ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

গত দুই মাসে যারা এসেছে যাচাইবাছাই করে তাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের আগ্রহের কথা জানালেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

রোহিঙ্গাদের দ্রুত ফিরিয়ে নিতে কর্মকৌশল নির্ধারণের প্রস্তাব

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ১৩ জানুয়ারি ২০১৭

রোহিঙ্গাদের দ্রুত ফিরিয়ে নিতে কর্মকৌশল নির্ধারণের প্রস্তাব

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ রোহিঙ্গা নাগরিকদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে মিয়ানমারের নিকট একটি কর্মকৌশল নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। এছাড়াও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী রোহিঙ্গা নাগরিকদের মিয়ানমারের নাগরিকত্ব বা স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার বিষয়টি যাচাইয়ের জন্য একটি কমিটি গঠনের জন্য প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এদিকে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও টেকসই জীবন ব্যবস্থার জন্য আলোচনা করতে সম্মত হয়েছে মিয়ানমার আর গত অক্টোবরের পর থেকে এই পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রায় ৬৫ হাজার রোহিঙ্গা নাগরিক প্রবেশ করেছেন। বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এসব তথ্য জানান। মিয়ানমারের বিশেষ দূত ও দেশটির পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ইউ কিও তিনের ঢাকা সফর নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ও পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, মিয়ানমারের বিশেষ দূতের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশ মিয়ানমারের নিবন্ধিত শরণার্থী, অনিবন্ধিত মিয়ানমার নাগরিক এবং নবাগতদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের দাবি জানিয়েছে। এ লক্ষ্যে একটি কর্মকৌশল নির্ধারণেরও প্রস্তাব করেছে। তিনি জানান, গত দুই মাসে সীমান্ত পেরিয়ে মিয়ানমার থেকে এসে যারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে, তাদের যাচাই-বাছাই করে ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে দেশটি আগ্রহ দেখিয়েছে। মাহমুদ আলী বলেন, তাদের আগ্রহ দেখছি। তাদের আন্তরিকতায় আমরা আশাবাদী। তবে মিয়ানমারে নতুন জটিলতা তৈরি হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত তাদের ৬৫ হাজার নাগরিক সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছেন। আর বিগত বছরগুলোতে মিয়ানমার থেকে যারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে, তাদের মধ্যে ৩৩ হাজার ক্যাম্পে এবং তিন লাখ বাইরে রয়েছেন বলে বিশেষ দূতকে জানানো হয়েছে। নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত এ সকল শরণার্থীকে ফিরিয়ে নিতে ঢাকা একটি কর্মকৌশল নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারের এই সঙ্কটের কারণে পর্যটন ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে বিশেষ দূতকে অবহিত করা হয়েছে। অন্যদিকে তারা মিয়ানমারের নাগরিক ও স্থায়ী বাসিন্দা কিনা- তা যাচাইয়ের ওপর বিশেষ দূত গুরুত্ব দিয়েছেন জানিয়ে মাহমুদ আলী বলেন, প্রাথমিকভাবে গত দুই মাসে আসা মিয়ানমারের নাগরিকদের বাছাই প্রক্রিয়া শুরুর বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছেন বিশেষ দূত। এর বিপরীতে বাংলাদেশ সবাইকে ফিরিয়ে নেয়ার যৌক্তিকতা তার সামনে তুলে ধরেছে বলে জানান মন্ত্রী। ফিরিয়ে নেয়ার এই প্রক্রিয়ায় মিয়ানমারের অবস্থান জানিয়ে তিনি বলেন, আগ্রহ না থাকলে তিনি আসতেন না। যেহেতু আন্তরিকতা দেখছি, আমরা পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে এগিযে যাব। তিনি জানান, একটি সীমান্ত লিয়াজোঁ অফিস খোলা এবং নিরাপত্তা ও সহযোগিতা বিষয়ে একটি চুক্তি করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। মিয়ানমার তাতে রাজি আছে বলে জানিয়েছে। মন্ত্রী বলেন, আমরা সম্মানজনক ও যথাযোগ্য সমাধানের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। যেভাবে অগ্রসর হওয়া দরকার আমরা সেভাবে এগিয়ে যাচ্ছি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিশেষ দূতের সফর দু’দেশের মধ্যকার জটিল বিষয়ে আলোচনার পথ সুগম করবে বলে বাংলাদেশ প্রত্যাশা করে। বৈঠকে রাখাইন রাজ্যের সংখ্যালঘু মুসলমান জনগোষ্ঠীর গণহারে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণের প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান ও মূল সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে যথাযথ উদ্যোগ নেয়ার জন্য মিয়ানমারকে অনুরোধ জানানো হয়েছে, যাতে এ সমস্যা বার বার তৈরি না হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, মিয়ানমারের গণমাধ্যমে ৯ অক্টোবর সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পৃক্ততার ইঙ্গিতপূর্ণ সংবাদ প্রকাশের বিষয়ে বিশেষদূত উল্লেখ করেছেন, সীমান্তের ঘটনায় মিয়ানমার সরকার কখনও বাংলাদেশকে দোষারোপ করেনি। তিনি সীমান্ত ব্যবস্থাপনাসহ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে দু’দেশের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন। মিয়ানমারের নতুন সরকার রাখাইন রাজ্যে মুসলমান জনগোষ্ঠীর সমস্যা সমাধানে কফি আনান কমিশন গঠনসহ অনেক উদ্যোগ নিয়েছেন বলে জানান। বৈঠককালে মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে বাংলাদেশের আগ্রহের কথা পুনর্ব্যক্ত করা হয়। তাছাড়া জটিল বিষয়গুলোতে ইতিবাচক ও আন্তরিক আলোচনার আহ্বান জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী মিয়ানমার নাগরিকদের এবং রাখাইন মুসলমানদের নাগরিকত্ব বা স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার বিষয়টি যাচাইয়ের জন্য একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। তাছাড়া বাংলাদেশ প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় প্রয়োজন মোতাবেক আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতার প্রস্তাব করে। মিয়ানমারের বিশেষ দূত প্রস্তাবটি তার দেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর কাছে তুলে ধরবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন। গত অক্টোবরে মিয়ানমারে তিনটি সীমান্ত পোস্টে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হামলার পর সামরিক অভিযান শুরু হলে বাংলাদেশ সীমান্তে নতুন করে শরণার্থীদের ঢল নামে। এই প্রেক্ষাপটে ঢাকায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে পরিস্থিতি সামাল দিতে উদ্যোগী হওয়ার তাগিদ দেয়া হয় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে। নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশমুখী রোহিঙ্গা স্রোত নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমালোচনার মধ্যে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর আউং সান সু চির বিশেষ দূত হিসেবে মঙ্গলবার ঢাকা আসেন দেশটির পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ইউ কিও তিন। বুধবার তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হকের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন।
×