ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চামড়াজাত পণ্য

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ৫ জানুয়ারি ২০১৭

চামড়াজাত পণ্য

বর্তমানে তৈরি পোশাকের পরই বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে চামড়া শিল্পের অবস্থান। তবে নতুন বাজার দখল এবং পুরনো বাজারে আরও ভাল অবস্থান তৈরির উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে এ শিল্পের। এ জন্য সুষ্ঠু পরিকল্পনা এবং বিশেষ সক্রিয়তা জরুরী। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ১ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলারের চামড়া এবং চামড়াজাত পণ্য রফতানি করা হয়েছে। আগের অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ১ দশমিক ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশ থেকে পাকা চামড়ার পাশাপাশি এখন জুতা, ট্রাভেল ব্যাগ, বেল্ট, ওয়ালেট বা মানিব্যাগ বিদেশে রফতানি হচ্ছে। এছাড়াও চামড়ার তৈরি নানা ‘ফ্যান্সি’ পণ্যেরও চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশে প্রচুর হস্তশিল্প প্রতিষ্ঠান আছে, যেগুলো এসব পণ্য তৈরি করে বিশ্বের বাজারে পাঠাচ্ছে। বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি দেশে প্রায় সাড়ে চার হাজার ছোট পাদুকা প্রস্তুতকারী কারখানাও রয়েছে। প্রতিবছর দেশে ২২ কোটি বর্গফুট চামড়া উৎপাদিত হয়ে থাকে। এসব চামড়ার ৫০ শতাংশই দেশের চামড়াজাত শিল্পে ব্যবহৃত হয়। বাকিটা প্রক্রিয়াজাত করে রফতানি করা হয়। বাংলাদেশের চামড়া ইতালি, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, চীন, হংকং, তাইওয়ানে বেশি রফতানি হয়। রবিবার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৭ সালের জন্য চামড়া ও জুতাসহ চামড়াজাত পণ্যকে জাতীয়ভাবে বার্ষিক পণ্য বা ‘প্রডাক্ট অব দি ইয়ার’ হিসেবে ঘোষণা করেছেন। ফলে এই শিল্পের প্রতি মনোযোগ ও যতœ আরও বাড়বে বলে আশা করা যায়। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় এ শিল্প সংক্রান্ত বিশদ তথ্য তুলে ধরতে গিয়ে বলেছেন, বিগত সাড়ে চার দশকে চামড়া খাতে রফতানি প্রায় ৭১ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ পণ্যে প্রায় ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত মূল্য-সংযোজন সম্ভব হয়েছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে এ দেশের পাদুকার চাহিদা। দেশীয় অনেক প্রতিষ্ঠানই বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠানগুলোর পাদুকা তৈরির কার্যাদেশ পাচ্ছে। ফলে চামড়া ও চামড়াশিল্পজাত পণ্য উৎপাদনকারী অনেক প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণেরও উদ্যোগ নিয়েছে। পাদুকা ও চামড়াজাত পণ্য রফতানিকারকদের বড় সংগঠন লেদারগুডস এ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স এ্যান্ড এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এলএফএমইএবি) জানাচ্ছে, গত এক বছরে ১৫ থেকে ২০টি প্রতিষ্ঠান সমিতির সদস্য হয়েছে। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানও আছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ কয়েকটি দেশে এ দেশের পাদুকা শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত সুবিধা পায়। উল্লেখ্য, এ শিল্পের ৯০ শতাংশ কাঁচামাল দেশেই পাওয়া যায়। পাদুকা ও অন্যান্য পণ্য তৈরিতে উৎপাদিত পাকা চামড়ার মাত্র ৫০ শতাংশ ব্যবহৃত হয়। সেদিক থেকে চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকাশিল্পের প্রসার দ্বিগুণ করা সম্ভব। জুতা রফতানিতে বিশ্বব্যাপী আধিপত্য চীনের। চীন অবশ্য জুতার বাজার খানিকটা ছেড়ে দিয়েছে। সেটি দখলের জন্য কাজ করে সফলতা পেয়েছে ভারত, ভিয়েতনাম ও মিয়ানমার। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ কেন আশানুরূপ সফলতা পাচ্ছে না সেটি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া দরকার। বিশ্বে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের বাজার এখন ২১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের। ২০১৭ সালের মধ্যে চামড়া এবং চামড়াজাত পণ্য থেকে বাংলাদেশের কাক্সিক্ষত রফতানি আয় ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হোকÑ এটাই প্রত্যাশা।
×