ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

১৫ জানুয়ারি নিবন্ধন শুরু

বুয়েট বিশেষজ্ঞরা হজের প্রাক নিবন্ধনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবেন

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ৬ জানুয়ারি ২০১৭

বুয়েট বিশেষজ্ঞরা হজের প্রাক নিবন্ধনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবেন

আজাদ সুলায়মান ॥ এবার হজের প্রাক-নিবন্ধনে তথ্যপ্রযুক্তির কাজে গতিশীলতা, নির্ভুল ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবেন বুয়েটের বিশেষজ্ঞরা। তাদের সার্বক্ষণিক তদারকিতে থাকবে প্রাক-নিবন্ধনের কেন্দ্রীয় সার্ভার। লক্ষাধিক হজযাত্রীর প্রাক-নিবন্ধন কাজ শুরু হচ্ছে আগামী ১৫ জানুয়ারি। গতবারের মতো এবার যাতে নিবন্ধন নিয়ে কোন ধরনের বিতর্ক দেখা না দেয় সেজন্য এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের সঙ্গে এ সংক্রান্ত একটি সমঝোতা চুক্তিও ইতোমধ্যে সম্পন্ন করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয় নিযুুক্ত হজে আইটি ফার্ম বিজনেস অটোমেশন। বুয়েট ছাড়াও বাংলাদেশ কম্পিউটার সোসাইটি, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালের এ্যাকসেস টু ইনফর্মেশন (এটুআই) ও মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরাও সমন্বিতভাবে আগামী হজের ই-সিস্টেম তদারকি করবেন। বিজনেস অটোমেশন আনুমানিক দেড় লাখ হজযাত্রীর প্রাক-নিবন্ধনের দায়িত্ব পালনের জন্য এরই মধ্যে প্রয়োজনীয়সংখ্যক জনবলকে প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে। এ সম্পকে ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, গত বছরের হজ প্রত্যাশানুযায়ী ভাল হলেও শেষের দিকে সাত শতাধিক হজযাত্রী বিনা রেজিস্ট্রেশনেই সৌদি গমন, প্রাক-নিবন্ধন চলার সময় হঠাৎ সফটওয়্যারের মূল সার্ভার হ্যাং হয়ে যাওয়া ও গতি কমে যাওয়ার মতো কিছু অভিযোগ ওঠে। ধর্ম মন্ত্রণালয় এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্তও করছে। এ অবস্থায় আগামী হজে যাতে এ ধরনের অভিযোগ ও জটিলতার পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সেজন্য এবার বুয়েটের সিএসই বিভাগের পরামর্শ ও কারিগরি সহায়তার বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এজন্য বুুধবার বুয়েটের ব্যুরো অব রিসার্চ ট্রেনিং এ্যান্ড কনসালটেশনের সঙ্গে হজের আইটি ফার্ম বিজনেস অটোমেশনের মধ্যে একটি চুক্তি সম্পাদন করা হয়। সিএসই বিভাগের প্রধান ড. মোহাম্মদ সোহেল রহমান, ড. মোহাম্মদ মাসরুর আলী ও ড. মোহাম্মদ মোস্তফা আকবরের উপস্থিতিতে এ চুক্তিপত্র হস্তান্তর করেন সাবেক হজ অফিসার বজলুল হক বিশ্বাস। জানা যায়, চুক্তি অনুযায়ী বুয়েটের বিশেষজ্ঞরা ই-হজের প্রাক-নিবন্ধন প্রক্রিয়ার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সার্বক্ষণিক তদারকি করবেন। দুজন বিশেষজ্ঞ সকাল দশটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আশকোনার হজ অফিসে প্রাক-নিবন্ধনের প্রতিটি মুহূর্ত পর্যবেক্ষণ করবেন, যাতে গতবারের মতো এবার কোন তুচ্ছ অজুহাতে সার্ভার এক মুহূর্তের জন্যও বন্ধ না হয় কিংবা সার্ভারের গতি শ্লথ না হয়। এ সম্পর্কে ড. মোহাম্মদ মাসরুর আলী জনকণ্ঠকে বলেন, সার্ভার অন হওয়ার পর থেকে সফটওয়্যার সংক্রান্ত কোন ধরনের জটিলতা বা ত্রুটির দরুন যাতে প্রাক-নিবন্ধনের ব্যাঘাত না ঘটে, তথ্যপ্রযুক্তির কোন অজুহাতে কোন এজেন্সী যাতে জালিয়াতি, অনিয়ম বা অন্য কোন অসদুদ্দেশ্য সাধন করতে না পারে, বিশেষ করে রিপ্লেসমেন্ট বাণিজ্যের যাতে কোন এজেন্সি ভুয়া নাম নিবন্ধন করতে না পারে- সেজন্যই বিজনেস অটোমেশনকে কারিগরি ও পরামর্শ সহায়তা দেয়া হবে। দুজন বিশেষজ্ঞের উপস্থিতির পরও যদি সার্ভারে কোন ত্রুটি দেখা দেয়, তখন সেটার কারণ বের করে তাৎক্ষণিক সমাধান দেয়ার উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ থাকবে। তবে কোন এজেন্সি যদি তার নিজস্ব দক্ষ জনবল কিংবা ইন্টারনেটের শ্লথ গতির দরুন প্রত্যাশিত সেবা না পান, সেটার দায়িত্ব তো বিজনেস অটোমেশনের নয়। তবে এ জাতীয় অভিযোগও খতিয়ে দেখা হবে। উল্লেখ্য, গত বছর হজের প্রাক-নিবন্ধনের সময় হঠাৎ সেন্ট্রাল সার্ভার বন্ধ (হ্যাং) হয়ে যায়। পরে যখন আবার চালু হয় তখন অনেক হজ এজেন্সির সিরিয়াল ঠিক ছিল না। এ ফাঁকে অসাধু পন্থায় বেশকিছু হজযাত্রীর নিবন্ধন করা হয় বলে অভিযোগ তোলা হয় হাব থেকে। এমনকি এ কায়দার জালিয়াতিতেই সাত শতাধিক ব্যক্তির হজের অজুহাতে সৌদি যাওয়ার অভিযোগ ওঠে, যা এখন মন্ত্রণালয়ে তদন্তাধীন। এর পর থেকেই প্রাক-নিবন্ধনের কাজে আরও স্বচ্ছতা ও নির্ভুল পদ্ধতি নিশ্চিত করার দাবি ওঠে। গত বছর কোটার বাইরে অতিরিক্ত আরও পঁচিশ হাজার হজযাত্রী প্রাক-নিবন্ধন করার পরও তারা হজে যেতে পারেননি। তাদের এ বছরের হজের জন্য অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে অপেক্ষমাণ তালিকাভুক্ত করা হয়। এ বছর তাদেরই অগ্রাধিকারভিত্তিতেই হজে যাওয়ার সুযোগ দেয়া হবে। এ সম্পর্কে বিজনেস অটোমেশনের সিইও বজলুল হক বিশ্বাস জনকণ্ঠকে বলেন, সৌদি সরকারের সিদ্বান্ত অনুযায়ী ই-হজ সিস্টেম মানাটা বাধ্যতামূলক। সেটা বাস্তবায়ন করার জন্যই এবার বিজনেস অটোমেশন সবার কাছে প্রাক-নিবন্ধনের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, নির্ভুল ও গতিশীলতার সঙ্গে করার জন্যই বুয়েটের বিশেষজ্ঞের সহযোগিতা নেয়ার চুক্তি করেছে, যাতে কোন এজেন্সি কোন ধরনের অনিয়ম ও জালিয়াতির অভিযোগ তুলতে না পারে। কারণ বর্তমান সরকার ই-হজকে সফল করতে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিচ্ছে। ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, এ বছর বাংলাদেশ থেকে হজযাত্রীর কোটা দেড় লাখ করার লক্ষ্য রয়েছে। এজন্য ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ আবদুল জলিল বর্তমানে জেদ্দায় অবস্থান করছেন। বুধবার তিনি সৌদি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এ নিয়ে জোর আলোচনা করেন। প্রত্যাশিত দেড় লাখের কোটা নিশ্চিত করা গেলে এবার কোন জটিলতা থাকবে না। তবে যদি কোটার সংখ্যা এক লাখ ৩০ হাজারের কম হয়, তাহলে প্রাক-নিবন্ধনের সময় অনৈতিক পন্থার আশ্রয় নেয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
×