ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট

প্রকাশিত: ০৪:১০, ২৩ জানুয়ারি ২০১৭

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট

বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন ডোনাল্ড জে ট্রাম্প। বলা চলে ট্রাম্প যুগে প্রবেশ করল যুক্তরাষ্ট্র। ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে দায়িত্বভার নিয়েছেন তিনি। ট্রাম্পের অব্যবহিত আগের যুগ ছিল ওবামার। বারাক ওবামা ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৪তম প্রেসিডেন্ট, যিনি দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেন। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে সে দেশে কোন ব্যক্তি দুই মেয়াদের বেশি প্রেসিডেন্ট হতে পারেন না। এবারের নির্বাচনে ট্রাম্পের বিজয়ী হয়ে আসাটা খুব সহজসাধ্য ছিল না। কেননা, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তার প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন হিলারি ক্লিনটন। যিনি ইতিপূর্বে ওবামা প্রশাসনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং তারও আগে প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের যুগে দুই মেয়াদে হোয়াইট হাউসের অন্দরমহল আলোকিত করেছেন ফার্স্টলেডি হিসেবে। রাজনীতিতে ট্রাম্প ছিলেন প্রায় নবাগত। এর আগে তিনি কিছুদিন ডেমোক্র্যাটিক পার্টি করলেও পরে রাজনীতি ছেড়ে ব্যবসায় আত্মনিয়োগ করেন এবং সফল হন। মার্কিনীরাসহ বিশ্ববাসী তাকে একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবেই জানেন। তাই ট্রাম্পের বিপরীতে হিলারি ছিলেন প্রায় অবিসংবাদিত অপ্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী। তদুপরি মার্কিন মিডিয়াসহ নাগরিক সমাজ এমনকি বিশ্বের অধিকাংশের কাছে হিলারি ছিলেন সবিশেষ পছন্দের প্রার্থী। তদুপরি প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে শুরু থেকেই ডোনাল্ড ট্রাম্প গণমাধ্যম এমনকি অধিকাংশ মানুষের কাছে ছিলেন অজনপ্রিয় ব্যক্তি। এর অবশ্য প্রত্যক্ষ প্রমাণও পদে পদে রেখেছেন তিনি। এক কথায় ট্রাম্প প্রতিভাত হয়েছেন বর্ণবিদ্বেষী, নারীবিদ্বেষীরূপে, নারী নির্যাতনকারী, অভিবাসনবিরোধী সর্বোপরি ইসলামবিদ্বেষী। মুসলিমসহ সব বহিরাগতকে তিনি সে দেশ থেকে বলপূর্বক বের করে দেয়ার পক্ষে জোরালো বক্তব্য রেখেছেন। তার অতীত কার্যকলাপও ছিল নানা বিতর্কে ভরপুর। মূলত এসব কারণেই ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে নির্বাচনের আগে এত বিতর্ক, আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয় এবং পাল্লা ভারি হতে থাকে হিলারির পক্ষে। তবু ৮ নবেম্বরের নির্বাচনে ইলেক্টোরাল ভোটে তাকে হারিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ডোনাল্ড ট্রাম্প। মূলত শ্বেতাঙ্গদের আধিপত্য তৈরির জয়গান গেয়ে নির্বাচনে নজর কাড়েন তিনি। ৮৩ বছর পর এই প্রথম রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ব্যতিরেকে একজন প্রেসিডেন্ট পেল যুক্তরাষ্ট্র। শপথ গ্রহণের পরপরই এক সংক্ষিপ্ত ভাষণে ট্রাম্প বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে আরও শক্তিশালী ও নিরাপদ করব। আবারও মহান করব আমেরিকাকে। আগামীতে একসঙ্গে মিলে যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বের কর্মকা- ও গতিপথ নির্ধারণ করব। একই সঙ্গে ওয়াশিংটন ডিসি থেকে ক্ষমতা প্রত্যর্পণ করব জনগণের কাছে। সর্বোপরি কট্টর মুসলিম সন্ত্রাসীদের নির্মূল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন স্বদেশ ও বিশ্ব থেকে। যুক্তরাষ্ট্রে দাসপ্রথা বিলুপ্তির ১৪৩ বছর পর বারাক ওবামা হয়েছিলেন প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট, জন্মসূত্রে যিনি আফ্রিকান-আমেরিকান। মধ্যপ্রাচ্য-আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহারসহ যুদ্ধ বন্ধেও ইতিবাচক অবদান রেখেছেন তিনি। সুদীর্ঘকাল বিরতির পর কিউবার সঙ্গে কূটনৈতিক ও বাণিজ্য সম্পর্ক স্থাপন এবং অর্থনৈতিক অবরোধ প্রত্যাহারসহ ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক শান্তিচুক্তিও মাইলফলক অগ্রগতি নিঃসন্দেহে। বিশ্ব বিদায়ের প্রাক্কালে তিনি স্বীকার করেছেন, বিভাজনমুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়নি। ধনী-গরিবের ব্যবধান প্রকট হয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প এসব সমস্যা মোকাবেলায় কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন সেটাই এখন দেখার বিষয়। বিপুল বিত্ত-বৈভবের অধিকারী একজন ধনকুবের ও সফল ব্যবসায়ী হিসেবে তিনি কি তাদের স্বার্থ রক্ষা করবেন নাকি বঞ্চিত মার্কিনীদের ভাগ্যোন্নয়নে ব্রতী হবেন? তবে ইতোমধ্যেই দরিদ্রদের জন্য স্বাস্থ্যবীমা কর্মসূচী ওবামাকেয়ার বাতিলের খাতায়। যুদ্ধ বন্ধসহ বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় তিনি কী পদক্ষেপ নেন সেটিও দেখার বিষয়। সে দেশে বিপুলসংখ্যক অভিবাসীর আতঙ্ক দূরীকরণে তিনি কী করেন সেটাও দেখার অপেক্ষায় বিশ্ববাসী। সর্বোপরি কট্টর জঙ্গী সন্ত্রাসীদের সঙ্গে ধর্মকে মিলিয়ে ফেলেন কিনা সেটিও দেখতে হবে বৈকি!
×