চেষ্টা করেছেন তারা। মেলা ঘুরে দেখা গেছে, গৃহস্থালি পণ্য, থ্রি-পিস, ইলেকট্রনিক্স, খাদ্য সামগ্রী, ফার্নিচার, সিরামিকসসহ সব ধরনের পণ্যেই রয়েছে নানা ছাড়। আখেরি অফার, ফাটাফাটি অফার, গোল্ডেন অফার কিংবা একটি কিনলে দশটি ফ্রিসহ নানা ধরনের অফার। কোন কোন পণ্যে কিনলে দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন উপহার। স্যামসাং প্যাবিলিয়নে দেখা গেল, যারা মোবাইল ফোন কিনছেন তাদের জন্য থাকছে একটি জ্যাকেট উপহার। একই সঙ্গে ওয়ালটন প্যাভিলিয়নেও দেখা গেল ক্রেতাদের জন্য রেখেছেন উপহার। তারা সেলফি স্টিক, ট্রি শার্ট, পাওয়ার ব্যাংক উপহার দিচ্ছেন। বিক্রয়কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, পণ্যেও আরৗ প্রচার আর ক্রেতার আকর্ষণ করতে এই উপহার দিচ্ছে বিক্রয় প্রতিষ্ঠান। তাহিনা সাইফ স্মার্ট ফোন কিনে উচ্ছ্বসিত। সেই সঙ্গে অনেক উপহার পেয়ে আরও বেশি খুশি। জনকণ্ঠের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, মেলার বাহিরেও এই মোবাইল একই দাম তবে উপহারটা দেয় না। তাই মেলা থেকে ফোন কিনলাম উপহারও পেলাম। এদিকে কসমেটিক্সের দোকানগুলোতেও তরুণীদের ভিড় দেখা গেল। জানা গেল বিভিন্ন কসমেটিক্সের স্টলে লিপিস্টিক বা লিপগ্লোজ কিনলে সঙ্গে আরও একটি ফ্রি দেয়া হচ্ছে। নেনপলিশ দুটির সঙ্গে একটি ফ্রি। তরুণীরাও হুমরি খেয়ে পড়েছেন। একটি নখে লাগাচ্ছে তো আবার মুছে ফেলে আরেক রংয়েরটি দিয়ে দেখছেন। ভাল লাগলে কিনে ছুটছেন অন্য স্টলে। মেলায় রয়েছে বিভিন্ন ব্লেজার স্টল। শেষ সময়ে বিশেষ ছাড় দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো। ১ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে ব্লেজার। এর মধ্যে কোন কোন ব্লেজার কত দামের মধ্যে তাও লিখে রাখা হয়েছে। একদাম লিখে রাখা হলেও দাম কষাকষি করেই কিনছেন ক্রেতারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের চার বন্ধু মেলা গুরতে এসে এক ডিজাইনের চারটি ব্লেজার কিনেছেন তারা। তাদেরই একজন মনিরুল ইসলাম জানালেন, ভাল লেগেছে আবার দামও সাশ্রয়ী তাই সবাই যুক্তি করেই কিনলাম। যদিও শীত নেই তবুও পছন্দের কারণে অফারের মাধ্যমে কেনা যোগ করেন তিনি। এদিকে, মেলায় ক্রেতাদের গৃহস্থালি পণ্যে বেশ আগ্রহ দেখা গেছে। স্টলগুলো ছাড়ের নামে লিখে রেখেছে ‘একটি কিনলে দশটি ফ্রি’। যে কারও চোখ কপালে উঠার কথা। আর সে আকর্ষণে স্টলে প্রবেশ করে ফ্রি দেয়া পণ্যগুলো বার বার দেখছেন। যার প্রয়োজন নেই সে অন্য পণ্যগুলো কিনতে দেখা গেছে। মেলার ভিআইপি গেট দিয়ে প্রবেশ করে হাতের বামে এসকল স্টল সবচেয়ে বেশি। একাধিক স্টলের বিক্রেতারা জানান, অফার দেখে ক্রেতা আসে যার প্রয়োজন কিনে নয়ত অন্য পণ্যগুলোও বিক্রি হয়। তবে এ সকল গৃহস্থালি পণ্যগুলো প্রতিটি সংসারে খুবই প্রয়োজনীয় বলে জানালেন তারা। আব্দুল ওয়াহাব রেজা দম্পত্তি অফারের পণ্য কিনেছেন। দাম পড়েছে ১৬ হাজার টাকা। তবুও খুশি তারা জানালেন, এই পণ্যগুলো বাহিরে কিনতে গেলে ২০ হাজারের ওপর দাম পড়ত। তবে পণ্য কেনার পর বহন করতেই একটু সমস্যা হচ্ছে তাও জানালেন এই দম্পত্তি। প্রেসার কুকার, জুস মেকার, জুস ব্লেন্ডার, ওভেন, রাইস কুকারসহ নানা ধরনের পণ্যে ছাড় দিয়ে বেচাকেনা করতে দেখা গেছে। বাণিজ্যমেলায় থ্রি-পিসের স্টলগুলোতে চলছে মূল্য ছাড় আর ফ্রি সম্বলিত নানা সুবিধা। একটির সঙ্গে দুটি থ্রি-পিস ফ্রি দেয়া হচ্ছে। আবার ৪৯৯ টাকায় তিনটি থ্রি-পিসও বিক্রি করছেন কেউ কেউ। আর এসকল থি পিসের স্টলগুলোতে তরুণীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। ক্রেতারা এসে থ্রি-পিসগুলো নেড়ে চেড়ে দেখছেন। ভাল লাগলে কিনে নিচ্ছেন। বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের ক্রয়ক্ষমতা মাথায় রেখে বাণিজ্যমেলায় দৃষ্টিনন্দন আসবাব এনেছে রিগ্যাল, নাদিয়া, হাতিল, আক্তার, পারটেক্স, নাভানাসহ সব ব্র্যান্ড। রয়েছে নগদ ছাড়ের পাশাপাশি বিভিন্ন উপহার। একাধিক প্যাভিলিয়নে দায়িত্বরতদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে নানা ছাড়ের কথা। মেলা উপলক্ষে হাতিল ফার্নিচারের ৫ থেকে ২০ শতাংশ মূল্য ছাড় রয়েছে। সঙ্গে থাকছে ফ্রি হোম ডেলিভারি সুবিধা। মেলায় ১০ শতাংশ বিশেষ ছাড় দিচ্ছে রিগ্যাল। একই সঙ্গে ফ্রি হোম ডেলিভারি সুবিধাও। পারটেক্স ফার্নিচার ক্রেতাদের ১৮ শতাংশ পর্যন্ত নগদ মূল্য ছাড় দিচ্ছে। বাণিজ্যমেলায় প্লাস্টিকের পণ্যেও ছাড় থাকছে। আরএফএল প্লাস্টিকসের বিশেষ বান্ডেল কিনলেই ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেয়া হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন পণ্যের ওপর থাকছে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত মূল্য ছাড়। এছাড়াও মেলায় অবস্থিত বিভিন্ন শুকনো খাবার জাতীয় পণ্যেও দেয়া হচ্ছে নানা ছাড় বা বান্ডেল অফার। যা বাহিরে একত্রে কিনলে দাম একটু বেশি অথচ মেলায় বান্ডেল অফার করে তা একটু কম দামে বিক্রি করতে দেখা গেছে ক্রেতাদের। উল্লেখ্য, ১ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এ মেলা চলবে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা রয়েছে। এবারের মেলায় প্রবেশমূল্য ধরা হয়েছে প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য জনপ্রতি ৩০ টাকা এবং অপ্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য জনপ্রতি ২০ টাকা।
×