ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

যোগাযোগ খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে ৬ মেগা প্রকল্প

স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশাল কর্মযজ্ঞ

প্রকাশিত: ০৫:২১, ১ জানুয়ারি ২০১৭

স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশাল কর্মযজ্ঞ

রাজন ভট্টাচার্য ॥ দেশের যোগাযোগ খাতের উন্নয়নে আশার আলো জাগাচ্ছে মেগা ছয় প্রকল্প। এর মধ্যে পদ্মা সেতুসহ একাধিক প্রকল্পের অগ্রগতি সবচেয়ে আশাব্যঞ্জক। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে যোগাযোগ খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। বাড়বে অর্থনৈতিক অগ্রগতি। তবে যথাসময়ে এসব প্রকল্পের কাজ শেষ করার তাগিদ সব মহল থেকেই। বিদায়ী বছরে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর কাজের অগ্রগতি সবচেয়ে বেশি। প্রায় ৪০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে মেগা এই প্রকল্পের। নতুন বছরের শুরুতে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ। কাজ এগিয়ে নিতে ২০১৬ সালে আনুষঙ্গিক অনেক অগ্রগতি হয়েছে। ছয় ফেজের মেট্রো রেলের কাজের মধ্যে দুটির টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। আশা জেগেছে যানজট নিরসনের গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্প বাস্তবায়নের। বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের অগ্রগতি সন্তোষজনক। নতুন বছরের শুরুতেই নির্মাণ কাজের উদ্বোধনের অপেক্ষা কর্নফুলী টানেলের। ঢাকা-চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে আগ্রহ প্রকাশ করেছে চীন। বিরামহীন কর্মযজ্ঞ পদ্মা বুকে ॥ সলিড ইস্পাতে তৈরি কিউব জোড়া লাগিয়ে তৈরি করা হচ্ছে একেকটি পূর্ণাঙ্গ স্প্যান। স্প্যানগুলোতে প্রথমে রঙের ছোপ লাগানো হচ্ছে। এরপর সিজনড করার জন্য বাইরে খোলা আকাশের নিচে রাখা হবে। শুকানোর পর তা বসানো হবে সেতুর কাঠামো হিসেবে। যা দৈর্ঘ্যে ১৫০ মিটার। আর উচ্চতা প্রায় ৪০ ফুট। প্রস্থে আরও বেশি। নদীর বুকে পোঁতা পিলারগুলোর ওপর এমন ৪১টি স্প্যানকে ঘিরেই দেখা দেবে মূল সেতুটি। এসব স্প্যানের ‘বাক্সের’ ভেতর দিয়ে চলবে ট্রেন আর ওপরে বসানো কংক্রিটের সড়কে চলবে গাড়ি। নির্মাণসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আশা করছেন, আগামী মাস থেকে এসব স্প্যান স্থাপনের কাজ শুরু করা যাবে। এভাবেই নদীর পেট ফুঁড়ে পানির উপরে মাথা জাগাবে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এরই মধ্যে সেতুর সার্বিক কাজ শেষ হয়েছে প্রায় ৪০ ভাগ। পিলারের পাইলিংয়ের কাজ ৬৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। সব মিলিয়ে আগামী বছরের মধ্যে কাজ শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে পদ্মার বুকে এখন রাত দিনের কর্মযজ্ঞ। শনিবার সেতুর অগ্রগতি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের নিয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বিকেল থেকে শুরু হওয়া বৈঠকটি চলে রাত অবধি। এতে সার্বিক বিষয়ে নিয়ে আলোচনা হয়। পাশাপাশি নতুন বছরে কাজের গতি বাড়ানো ও যথাসময়ের কাজ শেষ করার ওপর গুরুত্ব দেয়ার কথা জানা গেছে। মূল সেতুর কাজ ৩৪ ভাগ ও সব মিলিয়ে ৩৯ ভাগ শেষ করার কথা বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়েছে। গত বছরের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামো নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। নিজস্ব অর্থায়নে সেতু তৈরির সম্ভাবনা বাস্তব হয়ে ওঠায় দেশজুড়ে সৃষ্টি হয় বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা। প্রকল্পের মোট ব্যয় ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। ২০০১ সালের ৪ জুলাই এই সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরের আট বছরে এই সেতু নির্মাণে কোন অগ্রগতি হয়নি। ২০০৯ সালে আবারও সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেন। ২০১২ সালে বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির ষড়যন্ত্র হয়েছে এমন অভিযোগ তুলে ১২০ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তি বাতিল করে। ২০১৩ সালের ৪ মে নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেয় সরকার। গত বছরের মার্চে শুরু হয় পাইলিং। প্রকল্প কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চলতি বছরের ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত কাজ হয়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ। এ বছর ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে মূল সেতুর কাজে। গত বছরের ১১ ডিসেম্বর মূল সেতুর ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছিল। চলতি বছরের একই সময়ে কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৩৭ দশমিক ১৭ শতাংশ। অর্জিত হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৯৫ শতাংশ। ডিসেম্বর মাসে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ পরিদর্শন করার পর জানান, সেতু প্রকল্পের প্রায় ৪০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। একটি স্প্যান পুরোপুরি তৈরি হয়েছে। আগামী মাসে তা স্থাপন করা হবে। আরও দুটি স্প্যান জোড়া দেয়ার কাজ চলছে। সেতুর মাওয়া প্রান্তে আগের বছরের মতোই চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। দিন-রাত চলছে কাজ। নির্মাণসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানালেন, চীনের হোবেই প্রদেশের শিংহোয়াওদাও বন্দর সংলগ্ন কারখানায় তৈরি হয় স্প্যানের বিভিন্ন অংশ। এগুলো সমুদ্রপথে আসছে চট্টগ্রামে। এরপর লাইটারেজ জাহাজে মাওয়ায় আনা হয়। কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে (নির্মাণ ছাউনি) গ্রান্ডিং ও ওয়েল্ডিং করে জোড়া লাগানো হয়। প্র্রতিটি স্প্যান ৩৪টি অংশে বিভক্ত। এগুলোর একেকটির ওজন ৭-৮ টন। এ অংশগুলোই জোড়া দেয়ার পর ‘স্টিল ট্রাসে’র অবয়ব প্রায়। পদ্মা সেতু প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান আবদুল কাদের বলেন, সেতুর জন্য মোট ৪১ স্টিল ট্রাস তৈরি করতে হবে। দেখতে একই রকম হলেও এগুলোর একটি থেকে আরেকটি আকারে বা আয়তনে ভিন্ন। চীন থেকে আনা স্প্যানগুলো জোড়া লাগানো হচ্ছে মূল সেতুর ঠিকাদার চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশনের (এমবিইসি) কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে। সেতুর ৪২ পিলারের ওপর থাকবে ৪১ স্প্যান। একটি আরেকটির সঙ্গে সংযুক্ত হবে শক্তিশালী তারের জোড়ার মাধ্যমে। এর ভেতর বসবে রেললাইন। ওপরে থাকবে ‘কংক্রিট সেগমেন্ট’। দুই মিটার প্রস্থের প্রায় তিন হাজার কংক্রিট সেগমেন্ট একটির সঙ্গে আরেকটি যুক্ত করে তৈরি হবে ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু। যে দুটি স্প্যান জোড়া দেয়ার কাজ চলছে সেগুলো বসবে ৩৭-৩৮ এবং ৩৮-৩৯ নম্বর পিলারে। বিশালাকারের এই স্প্যানগুলো তীর থেকে নদীতে নিয়ে যেতে ও পিলারের ওপর বসাতে চীন থেকে তিন হাজার ৬০০ টন ক্ষমতাসম্পন্ন ক্রেন আনা হয়েছে বলে জানালেন নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আবদুল কাদের। সেতু প্রকল্পের কাজ হচ্ছে মোট পাঁচটি প্যাকেজে। দ্বিতীয় প্যাকেজের আওতায় সেতু এলাকায় নদীর দুই তীরে বাঁধ দেয়া হচ্ছে। এ বাঁধই টিকিয়ে রাখবে সেতুটিকে। তবে নদীশাসনের কাজ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। অথচ কাজ শেষ হয়েছে ২৫ দশমিক ৯৪ শতাংশ। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার ৭৩ দশমিক ৩৮ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। আট হাজার ৭০৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা ব্যয়ে মাওয়া-জাজিরা দুই প্রান্তে ১২ কিলোমিটার নদীশাসনের কাজ করছে চীনা প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো। এ জন্য সাড়ে সাত কোটি ব্লক তৈরি করা হবে। এগুলো দিয়ে নদী তীর বাঁধাই করা হবে। এদিকে মাওয়া প্রান্তে সংযোগ সড়ক (সংযোগ সড়ক-২) এবং সার্ভিস এরিয়ার কাজ প্রায় শতভাগ শেষ। জাজিরা প্রান্তে সংযোগ সড়কের কাজ শেষ হয়েছে প্রায় ৮৫ ভাগ। সংযোগ সড়কের কাজ করছে আবদুল মোনেম ও মালয়েশিয়ান প্রতিষ্ঠান এইচসিএম কনস্ট্রাকশন। জাজিরা প্রান্তে ১২ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, কাক্সিক্ষত গতিতেই এগোচ্ছে নির্মাণকাজ। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মধ্যে কাজ শেষ হবে- এ লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।’ প্রকৌশলীরা জানান, সেতুর মোট ৪২ পিলারের মধ্যে পানিতে থাকবে ৪০টি। ডাঙায় সংযোগ সড়কের সঙ্গে সেতুকে যুক্ত করতে বাকি দুটি পিলার নির্মাণ হবে। একটি পিলার থেকে আরেকটির দূরত্ব হবে ১৫০ মিটার। ছয়টি মডিউলে বিভক্ত থাকবে সেতু। মাওয়া প্রান্তে এক হাজার ৪৭৮ মিটার ভায়াডাক্ট (ঝুলন্ত পথ) থাকবে। জাজিরা প্রান্তে ঝুলন্দ পথ থাকবে এক হাজার ৬৭০ মিটার। এই ঝুলন্ত পথগুলো সেতুকে এ্যাপ্রোচ রোডের (সংযোগ সড়ক) সঙ্গে যুক্ত করবে। প্রায় তিন দশমিক ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ভায়াডাক্টে থাকবে ৮১ পিলার। রেললাইনের জন্য দুই প্রান্তে ৫৩২ মিটার ভায়াডাক্ট নির্মাণ করা হবে ১৪টি পিলারের ওপর। সেতুতে গ্যাস সরবরাহের জন্য থাকবে ৩০ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপ। ছয় ইঞ্চি ব্যাসের পাইপ বসবে অপটিক্যাল ফাইবার ও টেলিযোগাযোগ লাইন স্থাপনের জন্য। উচ্চ ভোল্টেজের বিদ্যুত সঞ্চালন লাইনও থাকবে এতে। সেতুর প্রকল্প পরিচালক মোঃ সফিকুর রহমান আরও জানান, টেকনিক্যাল কারণেই কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিলম্ব হচ্ছে বলে জানালেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, এই বিলম্বের জন্য কোন ব্যক্তিকে দায়ী করা যাবে না। কর্ণফুলী টানেল ॥ ডিসেম্বরে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে দেশের প্রথম টানেলের নির্মাণকাজ শুরুর কথা ছিল। তবে তা হয়নি। কারণ ঋণের টাকা ছাড় সংক্রান্ত প্রক্রিয়া এখনও শেষ হয়নি। ফলে জানুয়ারির শেষ নাগাদ কাজ শুরুর কথা জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক। প্রকল্পে মোট খরচ সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ২ শতাংশ সুদে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ সহায়তা দেবে চীন, সর্বোচ্চ ১৫ বছরের মধ্যে যা পরিশোধ করতে হবে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, ইতোমধ্যে ঋণের শর্ত পূরণ করেছে সরকার। এখন অপেক্ষা চায়না এক্সিম ব্যাংকের ছাড়পত্রের। চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা থেকে আনোয়ারা পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটারের বেশি প্রকল্পের দৈর্ঘ্য। দুই পাশে সংযোগ সড়কসহ সব নির্মাণকাজ শেষ হবে ২০২০ সালের মধ্যে- এমন আশা সরকারের। ৩৯ ফুট থেকে ১১৮ ফুট গভীরতার দুই টিউববিশিষ্ট এ টানেল হবে দৃষ্টিনন্দিত। মেট্রোরেল ॥ চলতি বছরের ২৬ জুন যোগাযোগ খাতের দুটি বড় প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে একটি মেট্রোরেল অপরটি বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি)। মেট্রোরেলে উত্তরা থেকে মতিঝিল ২০ কিলোমিটার পথে সময় লাগবে মাত্র ৩৮ মিনিট। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের ঘোষণা দিয়ে বলেন, প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের মেলবন্ধনের বাংলাদেশ গড়তে কাজ করছে সরকার। প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, মেট্রোরেলের ১৬টি স্টেশন থাকবে। সব ইলেক্ট্রনিক সিস্টেম হবে। ট্রেনে ওঠানামা দ্রুত হবে। কারও জন্য অপেক্ষা করা যাবে না। এ প্রকল্পের আওতায় মোট ২৮ জোড়া মেট্রোরেল চলাচল করবে রাজধানীতে। রাস্তার মাঝ বরাবর উপর দিয়ে উত্তরা থেকে শুরু হয়ে মিরপুর-ফার্মগেট হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত যাবে এ মেট্রোরেল। সময় লাগবে ৪০ মিনিটেরও কম। প্রতি চার মিনিট পরপর এক হাজার ৮০০ যাত্রী নিয়ে ছুটে চলবে এ রেল। ঘণ্টায় চলাচল করবে প্রায় ৬০ হাজার যাত্রী। মেট্রোরেলের ১৬টি স্টেশন হবেÑ উত্তরা (উত্তর), উত্তরা (সেন্টার), উত্তরা (দক্ষিণ), পল্লবী, মিরপুর ১১, মিরপুর-১০ নম্বর, কাজীপাড়া, তালতলা, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, সোনারগাঁও, জাতীয় জাদুঘর, দোয়েল চত্বর, জাতীয় স্টেডিয়াম এবং বাংলাদেশ ব্যাংক এলাকায়। মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা লাগবে, যার ১৬ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা দেবে জাপানের আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা জাইকা। বাকি ৫ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা যোগাবে সরকার। বিআরটি ॥ ঢাকা মহানগরীর যাতায়াত সহজতর করতে সরকার বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট বা বিআরটি চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সংরক্ষিত আলাদা লেনের মাধ্যমে উভয় দিকে প্রতি ঘণ্টায় ২৫ হাজার যাত্রী পারাপার করা যাবে। প্রতি তিন মিনিট পরপর স্টেশন থেকে বাস ছাড়বে। এ প্রকল্প হচ্ছে গাজীপুর টার্মিনাল থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত। ২০ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ বিআরটি রুটে থাকবে ২৫টি স্টেশন। নির্মাণ করা হবে ৬টি ফ্লাইওভার। উত্তরা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত সাড়ে ৪ কিলোমিটার থাকবে এলিভেটেড বিআরটি লেন। ১৬ কিলোমিটার থাকবে সমতল বা এট গ্রেড। ১৮ মিটার দীর্ঘ ১২০টি আর্টিকুলেটেড বাস চলাচল করবে এ পথে। বাসগুলোয় ভাড়া আদায়ে থাকবে ইলেক্ট্রনিক স্মার্টকার্ড। এ প্রকল্পে মোট ব্যয় হবে প্রায় দুই হাজার ৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রকল্প সহায়তা পাওয়া যাবে এক হাজার ৬শ’ ৫১ কোটি টাকা। সরকারের পাশাপাশি প্রকল্পে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, ফরাসী উন্নয়ন সংস্থা, গ্লোবাল এনভায়রনমেন্টাল ফ্যাসিলিটি ফান্ড অর্থায়ন করছে। আগামী বছরের ডিসেম্বর নাগাদ বিআরটি চালু হবে বলেও জানা গেছে। এছাড়া কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত আরেকটি বিআরটি লাইন করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ॥ ২০১৮ সালের মধ্যেই রাজধানীতে উড়াল সড়ক (এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে) দিয়ে গাড়ি চলতে পারবে এমন আশা নিয়ে ২০১৫ সালের ১৭ আগস্ট প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। নগরবাসীর যানজটের ভোগান্তি লাঘবেই সরকার ১২ হাজার ২শ’ কোটি টাকা (সংশোধিত প্রকল্প) ব্যয়ে রাজধানীর সড়ক, বিশেষ করে রেললাইনগুলোর উপর দিয়ে এ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা বলছেন, ২০১৮ সালের মধ্যে এ উড়াল সড়কটি ব্যবহার করা যাবে। চারটি লেন অতিরিক্ত থাকবে। ফলে যানজটের কবল থেকে রেহাই পাবেন জনগণ। ২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটির রুট নির্ধারিত হয়েছে রাজধানীর বিমানবন্দর থেকে কুড়িল-বনানী-মহাখালী-তেজগাঁও-সাতরাস্তা-মগবাজার রেল করিডর-খিলগাঁও-কমলাপুর-গোলাপবাগ এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত। শনিবার এক অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, নতুন বছরের শুরুর দিকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও চার লেনের কাজ শুরু করা হবে। ঢাকা চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ॥ ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেনের মহাসড়কের পাশে আরেকটি এক্সপ্রেসওয়ে বা নতুন সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ এক্সপ্রেসওয়েতে প্রতি ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার বেগে গাড়ি চলবে। আড়াই ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে পৌঁছানো সম্ভব হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। সম্প্রতি এক মতবিনিময় সভায় প্রকল্প পরিচালক শিরির কান্তি রাউত বলেন, পুরো সড়কটির চট্টগ্রাম-ফেনী ও দাউদকান্দি-ঢাকা অংশে কোথাও মাটির ওপর আবার কোথাও উড়াল সড়ক তৈরি করা হবে। ফেনী ও দাউদকান্দির অংশে কেবল মাটির ওপর সড়ক তৈরির পরিকল্পনা আছে। পুরো সড়কটি উড়াল হলে বাস্তবায়নে ৬৭ হাজার ২৫২ কোটি টাকা এবং আংশিক উড়াল ও মাটিতে হলে ২৬ হাজার ৫৮৮ কোটি টাকা খরচ হবে। আর প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সময় লাগবে চার বছর। তিনি জানান, ২০২০ সালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানবাহনের চাপ সামলাতে চার লেনের পাশে ২২৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে নতুন সড়কটি নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। বিদায়ী বছরের নবেম্বরে প্রস্তাবিত এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে চীন আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এক অনুষ্ঠানে সেতুমন্ত্রী বলেন, ছয় লেনবিশিষ্ট ঢাকা-চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ২২৫ কিলোমিটার। চীন সরকার এ ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে। কাজটি করতে ব্যয় হবে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা।
×