ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামে কোস্টগার্ডের বহরে ২ সমুদ্রগামী জাহাজ কমিশনিং

জঙ্গীবাদের মদদদাতাদের ছাড় দেয়া হবে না ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১৩ জানুয়ারি ২০১৭

জঙ্গীবাদের মদদদাতাদের ছাড় দেয়া হবে না ॥ প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আবারও সরকারের কঠোর অবস্থান ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুধু তাই নয়, জঙ্গীবাদের মদদদাতাদেরও ছাড় দেয়া হবে না বলে তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। বৃহস্পতিবার কোস্টগার্ডের বহরে দুটি অত্যাধুনিক সমুদ্রগামী জাহাজ কমিশনিং অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সরকারের এ অবস্থান ব্যক্ত করেন। চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় কোস্টগার্ড বার্থে আয়োজিত এই কমিশনিং অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ কোন জঙ্গী রাষ্ট্র নয়। জঙ্গী দমনে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছি। জঙ্গীবাদের আশ্রয়, প্রশ্রয় ও মদদদাতাদের বর্তমান সরকার কোন প্রকার ছাড় দেবে না। অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি বাংলাদেশ কোস্টগার্ডও তার এখতিয়ারাধীন এলাকায় জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে প্রধানমন্ত্রী দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন। আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে দেশের সমুদ্রসীমা বিরোধের নিষ্পত্তি এবং বঙ্গোপসাগরে বিশাল এলাকা অর্জনের বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে সরকার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ এবং পরিকল্পনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, গভীর সমুদ্রে টহলদানে সক্ষম দুটি অফশোর প্যাট্রল ভেসেল সংযুক্ত হলো কোস্টগার্ড বহরে। সমুদ্র জয়ের পর এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতা আজ কোস্টগার্ডের জন্য একটি নতুন অধ্যায় সূচিত হলো, যার মাধ্যমে সমুদ্রসম্পদ আহরণ ও নিরাপত্তার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নের কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে। আধুনিক এ দুটি জাহাজ সংগ্রহের প্রক্রিয়া উল্লেখ করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সালে আমার ইতালি সফরের সময় ইতালিয়ান সরকারের সহযোগিতা চেয়েছিলাম। এরই ধারাবাহিকতা জিটুজি চুক্তির মাধ্যমে ইতালিয়ান নৌবাহিনীর চারটি করভেট প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে অফশোর প্যাট্রল ভেসেলে রূপান্তরিত করে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডকে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত হয়। এ চারটি জাহাজকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশ্বস্ত রাজনৈতিক সহচর শহীদ চার জাতীয় নেতার নামে নামকরণ করা হয়েছে। প্রথমে আসা দুটি জাহাজ সিজিএস সৈয়দ নজরুল এবং সিজিএস তাজউদ্দীন কমিশন করা হলো। ইতালি থেকে আসার পর অপর দুই জাহাজ সিজিএস মনসুর আলী এবং সিজিএস কামারুজ্জামান কমিশন করা হবে। কোস্টগার্ডের সৃষ্টি ও বিকাশে ভূমিকা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সংস্থার শুরু থেকে আমার দল ও সরকার সব সময় সরাসরি সম্পৃক্ত ছিল এবং এখনও আছে। ১৯৯৪ সালে জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের আনীত বিলের কারণেই কোস্টগার্ড সৃষ্টি হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার কোস্টগার্ডের বিভিন্ন জোনের কার্যালয়ের জন্য ভূমি প্রদান, অবকাঠামো নির্মাণ এবং বিভিন্ন ধরনের বোট হস্তান্তরের মাধ্যমে দেশের উপকূলীয় এলাকায় কোস্টগার্ডের কার্যক্রম চালু করে। সে ধারাবাহিকতায় বিগত আট বছরে ব্যাপক উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের উপকূলীয় এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে কোস্টগার্ডের স্টেশনসমূহে বিভিন্ন অবকাঠামোসহ ৩০টি কোস্টাল সাইক্লোন ম্যানেজমেন্ট সেন্টার তৈরি করা হয়েছে। নির্মাণ করা হয়েছে বিভিন্ন আকারের ৪৮টি প্যাট্রল বোট। বাংলাদেশ নৌবাহিনী পরিচালিত নারায়ণগঞ্জ ডক ইয়ার্ড এবং খুলনা শীপ ইয়ার্ডে বিভিন্ন ধরনের সাতটি টহল জাহাজ, একটি ফ্লোটিং ক্যান এবং দুটি প্যাট্রল বোট তৈরি হচ্ছে, যেগুলো অচিরেই কোস্টগার্ড বহরে যুক্ত হবে। তিনি বাংলাদেশের নদী, সাগর, উপকূল এবং গভীর সমুদ্রের অর্থনৈতিক কার্যক্রম অর্থাৎ ব্লু ইকোনমি কার্যক্রমকে গতিশীল ও নিরাপদ রাখা এবং এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক কার্যক্রমে জড়িত ব্যক্তি এবং তাদের যানমালের নিরাপত্তা বিধান, মাদক দ্রব্যসহ যে কোন চোরাচালান প্রতিরোধ এবং সমুদ্র দূষণরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণসহ কোস্টগার্ডের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালনের আহ্বান জানান। কোস্টগার্ডের এ কমিশনিং অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, স্বরাষ্ট্র সচিব ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ, তিন বাহিনীর প্রধান এবং কোস্টগার্ডের মহাপরিচালক রিয়ার এডমিরাল আওরঙ্গজেব চৌধুরী ও সরকারী উর্ধতন কর্মকর্তারা।
×