ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সার্ক গতিশীল হোক

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২১ জানুয়ারি ২০১৭

সার্ক গতিশীল হোক

বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘সার্ক’ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করেছেন। তিনি বলেন, ‘সার্কের কার্যকারিতা শেষ হয়ে যায়নি। আট জাতির এই আঞ্চলিক সংস্থাটি খুব ভালভাবে সক্রিয় আছে এবং আমি মনে করি দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য এর মাধ্যমে আরও অনেক কাজ করার সুযোগ রয়েছে। এই অঞ্চলের জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে।’ প্রধানমন্ত্রী সার্ক অঞ্চলের প্রধান শত্রু হিসেবে দারিদ্র্যকে চিহ্নিত করে দারিদ্র্য নির্মূলের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়ার কথা বলেছেন। দারিদ্র্য বিমোচনে সার্কভুক্ত দেশগুলোকে ব্যবসা-বাণিজ্য জোরদার করা এবং মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই। উল্লেখ্য, দারিদ্র্য নির্মূলকল্পে বর্তমান সরকার ইতোমধ্যে বিবিআইএন, বিসিআইএম-ইসি ও বিমসটেক ফোরাম প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সার্ক সনদ অনুযায়ী, বছরে একবার সার্ক রাষ্ট্র/সরকারপ্রধানদের সম্মেলন বাধ্যতামূলক। অথচ গত ৩০ বছরে মাত্র ১৮টি শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৯৮৫ সালে সার্ক প্রতিষ্ঠা হয়েছিল যে আবেগ, যুক্তি ও স্বপ্ন নিয়ে, তা পুরো দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের মধ্যে একটি আকাক্সক্ষার জন্ম দিয়েছিল। আর তা হলো- দারিদ্র্য ও সামাজিক অসাম্যমুক্ত একটি আঞ্চলিক সত্তা হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ার বিকাশ; যেখানে সীমানা থাকলেও মানুষের মনে কোন সীমানা কিংবা বিভেদ রেখা থাকবে না। আমাদের পরিচয় হবে, আমরা দক্ষিণ এশিয়ার নাগরিক। এটা অস্বীকারের উপায় নেই যে, সার্ক নামক প্রতিষ্ঠানটির বিকাশের পক্ষে বড় বাধা হচ্ছে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক। এর বড় ধাক্কা হলো ইসলামাবাদ সার্ক সামিট, ২০১৬ স্থগিত হওয়া। এটি নিকট অতীতে সার্কের জন্য বড় ব্যর্থতা। তাছাড়া আঞ্চলিক আধিপত্য বজায় রাখতে কোন কোন দেশের মনোভাব সার্কের পরিপন্থী। স্মরণযোগ্য যে, কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠিত অষ্টাদশ সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ছিল ‘শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য অধিকতর প্রয়াস।’ দুই দিনের ওই সম্মেলনে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা এ অঞ্চলের মানুষের শান্তি ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে একযোগে কাজ করার পাশাপাশি সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন। পরিতাপের বিষয় হলো, তাদের সেই প্রত্যয় প্রত্যাশিতভাবে অর্থবহ হয়ে ওঠেনি। তবু দক্ষিণ এশিয়ার নাগরিকদের আশা, সার্ক নেতারা দক্ষিণ এশীয় জনগণের কাছে দেয়া তাদের প্রতিশ্রুতিগুলো রক্ষায় সচেষ্ট থাকবেন। সদস্য দেশগুলোর সাধারণ মানুষ মনে করে যে, প্রতিষ্ঠার পর থেকে সার্ক নেতৃবৃন্দ যেসব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তা বাস্তবায়িত হলে দক্ষিণ এশিয়ার চেহারা পাল্টে যেত। বিশ্বের অন্য আঞ্চলিক সংস্থাগুলো এগিয়ে যাচ্ছে, তখন দক্ষিণ এশিয়া পিছিয়ে থাকার কোন কারণ নেই।
×