ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

একুশে গ্রন্থমেলা মঞ্চেই প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন আন্তর্জাতিক এ সাহিত্য সম্মেলন

ঢাকায় বসছে ৭ দেশের কবি সাহিত্যিকদের মিলনমেলা

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২৭ জানুয়ারি ২০১৭

ঢাকায় বসছে ৭ দেশের কবি সাহিত্যিকদের মিলনমেলা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আর মাত্র চারদিন পর শুরু হচ্ছে বাঙালীর মননের আলোকিত আয়োজন অমর একুশে বইমেলা। পয়লা ফেব্রুয়ারি একুশে বইমেলার সঙ্গে শুরু হবে তিন দিনের আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন। ‘সম্প্রীতির জন্য সাহিত্য’ প্রতিপাদ্যে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে অস্ট্রিয়া, জার্মানি, পুয়ের্তোরিকো, মালয়েশিয়া, রাশিয়া, চীন ও ভারতের কবি-সাহিত্যিকরা অংশ নেবেন। এছাড়াও দেশের প্রখ্যাত সাহিত্যিকরা সম্মেলনে অংশ নেবেন। সম্মেলনে সামগ্রিক সাহিত্যকর্মের জন্য ছয় গুণীজনকে দেয়া হবে ‘আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন লেখক সম্মাননা’। বইমেলার উদ্বোধনী মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন। ২ থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ সম্মেলন চলবে। এ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান এবং আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন উদ্যাপন পর্ষদের পক্ষে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, কবি আসাদ চৌধুরী, কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, অধ্যাপক ফকরুল আলম, কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী, কবি মুহম্মদ সামাদ, কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক ও কবি ফরিদ কবির। শামসুজ্জামান খান বলেন, ১৯৭৪ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে বাংলা একাডেমি প্রথমবারের মতো বৃহৎ পরিসরে সাহিত্য সম্মেলনের আয়োজন করে। এর পর বিভিন্ন সময় একাডেমি আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সাহিত্য ও ফোকলোর সম্মেলনের আয়োজন করলেও এবারের আয়োজন নানাদিক থেকেই তাৎপর্যপূর্ণ। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এ সম্মেলনে দেশের ছয় বিশিষ্ট লেখক-বুদ্ধিজীবীকে ‘আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন লেখক সম্মাননা ২০১৭’ প্রদান করা হবে। তারা হলেন জাতীয় অধ্যাপক মুস্তাফা নূরউল ইসলাম, রবীন্দ্র গবেষক আহমদ রফিক, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এবং ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। সম্মেলনে জার্মানি, অস্ট্রিয়া, চীন, রাশিয়া, পুয়ের্তোরিকো, থাইল্যান্ড, ভারত প্রভৃতি দেশের বিশিষ্ট- কবি-কথাসাহিত্যিক-প্রাবন্ধিক-বুদ্ধিজীবীরা অধিবেশনে বিভিন্ন পর্যায়ে অংশগ্রহণ করবেন। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও অসম ও ত্রিপুরা থেকেও কবি- লেখকরা সম্মেলনে অংশ নেবেন। সম্মেলনে অস্ট্রিয়া থেকে মেনফ্রেড কোবো, জার্মানি থেকে ইওনা বুরঘার্ট, টোবিয়াস বুরঘার্ট, পুয়ের্তোরিকোর লুস মারিয়া লোপেজ ও মারিয়া ডি লোস এ্যানজেলেস পোগাদাইভ, চীনের অধ্যাপক ডং ইউ চেন, রাশিয়ার ড. ভিক্টর আলেক্সান্দ্রোভিচ পোগাদাইভ এবং ভারতের পবিত্র সরকার, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, নবনীতা দেবসেন, চিন্ময় গুহ, শ্যামলকান্তি দাশ, সুবোধ সরকার, স্বপ্নময় চক্রবর্তী, সাধন চট্টোপাধ্যায়, সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়, সুনন্দা সিকদার ও ইমানুল হক অংশগ্রহণ করবেন। মূলত সম্মেলন উদ্বোধনের পরদিন ২ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হবে তিন দিনের বিভিন্ন অধিবেশন। এসব অধিবেশনের বিষয়বস্তুর মধ্যে থাকবে কবিতা, কথাসাহিত্য, প্রবন্ধ-সাহিত্য, মুক্তিযুদ্ধের সাহিত্য, অনুবাদসাহিত্য, নাট্যসাহিত্য, শিশু-কিশোর সাহিত্য ও ফোকলোর। সম্মেলনে বাংলাদেশ ও ভারতের লেখকদের উপস্থাপিত প্রবন্ধসমূহের সংকলন যুগপৎ ঢাকা ও কলকাতা থেকে প্রকাশিত হবে। সম্মেলনের একটি বিশেষ অংশে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কবিদের কবিতা পাঠ হবে। এদিকে একুশে বইমেলার লটারী অনুযায়ী ইতোমধ্যে প্রকাশকদের স্টল বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। শুধু তাই নয় ইতোমধ্যে প্রকাশকরা তাদের স্টল সজ্জার কাজ শুরু করেছেন। মেলার প্রস্তুতির এই পর্যায়ে বৃহস্পতিবার মেলা পরিদর্শনে আসেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ও সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিকেলে মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অংশে এসে সার্বিক কাজ কেমন চলছে তা দেখেন দুই মন্ত্রী। মেলার পুরো মাঠ পরিদর্শন করেন তারা। স্টল নির্মাণ ও অন্যান্য কাজের খবরাখবর নেন। এই সময় তাদের সঙ্গে ছিলেন মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ, জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশনীর সভাপতি মাজহারুল ইসলাম ও প্রাক্তন সভাপতি আগামী প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ওসমান গণি। এদিকে এবারের মেলায় আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনের সংবাদ সম্মেলন হয়েছে। জানানো হয় এবারের সাহিত্য সম্মেলনে ছয় দেশের কবি-সাহিত্যিকদের মিলনমেলা বসবে। মেলামাঠ পরিদর্শন শেষে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, মেলার সার্বিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে এখন পর্যন্ত আমরা খুশি। সামনে যে কোন রকমের প্রয়োজনে তাৎক্ষণিক সহযোগিতা প্রদানের জন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি। সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, মেলার মাঠ ঘুরে আমি এটুকু বলতে পারি, এবার মেলা বেশ গোছানো হবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অংশেও খাবার দোকানের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। পাশাপাশি নান্দনিক দিক থেকেও এবারের মেলাটি ভিন্ন রকম হবে। এই সময়জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশকদের পক্ষ থেকে মেলায় প্রবেশের জন্য যেন ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের দিকের অংশেও যেন প্রবেশদ্বার থাকে এবং পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয় সে বিষয়টি উত্থাপন করা হয়। এ বিষয়ে সংস্কতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর তাৎক্ষণিকভাবে বলেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আলাপ করেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। মেলার সময় বাড়ানোর দাবি উত্থাপন করা হলে তিনি সাংবাদিকদের জানান, এখন পর্যন্ত আগের সিদ্ধান্তেই মেলা চলবে। বেলা তিনটা থেকে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত খোলা থাকবে। নতুন করে সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ এবার নেই।
×