ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

তুচ্ছ কারণে তুলকালাম

প্রকাশিত: ০৩:৫৪, ৮ জানুয়ারি ২০১৭

তুচ্ছ কারণে তুলকালাম

তুচ্ছ কারণে তুলকালাম কা- অনভিপ্রেত। এতে অপ্রয়োজনে শক্তিক্ষয় হয়। মানুষে মানুষে সম্প্রীতি বিনষ্ট হয়। সামান্য কথা কাটাকাটির জের ধরে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার এবং পরিণামে আহত হয়ে আরোগ্যশালায় ভর্তি হওয়া নিতান্তই দুর্ভাগ্যজনক। অথচ এ ধরনেরই একটি অবাঞ্ছিত ঘটনা ঘটে গেল বৃহস্পতিবার শ্রীমঙ্গলে। এতে বিলক্ষণ শ্রীমঙ্গলের কিছুটা শ্রীহানি ঘটেছে, মঙ্গল প্রত্যাশার স্বাভাবিক সৌজন্য হোঁচট খেয়েছে। বিজিবির একটি গাড়ি পার্কিং করার সময় একটি মাইক্রোবাসের চালকের সঙ্গে কথা কাটাকাটির জের ধরে সেখানে যা ঘটেছে তাতে একদিকে যেমন লজ্জিত হতে হয়, অন্যদিকে শঙ্কাও জেগে ওঠে। বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের (বিজিবি) সদস্যরা শহরের চৌমুহনায় ব্যাপক ভাঙচুর এবং ব্যবসায়ী ও পথচারীদের ওপর হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ সময় বিজিবি সদস্যরা কয়েক রাউন্ড গুলিও ছোঁড়ে। এতে বেশ ক’জন এলাকাবাসী গুলিবিদ্ধ হন। অথচ ঘটনা এতদূর গড়াতেই পারত না যদি অতি উৎসাহী কিছু ব্যক্তি বিজিবির একজন মেজরকে লাঞ্ছিত না করত। পাশাপাশি এটাও বলতে হবে ওই অপমানের জের ধরে একটি সুশৃঙ্খল বাহিনীর সদস্যদের অমন মারমুখী হওয়াটাও ছিল অপ্রত্যাশিত। সাধারণত হিন্দী সিনেমায় এ ধরনের আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ দেখা যায়। কোন ব্যক্তি কোন একটি এলাকায় গিয়ে অপমানিত হলে সে নিজ এলাকায় ফিরে যায় এবং দলবদ্ধ হয়ে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সেই এলাকার লোকদের ওপর চড়াও হয়। ফলস্বরূপ দুই পক্ষের ভেতর তুমুল লড়াই শুরু হয়ে যায়। উদ্বেগ ও পরিতাপের বিষয় হচ্ছে শ্রীমঙ্গলের অপ্রীতিকর ঘটনার একটি পক্ষ দেশের সীমান্ত রক্ষায় সদানিয়োজিত সুশৃঙ্খল বাহিনীর কিছু সদস্য। আরও উদ্বেগের বিষয় ‘অপমানের প্রতিশোধ’ নিতে গিয়ে আগ্নেয়াস্ত্রের অপপ্রয়োগ ঘটেছে। পরম করুণাময়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে হয় এজন্য যে, ওই ঘটনায় কোন প্রাণহানি হয়নি। সমাজে মানুষের ভেতর থেকে কি ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা ধীরে ধীরে লোপ পেতে বসেছে? সামান্য ঝগড়া রূপান্তরিত হয়ে যাচ্ছে বিধ্বংসী আক্রমণ-প্রতি আক্রমণে! শ্রীমঙ্গল শহরের বিভিন্ন মার্কেটের দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালানো হয়। এ সময় শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মূল্যবান জিনিসপত্র ভাঙচুর করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, বিজিবির সদস্যরা অর্ধশত কার ও মাইক্রোবাস ভাঙচুর করে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে সেখানে এমন কোন উচ্চপদস্থ দায়িত্বশীল কর্মকর্তা কি উপস্থিত ছিলেন না যিনি উদ্যোগী হয়ে মারমুখী সদস্যদের ক্ষতিকর কাজ থেকে বিরত রাখতে পারতেন? পক্ষান্তরে সেখানকার সুশীল সমাজের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গেরও দায়িত্ব পালনের সুযোগ ছিল যাতে ছোট একটি ঘটনা অগ্রহণযোগ্য বিশাল ঘটনায় পর্যবসিত না হয়। শ্রীমঙ্গলের দুঃখজনক ঘটনা থেকে সব পক্ষেরই শিক্ষা নেয়ার আছে। দুই ব্যক্তির কথোপকথনের উত্তাপ স্বশ্রেণী বা স্বজনদের মধ্যে সংক্রমণের মানসিকতা সব সময়ই পরিহার করা সমীচীন। সরকারের যেসব সংস্থার সদস্যদের পেশাদারিত্বের প্রয়োজনে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করতে হয় তাদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সতর্কতা ও সহিষ্ণুতা কাম্য। তাছাড়া একজন ব্যক্তি বা একটি প্রতিষ্ঠানের কারণে বহুসংখ্যক মানুষ ও প্রতিষ্ঠান কেন ক্ষতিগ্রস্ত হবে? আমরা আশা করব আহত ব্যক্তিরা সুচিকিৎসা পাবেন এবং বিষয়টি মিটমাট করে ফেলার জন্য আন্তরিক উদ্যোগ নেয়া হবে। ক্ষোভ প্রশমিত হোক, সম্প্রীতি ও সহাবস্থানের সদিচ্ছা জয়ী থাকুক।
×