ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

১০ দফা দাবি

রংপুরে সাঁওতালদের বিক্ষোভ ॥ ৬ মার্চ ১৬ জেলায় শহীদ মিনারে অবস্থান

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১৬ জানুয়ারি ২০১৭

 রংপুরে সাঁওতালদের বিক্ষোভ ॥ ৬ মার্চ ১৬ জেলায় শহীদ মিনারে অবস্থান

নিজস্ব সংবাদদাতা, রংপুর, ১৫ জানুয়ারি ॥ গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতালদের ওপর রংপুর চিনিকল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের হামলা মামলা, লুটপাট, খুন, উচ্ছেদ, অগ্নিসংযোগ ও হয়রানির প্রতিবাদ এবং লুটেরা সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেফতারসহ ১০ দফা দাবিতে রবিবার দুপুরে রংপুর নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে জাতীয় আদিবাসী পরিষদ। সাঁওতালরা তীরধনুক ও লাঠি সোটাসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মিছিলে অংশ নেয়। রংপুর বিভাগের আট জেলা থেকে হাজারো সাঁওতাল বিক্ষোভ কর্মসূচীতে যোগ দেন। সমাবেশ থেকে আগামী ৬ মার্চ রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলার শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচীর ঘোষণা দেয়া হয়। এর আগে নগরীর শাপলা চত্বর থেকে সাঁওতালদের একটি বিশাল বিক্ষোভ মিছিল নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক ঘুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে শেষ হয়। সেখানে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেন আদিবাসীরা। সমাবেশে জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি রবীন্দ্র সরেণের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সবিন চন্দ্র মু-া, আদিবাসী নেতা সুবিন তিরকী, সুভাষ চন্দ্র, আদিবাসী যুব পরিষদের সভাপতি নরেণ চন্দ্র পাহান, ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিভূতি ভূষণ মাহাতো ও সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্মস ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম পরিষদের সহসভাপতি সিলিমন বাস্কে। এ ছাড়াও সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন জাসদ রংপুর মহানগর সভাপতি গৌতম রায়, বাসদ নেতা আনোয়ার হোসেন বাবলু, আব্দুল কুদ্দুস, ওয়ার্কার্স পার্টির অশোক সরকার। এ সময় অভিযোগ করা হয়, প্রায় আড়াই মাস ধরে গোবিন্দগঞ্জে শত শত সাঁওতাল পরিবার খোলা আকাশের নিচে মানবেতর দিন কাটাচ্ছে। এখন পর্যন্ত তাদের থাকার কোন ব্যবস্থা করা হয়নি। অন্যদিকে সাঁওতালদের ওপর হামলা, অগ্নিসংযোগ ও মালামাল লুট করে তিন সাঁওতালকে হত্যা করার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় এখন পর্যন্ত স্থানীয় এমপি আবুল কালাম আজাদসহ তার সহযোগীদের গ্রেফতার করা হয়নি। জ্বালিয়ে দেয়া স্কুলটি তৈরি করে না দেয়ায় সাঁওতালদের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ রয়েছে। এ নিয়ে সাঁওতালরা আন্দোলন করে এলেও সরকার কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। সে কারণে সমাবেশ থেকে ১০ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। দাবিগুলো হলো- সাঁওতালদের ওপর হামলায় আক্রান্তদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার ও হয়রানি বন্ধ, বিনষ্ট করা ক্ষেতের ফসল ও পুকুরের মাছের ক্ষতিপূরণ প্রদান, হামলায় নিহত ও আহতদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দ্রুত প্রদান এবং তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা, পুড়ে যাওয়া বাসস্থান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান অবিলম্বে তৈরি করে দেয়া, ফার্ম এলাকায় আদিবাসীদের বসত ঘেঁষা কাঁটাতারের বেড়া তুলে ফেলা। হামলাকারী পরিকল্পনাকারী ইন্ধনদাতা ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ববস্থা গ্রহণসহ তাদের দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানান বক্তারা। এছাড়া পক্ষপাতদুষ্ট ইউএনও এবং ওসিকে অবিলম্বে প্রত্যাহার করে তাদের শাস্তি প্রদান, সাঁওতালদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগকারী পুলিশ ও তাদের নির্দেশ দানকারীদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ, রংপুর চিনিকল অচল হয়ে যাওয়ার পর সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্মের জমিকে রিকুইজিশন শর্ত ভঙ্গ করে ইজারা দেয়ায় মিল কর্তৃপক্ষের অবৈধ কাজ ও দুর্নীতির তদন্ত এবং ১৯৬২ সালের চুক্তির ধারা মোতাবেক যেসব পরিবারের জমি রিকুইজিশন করা হয়েছিল তাদের পূর্বতন ভূমি আইনী অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানানো হয়। এই ১০ দফা দাবিতে আগামী ৬ মার্চ রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলার প্রতিটি জেলায় শহীদ মিনারে অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচী পালন করার কর্মসূচী ঘোষণা দেয়া হয়। দাবি মানা না হলে আরও কঠোর কর্মসূচী দেয়া হবে বলে জানানো হয়।
×