ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মোঃ দলিল উদ্দিন

অভিমত ॥ শেখ হাসিনাই মুক্তিযোদ্ধাদের ভরসা

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ৩ জানুয়ারি ২০১৭

অভিমত ॥ শেখ হাসিনাই মুক্তিযোদ্ধাদের ভরসা

বাংলাদেশের রাষ্ট্র হিসেবে ৪৫ বছর। বঙ্গবন্ধুর ডাকে ১৯৭১ সালে অস্ত্র হাতে সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে আজকের দেশ। বঙ্গবন্ধু মুক্তিযোদ্ধাদের কিছু করে যাবার সময় পাননি। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ তার ওপর কোটি মানুষের ঘরবাড়ি ছিল না। লুট হয়েছে ঘরবাড়ির সব। তাদের ঘরবাড়ি তৈরি শুরু করা হলো। মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসন করার সুযোগ দেয়ার কথা ভাবছিলেন। এমন সময় কিছু বিপথগামী সেনা সদস্যদের দ্বারা তিনি সপরিবারে শহীদ হন। তার পর মুক্তিযোদ্ধাদের নিধন শুরু হলো। জিয়া ক্ষমতায় থাকাকালীন নেমে আসে দুর্যোগ। মুক্তিযোদ্ধাদের বেছে বেছে মারা হয়। তারপর জিয়া মরার পর মুক্তিযোদ্ধাদের রগ কাটা শুরু হয় জামায়াত-শিবিরের মাধ্যমে। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কথা বলার মানুষ বা নেতা পাওয়া যায়নি। ২/১ জন যারা ছিলেন তাদের জেলে পুরে রাখা হয়। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ যারা চালাত সকালে আসত বিকেলে চলে যেত। এমনকি যারা গৃহপালিত তারাই মুক্তিযোদ্ধা সেজে সংসদ পাহারা দিত। ১৯৯১ সালে অধ্যক্ষ আহাদ চৌধুরীকে ডেকে মুক্তিযোদ্ধা নেতা বানানো হয়। শংকরে একটা নার্সিং হোমে বসে জয়বাংলা ধ্বনি দিয়ে তার সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা একত্রিত হলো। তখন ক্ষমতায় বেগম খালেদা জিয়া। এর পর গোলাম আযম, আবদুর রহমান বিশ্বাসের কুশপুতুল দাহ করার সিদ্ধান্ত হয়। পরে শুধু গোলাম আযমের কুশপুতুল দাহ করা হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের পর অধ্যক্ষ আহাদ চৌধুরী অনেক সংগ্রাম করে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ উদ্ধার করলেন। এর পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাকে প্রধান পৃষ্ঠপোষক করে এ সংসদ ঢেলে সাজান। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা রজতজয়ন্তীর প্রাক্কালে বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা শহরের মুক্তিযোদ্ধা পতাকা এবং জাতীয় পতাকা প্রদর্শন করার নির্দেশ দিলেন। আহাদ চৌধুরী সকল মুক্তিযোদ্ধাকে আহ্বান করলে সবাই এক কাতারে শামিল হয়ে শেখ হাসিনার নির্দেশ পালন করল। সেখানে সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, সমস্ত জেলার ডিসি-এসপি সবাই শামিল হয়েছিলেন। জনকণ্ঠের সম্পাদক মোহাম্মদ আতিকউল্লাহ খান মাসুদ ও কাজী শাহেদ আহমেদ যোগ দিয়েছিলেন। সারা বাংলাদেশ ঘুরে রজতজয়ন্তী পালন করা হয়। রজতজয়ন্তীর দিন বিশ্ববরেণ্য নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। যেমনÑ দক্ষিণ আফ্রিকার নেলসন ম্যান্ডেলা, তুরস্কের ডেমিরেল, ফিলিস্তিনের ইয়াসির আরাফাত। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে ভূয়সী প্রশংসা করে গেলেন। মুক্তিযোদ্ধারা আশায় বুক বাঁধল। মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাই করে তালিকা প্রস্তুত করা হলো। ২০০১ সালে নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে হারিয়ে জামায়াত-শিবির এবং বিএনপি ক্ষমতায় এলো। মুক্তিযোদ্ধাদের এক অংশ চলে গেল বিএনপির সঙ্গে। নির্বাচিত সংসদের ঘর দখল হলো চর দখলের মতো। মুক্তিযোদ্ধাদের কপাল পুড়ল। মুক্তিযোদ্ধার ছেলেমেয়েদের চাকরি দেয়া হতো না। বঙ্গবন্ধুর কন্যার সার্টিফিকেট মুখে মুখে বাতিল করা হলো। বিএনপি সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের মন্ত্রণালয় করে মুক্তিযোদ্ধাদের যন্ত্রণার সৃষ্টি করল। রাতের আঁধারে অনেক রাজাকার মুক্তিযোদ্ধা হয়ে গেল। এখন অনেকে বলে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের চেয়ে বেশি। ওদের দাপটে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা কথা বলতে পারেন না। ২০০৮ সালে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধারা তাদের হৃত গৌরব ফিরে পেতে লাগল। হিসাব করার সময় এসেছে স্বাধীনতার ৪৫ বছর পর আমাদের সমাজ কতদূর এগিয়েছে, সামাজিক শৃঙ্খলা, সামাজিক মূল্যবোধ, নৈতিকতা, আমাদের যাপিত জীবনে কতটা অর্জিত হয়েছে? আমাদের মনে রাখতে হবে যাদের রক্ত ও জীবনের বিনিময়ে দেশ স্বাধীন হলো তারা আজ অবহেলিত, অবজ্ঞার পাত্র। সমাজে-রাষ্ট্রে-প্রতিষ্ঠানে কোথাও কারও মর্যাদা পরিপূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। উদাহরণ দেয়া হয়- ওমুক সেক্রেটারি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা। কারা বানাল এই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা? মনে হলে হতাশা আক্রমণ করে। মুক্তিযোদ্ধাদের ছেলেদের বয়সের অনেকে আছেন মন্ত্রী, ডিসি, এসপি তারা অবজ্ঞা করে, তুচ্ছতাচ্ছিল্য এবং অপমান করে। এই কি মুক্তিযোদ্ধাদের ভাগ্যে ছিল? বাংলাদেশে একমাত্র বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা যদি না থাকত তবে মুক্তিযোদ্ধাদের দুর্দশার শেষ হতো না। শেখ হাসিনাকে সব মুক্তিযোদ্ধার পক্ষ থেকে জানাই সশ্রদ্ধ সালাম। মুক্তিযোদ্ধামন্ত্রী আছেন। মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ২টি নির্বাচন হলো তা নিয়ে বিতর্ক আছে। মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে যে সার্টিফিকেট দেয়া হয় সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের সিম্বল দেয়া হয় না। জামায়াত-বিএনপি যে প্রথা চালু করেছে আজও তাই আছে। সার্টিফিকেট দেখলে অনেকেই ভুয়া বলে থাকে। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সম্মানী ভাতা বোনাসসহ নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়। লিবিয়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসন করা হয়েছে। ফিদেল ক্যাস্ট্রো মুক্তিযোদ্ধাদের সব রকমের রাষ্ট্রীয় সম্মান-চাকরি দেয়ার ব্যবস্থা করেছেন। এমনকি চীন, জাপান, ফ্রান্সের ইতিহাসেও দেখা যায়। বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা চাকরি ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের চাকরির নিশ্চয়তা দিয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের লাল বইতে মুক্তিযোদ্ধা বা লোগো দিয়ে সার্টিফিকেট বা আইডি কার্ড দিলে সবাই খুশি হতো। মুক্তিযোদ্ধারাও উপকৃত হতো। সাধারণের স্মার্টকার্ড অতি উত্তম কাজ। মুক্তিযোদ্ধাদের কার্ড দেয়া তো কম সময়ের ব্যাপার। এই সরকার যদি মুক্তিযোদ্ধাদের বিষয়গুলো সমাধান করে না যায়, ভবিষ্যতে অবহেলিত থাকবে।
×