ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বাল্যবিয়ে রোধে

প্রকাশিত: ০৫:১২, ২৬ জানুয়ারি ২০১৭

বাল্যবিয়ে রোধে

বাল্যবিয়েকে অভিশাপ হিসেবেই মূল্যায়ন করা হয়। এমনিতেই এই বিয়ে একটি উদ্বেগজনক সামাজিক সমস্যা। আর বাল্যবিয়ের দিক থেকে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। সরকারী হিসাব মতে, দেশের চৌষট্রি শতাংশ শিশুর বিয়ে হচ্ছে বয়স আঠারো হবার আগেই। জনপ্রতিনিধিদের দেয়া জন্মসনদের ভিত্তিতে বিয়ে হচ্ছে। কখনও নাম একটু-আধটু পরিবর্তন করেই ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা থেকে একই মেয়ের একাধিক জন্মনিবন্ধন কার্ড তৈরির ঘটনাও ঘটেছে। এছাড়া প্রতিটি ইউনিয়নে নারী-শিশুদের সুরক্ষায় যে স্থায়ী কমিটিগুলো আছে, সেগুলোও নিয়মিত আলোচনায় বসে না। বাল্যবিয়ে রোধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেও তেমন সুফল মিলছে বলা যায় না। এর মূল কারণ হচ্ছে, যাদের দিয়ে ঠেকানোর দায়িত্ব, অনেক ক্ষেত্রে তারাই এর মদদদাতা হিসাবে কাজ করছেন। এটা তো বাস্তবিক যে, একুশ শতকে এসে যেখানে বাল্যবিয়ে শূন্যের কোঠায় নেমে আসা ছিল স্বাভাবিক, সেখানে এর বিপরীতটা ঘটছে। বাল্যবিয়ের হার শূন্য শতাংশে নামিয়ে আনা যে সহজ নয়, তা সামাজিক বাস্তবতাই বলে দেয়। সরকারী হিসাবের বাইরে আরও শিশুর বিয়ে হলেও তা রোধ করা যাচ্ছে না। বাল্যবিয়ে সম্পর্কে সরকারী হিসাব উদ্বেগ বাড়ায় বৈকি। পশ্চাৎপদ সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে বাল্যবিয়ের হার কমার পরিবর্তে বাড়ছে। বাল্যবিয়ে অতি প্রাচীন একটি রোগ। শিক্ষা ও সভ্যতার আলো বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে এই রোগ থেকে সমাজ ক্রমশ মুক্তি লাভ এখনও এমন মানুষের সংখ্যা অনেক যারা এই রোগ থেকে মুক্ত নয়। আইন করে বিয়ের বয়স নির্দিষ্ট করে দেয়া সত্ত্বেও সারাদেশেই এখনও ব্যাপক হারে চলছে বাল্যবিয়ে। সরকার ২০২১ সালের মধ্যে ১৬ বছরের নিচে বাল্যবিয়ের হার শূন্য করার লক্ষ্য নিয়েছে। অল্প বয়সে বিয়ের কারণে স্কুল থেকে শিক্ষার্থীদের ঝরেপড়া বাড়ছে। অকালে মা হতে গিয়ে মারা যাচ্ছে। বাল্যবিয়ে নিরোধ আইনের খসড়ায় বিয়ের বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর রাখা হলেও বিশেষ অবস্থার কারণে বাবা-মা এবং আদালতের অনুমোদন সাপেক্ষে ১৮ বছর থেকে কম বয়সী মেয়েদের বিয়ে দেয়া যাবে। এই শেষোক্তটিই আপত্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আইনে এই নতুন সুযোগ সৃষ্টি হওয়ার ফলে অল্প বয়সে বিয়ে প্রদানের প্রবণতা ব্যাপকভাবে বাড়তে পারে। মূলত বাল্যবিয়ে বন্ধ করার জন্য অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরি করা জরুরী। সেই সঙ্গে বদলাতে হবে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি। বাল্যবিয়ের অভিশাপমুক্ত হতে হলে এর কুফলগুলো জনগণকে জানানো সঙ্গত। সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে সর্বস্তরে সচেতনতা বাড়ানো দরকার। এ ক্ষেত্রে অবশ্য থেমে নেই দেশবাসী। সুনামগঞ্জ জেলাকে বাল্যবিয়ে মুক্ত ঘোষণা এবং বাল্যবিয়েকে ‘না’ বলার যে ব্যতিক্রমী আয়োজন করা হয়েছিল, তা সারাদেশেই ছড়িয়ে দেয়া দরকার। জেলার ২৯৯টি স্থানে লাখো শিক্ষার্থীসহ জনগণ বাল্যবিয়েকে ‘লালকার্ড’ দেখিয়েছেন। এভাবে ক্রমান্বয়ে দেশের প্রতিটি উপজেলা, জেলাকে বাল্যবিয়ে মুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া জরুরী। সুনামগঞ্জবাসী সারাদেশের মানুষকে সেই আহ্বানই জানাল, যা সমাজকে অভিশাপমুক্ত করে মেয়ে শিশুদের সুন্দর ভবিষ্যত গড়ার ক্ষেত্রটি সম্প্রসারিত করতে পারে। সুনামগঞ্জবাসীর এই তৎপরতা অবশ্যই অভিনন্দনযোগ্য। সবার মধ্যে তা ছড়িয়ে পড়ুক, এই প্রত্যাশা।
×