ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

সুমন্ত গুপ্ত

বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত শাকিলের আবিষ্কার গুগোল গ্লাস

প্রকাশিত: ০৬:৪৪, ৩ জানুয়ারি ২০১৭

বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত শাকিলের আবিষ্কার গুগোল গ্লাস

অগমেডিক্স ইনকর্পোরেটেড নামটি বাংলাদেশে খুব একটা পরিচিত নয়। তবে এই প্রতিষ্ঠানটি সম্প্রতি আলোচনায় এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ পাঁচটি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বিনিয়োগ পেয়ে। যখন একটি স্টার্টআপ একাধিক ‘মার্কেট লিডার’ প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বিনিয়োগ পায় সেটি তখন ওই স্টার্টআপের জন্য নির্ভরতার প্রতীক হিসেবে বিনিয়োগ বাজারে বিবেচিত হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় রাইড শেয়ারিং এ্যাপ উবারে মার্কিন বিনিয়োগ বাজারের শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগই প্রতিষ্ঠানটিকে ব্যাপক পরিচিতি পেতে সহায়তা করেছে। সাম্প্রতিক আলোচিত প্রতিষ্ঠান অগমেডিক্স কাজ করছে গুগল গ্লাস নিয়ে এবং প্রতিষ্ঠানটির দাবি- এক্ষেত্রে তারাই বিশ্বে সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান। এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ইয়ান কাজী শাকিল একজন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত তার বাবা কাজী শাকিল হলেন ফুটবলার কাজী সালাউদ্দিনের ভাই এবং মা দিয়ানে মেলোন একজন আমেরিকান। ডিউক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক হওয়ার পর ইয়ান শাকিল ক্যালিফোর্নিয়ার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করেন। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার পর ২০১২ সালে পেলু ট্র্যান নামে আরেক আমেরিকান তরুণের সঙ্গে মিলে শাকিল প্রতিষ্ঠা করেন স্টার্টআপ কোম্পানি অগমেডিক্স। আমেরিকায় জন্ম ও বেড়ে ওঠা হলেও বাবার কারণে ছোটবেলা থেকে নিয়মিত বাংলাদেশে এসেছেন শাকিল। বাংলাদেশের সঙ্গে নাড়ির টানের কারণে এ দেশের তরুণদের কাজে লাগানোর চিন্তাও এসেছে। তাই গুগল চশমার সঙ্গে যুক্ত এই এ্যাপ্লিকেশন তৈরির কাজটি তিনি শুরু করেন ঢাকাতেই এবং নিবন্ধন করেন অগমেডিক্স (বাংলাদেশ) লিমিটেড নামের সম্পূর্ণ বাংলাদেশী একটি প্রতিষ্ঠান, যার মালিকানা শতভাগ সিলিকন ভ্যালির অগমেডিক্সের। বর্তমানে গুগল গ্লাসের চিকিৎসকদের জন্য এই লিপিসেবাটি দেয়া হয় ভারত, ডমিনিকান রিপাবলিক, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ থেকে। এরই মধ্যে আমেরিকার সহস্রাধিক চিকিৎসক এই সেবা ব্যবহার করছেন মাসে দেড় থেকে চার হাজার ডলারের বিনিময়ে। কি এই অগমেডিক্স? আসুন জেনে নেই সাধারণত রোগীর ইতিহাস জানতেই ব্যয় হয়ে যায় ডাক্তারদের কর্মঘণ্টার বড় একটা সময়। ডকুমেন্টেশনের এ কাজটা যদি আরেকজনকে দিয়ে করানো যায়, তাহলে আগের চেয়ে অনেক বেশি রোগী দেখতে পারেন একজন ডাক্তার। বাংলাদেশে যেমন রোগীর হিস্টরি লেখার কাজটি করেন তার সহকারীরা। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত কোন দেশে সহকারী রাখাটাও ব্যয়বহুল। মার্কিন ডাক্তারদের জন্য বিকল্প পথ খুঁজতে লাগলেন বায়োটেকনোলজির গ্রাজুয়েট বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ইয়ান। এমন একটা উপায় যা একই সঙ্গে কার্যকর ও টেকসই। বন্ধু পেলু ট্র্যানের সঙ্গে একদিন গুগল গ্লাস নিয়ে কাজ করছিলেন শাকিল। চোখে গ্লাস পরা অবস্থায় হঠাৎ তাদের মনে হলো, আরে এটি ব্যবহার করেই তো ডকুমেন্টেশনের কাজটা করা যায়। নিবিড়ভাবে কাজে লেগে থাকলেন দুই উদ্যোক্তা। প্রাথমিক ধারণাগুলোকে বাস্তবে রূপ দিতে সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, কর্মীদের প্রশিক্ষণ সবকিছু পর্যায়ক্রমে শুরু করেন তারা। প্রস্তুতিতেই কেটে যায় বছর দুয়েক। ২০১৪ সালে পুরোদমে কাজ শুরু করে অগমেডিক্স। অগমেডিক্স কাজ করে গুগল গ্লাসের মাধ্যমে। একজন মার্কিন চিকিৎসক বাংলাদেশে অবস্থানরত এক সহকারীর মাধ্যমে রোগীর ইতিহাস লেখার কাজটি করিয়ে নেন। ওই চিকিৎসক ও এখানে কল সেন্টারে কর্মরত একজন অপারেটর গুগল গ্লাস পড়েন। চিকিৎসকের সঙ্গে রোগী কথা বলেন তখন ডেটা অপারেটর তাদের কথোপকথগুলো শুনে লিপিবদ্ধ করেন। রোগের ইতিহাস লেখার পর চিকিৎসক রোগীকে যেসব গাইডলাইন দেন সেগুলোও তিনি ব্যবস্থাপত্র আকারে লিখে ফেলেন। এসব তথ্য কল সেন্টারের দায়িত্বরত অপারেটর একটি নির্দিষ্ট ডেটাবেজে ডকুমেন্ট আকারে সেইভ করে রাখেন। ফলে তা যে কোন সময় অগমেডিক্স এ্যাপ্লিকেশনের সাহায্যে রোগী বা চিকিৎসকরা দেখতে পাবেন। মোটকথা, গুগল গ্লাস ব্যবহার করে একজন চিকিৎসক রোগীকে পরামর্শ, ব্যবস্থাপত্র সবই দিতে পারেন অডিওর মাধ্যমে।
×