ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

ইউজিসির সর্বশেষ রিপোর্টে তথ্য ;###;৯৫ ভার্সিটির মধ্যে স্থায়ী সনদ লাভ তিনটির, আটটি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়মিত আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা দেয় ;###;ভাড়া বাড়িতে ‘নামকাওয়াস্তে’ চলছে শিক্ষাদান, থেমে নেই শিক্ষার নামে বাণিজ্য

নড়বড়ে আল্টিমেটাম

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ৮ জানুয়ারি ২০১৭

নড়বড়ে আল্টিমেটাম

বিভাষ বাড়ৈ ॥ সরকারের আল্টিমেটাম অনুসারে আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে আইন মেনে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিজস্ব ক্যাম্পাসে যেতে হবে। ভাড়া বাড়িতে ‘নাম কাওয়াস্তে’ শিক্ষাদানের নামে বাণিজ্য বন্ধ করে নিজস্ব ক্যাম্পাসে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য তাগিদ দেয়া হয়। অবশ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবির প্রেক্ষিতে পাঁচদফা সময় বাড়ানো হলেও অগ্রগতি ভাল নয়। আইন অনুযায়ী অনুমোদনের সাত বছরের মধ্যে স্থায়ী জমিতে ক্যাম্পাস পরিচালনা করার কথা থাকলেও ২৪ বছরে নিজস্ব ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে পেরেছে মাত্র ১২ বিশ্ববিদ্যালয়। অথচ দেশের বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৯৫। ২৪ বছরে মাত্র তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় লাভ করতে পেরেছে স্থায়ী সনদ। অধিকাংশেই নিয়মিত সিন্ডিকেট ও একাডেমিক সভা করা হয় না। মাত্র ৮ বিশ্ববিদ্যালয় নিয়মিত আয় ব্যয়ের হিসাব জমা দিচ্ছে। দেশের উচ্চশিক্ষা তদারকি প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেশের বেসরকারী বিশ্ববিদ্যায়ের শিক্ষার সমস্যা নিয়ে এসব তথ্যই উঠে এসেছে। ইউজিসির সর্বশেষ বার্ষিক রিপোর্টেও উঠে এসেছে সঙ্কটের নানা দিক। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দেয়া সর্বশেষ আল্টিমেটাম অনুসারে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের কি অবস্থা, ২৪ বছরের কার অগ্রগতি কতটুকু, কারা নিয়ম মেনে কাজ করছে, কারা করছে নাÑ এমন নানা প্রশ্নের উত্তর মিলেছে প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনে দেখা গেছে, আয় বাড়লেও মান বাড়ছে না বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের। আইন অনুযায়ী অনুমোদনের পর সাত বছরের মধ্যে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে স্থায়ী জমিতে ক্যাম্পাস পরিচালনা করতে হবে। কিন্তু অধিকাংশ বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় এই নিয়ম মানছে না। আইন অমান্য করেই বছরের পর বছর শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে আসছে অস্থায়ী ক্যাম্পাসেই। দেশে ৯৫ বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এদের মধ্যে মাত্র ১২ বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী জমিতে ক্যাম্পাস পরিচালনা করছে। বাকিগুলো থেকে গেছে এর বাইরেই। কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ শুরু করেছে, কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয় জমি কিনেছে স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য। আবার কোন বিশ্ববিদ্যালয় নবায়ন করে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে সময় বাড়িয়ে নিয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, ওসব বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা থাকলেও স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে দফায় দফায় বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে সময়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসিও তাদের বিরুদ্ধে কঠোর কোন পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ পাস হওয়ার পর প্রথম ২০১২ সাল পর্যন্ত স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার জন্য বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সময় বেঁধে দেয়া হয়। দ্বিতীয় দফায় ২০১৩ সালে, তৃতীয় দফায় ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত এরপর আরেক দফা শেষে এবার সর্বশেষ আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ কিছুদিন আগেও বলেছেন, আগে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কোন নিয়ম কানুন মানত না। আমরা দীর্ঘ সময়ে তাদের একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে নিয়ে এসেছি। কিছু ক্যাম্পাস স্থায়ী জমিতে পরিচালিত হচ্ছে। অনেকে স্থায়ী জমিতে যেতে কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। আমরা বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়কে দাঁড় করাতে চাই। কিন্তু তারা যদি আইন না মেনে প্রতিষ্ঠান চালাতে চান তবে সেটি হতে দেয়া হবে না। তবে জানুয়ারির মধ্যেও যদি কেউ স্থায়ী জমিতে ক্যাম্পাস নিয়ে যেতে না পারে তাদের কেমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে এমন প্রশ্নের কোন জবাব এখনও দেননি শিক্ষামন্ত্রী বা মন্ত্রণালয়ের অন্য কেউ। ইউজিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী নিজস্ব জমিতে নিজস্ব স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম স্থানান্তর করেছে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এ্যান্ড টেকনোলজি-চট্টগ্রাম, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার এ্যান্ড টেকনোলজি, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়-চট্টগ্রাম, আহসানুল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। তালিকায় আরও আছে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেজ এন্ড টেকনোলজি, গণবিশ্ববিদ্যালয়, বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি, দ্য ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক এবং সিটি ইউনিভার্সিটি। স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ করা হলেও সম্পূর্ণভাবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি। স্থায়ী ক্যাম্পাসে আংশিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে দশটি বিশ্ববিদ্যালয়। এ তালিকায় আছে-আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, লিডিং ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস, উত্তরা ইউনিভার্সিটি, রয়েল ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অব সায়েন্সেস, অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নর্দার্ন ইউনিভার্সিটি। শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেনি, তবে স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ করছে দশটি বিশ্ববিদ্যালয়। এ তালিকায় আছে- বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, গ্রীন ইউনিভার্সিটি, দি পিপলস ইউনিভার্সিটি, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি, আশা ইউনিভার্সিটি। জমি কিনলেও নির্মাণ কাজ শুরু করেনি দশটি বিশ্ববিদ্যালয়। এগুলো হচ্ছে- স্টেট ইউনিভার্সিটি, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল, প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি, মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ, ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া। ফাউন্ডেশনের জমিতে ক্যাম্পাস রয়েছে দু’টি বিশ্ববিদ্যালয়ের। একটি সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটি অপরটি মিলিওনিয়ার ইউনিভার্সিটি। একাধিক স্থায়ী ক্যাম্পাস রয়েছে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি ও শান্ত মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি। এ দুটি বিশ্ববিদ্যালয়কে আইন অনুসারে নিষ্কণ্টক, অখ- ও দায়মুক্ত জমি নির্দিষ্ট করে সরকারকে স্থ্য়াী ক্যাম্পাসের তথ্য জানাতে বলা হয়েছে। নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে কম জমিতে ক্যাম্পাস থাকা তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে- স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি, প্রাইম ইউনিভার্সিটি ও সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি। আর আইন অনুযায়ী জমি ক্রয় করেনি প্রেসিডেন্সী বিশ্ববিদ্যালয়। আর মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ¦ ও দুই পক্ষের মধ্যে মামলা রয়েছে প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এবং ইবাইস ইউনিভার্সিটিতে। ২০১০ সালে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় আইন হওয়ার আগে ৫১টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়। এই ৫১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে আইনে বলা আছে, ‘এই আইনে যাই থাকুক না কেন এই আইন কার্যকর হইবার পূর্বে সাময়িক অনুমতিপ্রাপ্ত কোন বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে সনদ গ্রহণপূর্বক স্থায়ী না হইয়া থাকিলে এই আইন কার্যকর হবার পর উক্ত বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়কে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ধারা ৯ এর শর্তাবলী পূরণ সাপেক্ষে সনদপত্র গ্রহণ করিতে হইবে।’ ‘কোন বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সনদপত্র গ্রহণ না করিলে উক্ত সময়সীমার পর সরকার উক্ত বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাময়িক অনুমতি বাতিল করিয়া উহা বন্ধ করিবে।’ এদিকে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী না পাওয়ার আশঙ্কায় ঢাকা শহরের বাইরে যাচ্ছে না। ‘জমি কিনেছি’, ‘নির্মাণকাজ করছি’, ‘যাচ্ছি’ এ জাতীয় তথ্য দিয়ে ও অঙ্গীকার করে সরকারের কাছ থেকে সময় বাড়ানোর চেষ্টা করছে। অভিযোগ উঠেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় আইন অমান্যকারী বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথা বললেও কার্যত আপোস করছে। বারবার আইন ভঙ্গ করলেও ব্যবস্থা নিতে পারছে না। এদিকে ইউজিসির আরেক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে আয়-ব্যয়ের নিরীক্ষা হিসাব দাখিলে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনীহার কথা। অথচ প্রতি শিক্ষাবর্ষের আয়-ব্যয়ের নিরীক্ষা প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশনা রয়েছে সরকারের। জানা গেছে, সরকারী ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সরকারী অর্থে পরিচালিত হওয়ায় এসব প্রতিষ্ঠানের নিরীক্ষা সরকারী উদ্যোগে করা হয়। আর বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে কোন নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের (সিএ ফার্ম) মাধ্যমে নিরীক্ষা করে প্রতিবেদন ইউজিসিতে জমা দেয়ার কথা। প্রতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে এ প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশনা রয়েছে। ইউজিসির প্রতিবেদন বলছে, নিরীক্ষা প্রতিবেদন হালনাগাদ রয়েছে মাত্র আটটি বিশ্ববিদ্যালয়ের। কার্যক্রম পরিচালনাকারী বাকি অর্ধশতাধিক বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় নিরীক্ষা প্রতিবেদন হালনাগাদ করে ইউজিসিতে জমা দেয়নি। প্রথম সারির অনেক বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ও আছে এর মধ্যে। এর বাইরেও বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম রয়েছে দেশের বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয়। ইউজিসির পক্ষ থেকে নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় নিয়মিত সিন্ডিকেট, একাডেমিক কাউন্সিল ও অর্থ কমিটির সভা হয় না। ২০১৪ সালে দশ বিশ্ববিদ্যালয়ে বোর্ড অব ট্রাস্টিজের কোন সভাই হয়নি, এক বছরে একবারের জন্যও সিন্ডিকেট সভা করেনি ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয়, একাডেমিক কাউন্সিলের সভা হয়নি ১২ বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং অর্থ কমিটির সভা করেনি ১২ বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়া নম্বরপত্র, সনদ ও প্রশংসাপত্র প্রদানে উচ্চহারে ফি গ্রহণ, টিউশন ও ভর্তি ফি বৃদ্ধিসহ বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনিয়ম উঠে এসেছে ইউজিসির ওই প্রতিবেদনে। ২০১৫ সালে দেশের ৮৫ বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বমোট আয় ছিল প্রায় দুই হাজার ৭৯১ কোটি টাকা। গড়ে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় আয় করেছে প্রায় ৩৩ কোটি টাকা। ২০১৪ সালের তুলনায় বেসরকারী বিশ্ববিদ্যায়গুলোতে মোট আয় বেড়েছে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। প্রতিবছরই বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ও আয় বাড়লেও মান সেভাবে বাড়ছে না। মঞ্জুরি কমিশন বলছে, কিছু বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের মান সন্তোষজনক পর্যায়ে উন্নীত হলেও অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের মানই আশানুরূপ নয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ২০১৫ সালের সমস্ত তথ্য নিয়ে তৈরি করা এই প্রতিবেদনে বেশকিছু সুপারিশও করেছে ইউজিসি। সেখানে বলা হয়েছে, অধিকাংশ বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর পদে স্থায়ী শিক্ষক আশানুরূপ নয়। পূর্ণকালীন ১০ হাজার ১৮৮ শিক্ষকের মধ্যে মাত্র ৭০৮ অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ৫৬৪, সহকারী অধ্যাপক দুই হাজার ১৭৮ জন। তবে লেকচারার ছয় হাজার ৫১২। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনেক বিভাগই রয়েছে যেখানে অধ্যাপক তো দূরের কথা সহযোগী অধ্যাপকও নেই। ফলে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষার মান আশানুরূপভাবে বাড়ছে না। ১৯৯২ সাল থেকে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যায় যাত্রা শুরু করেছে। গবেষণাকেই বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল কাজ। কিন্তু বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণা নিয়েই প্রচ- অনীহা রয়েছে। ২০১৫ সালে ৮৫ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে গবেষণা খাতে ২৮ বিশ্ববিদ্যালয় কোন বরাদ্দই রাখেনি। গবেষণা খাতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মোট ব্যয় ছিল ৮১ কোটি টাকা। ৫৭ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটির গবেষণায় গড় ব্যয় ছিল প্রায় দেড় কোটি টাকা। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিজ নিজ বার্ষিক বাজেটের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ গবেষণার কাজে ব্যয় করার কথা। কমিশন আশা করে যে, উচ্চশিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নের পাশাপাশি জাতীয় উন্নয়নের কথা বিবেচনায় রেখে পরবর্তী শিক্ষাবছর থেকে এ সকল বিশ্ববিদ্যালয় নিয়মিতভাবে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনায় প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ ও ব্যয় করবে। ২০১৫ সালে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় হতে ৬১ হাজার ৪৮২ শিক্ষার্থী ডিগ্রী লাভ করেছেন। সবচেয়ে বেশি দুই হাজার ৯৪৪ শিক্ষার্থী ডিগ্রী পেয়েছে অতীশ দীপঙ্কর ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এ্যান্ড টেকনোলজি থেকে। এরপর সর্বোচ্চ ডিগ্রী বিতরণ করেছে সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি, আন্তর্জাতিক ইসলামী ইউনিভার্সিটি, চট্টগ্রাম ও ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি এ্যান্ড সায়েন্স। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রায় দুই হাজার ৭৯১ কোটি টাকা আয় করলেও ব্যয়ও করেছে প্রায় দুই হাজার ৫৩৬ কোটি টাকা। আয়-ব্যয় সমান দেখিয়েছে ১০ বিশ্ববিদ্যালয়। আয়-ব্যয় কিভাবে সমানে সমান হয় তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। আয়-ব্যয় সমান হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এ্যান্ড টেকনোলজি, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি, ব্রিটানিয়া ইউনিভার্সিটি, নর্থ বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি, রাজশাহী সায়েন্স এ্যান্ড টেকনোলজি ইউনিভার্সিটি, শেখ ফজিলাতুন্নেসা ইউনিভার্সিটি ও পুন্ড্র ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এ্যান্ড টেকনোলজি।
×