ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনীর প্রথম ত্রিবার্ষিক সম্মেলন

তরুণ প্রজন্মকে সঠিক ইতিহাস জানাতে হবে ॥ সংস্কৃতিমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৬

তরুণ প্রজন্মকে সঠিক ইতিহাস জানাতে হবে ॥ সংস্কৃতিমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেছেন, বাংলাদেশে অসাম্প্রদায়িক ও গণমুখী ইতিহাস চর্চার ধারা ক্ষীণ। অথচ মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনাই ছিল অসাম্প্রদায়িকতা ও গণমুখিতা। দেশে যেসব একাডেমিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেখানেও ইতিহাস চর্চায় এ দুটি উপাদানের অভাব খানিকটা রয়েছে। শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে সংস্কৃতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনী তাদের প্রথম ত্রিবার্ষিক সম্মিলন উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনীর সভাপতি অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মেসবাহ কামাল। পরে টিএসসির বিভিন্ন কক্ষে সাহিত্য, উন্নয়ন ও তথ্যপ্রযুক্তি, সমাজ ও সংস্কৃতি, মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশ ও বহির্বিশ্ব এবং প্রতিষ্ঠান ও সংরক্ষণ শিরোনামে আলাদা অধিবেশন হয়। জানা গেছে, দিনব্যাপী ছয়টি অধিবেশনে এ সংক্রান্ত ৪০টির বেশি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। ইতিহাস সম্মিলনীর সদস্য, বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস অনুরাগী শিক্ষক, গবেষক ও লেখক দিনব্যাপী এই সম্মিলনে অংশগ্রহণ করেন। এর আগে সম্মিলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, পাকিস্তানী ঔপনিবেশিক শাসনের বিভিন্ন ধরন আমাদের মনোজগৎ থেকে সম্পূর্ণ বিতাড়িত হয়নি। কিছু রাজনৈতিক দলের দৃষ্টিভঙ্গি ও কর্মকা-ে আমরা সেই ঔপনিবেশিক শাসনের চিহ্ন দেখতে পাই। এটি আশঙ্কা হয়ে দেখা দিয়েছে। মন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর কোথাও কোন রাজনৈতিক দল মানবতাবিরোধী অপরাধ বা যুদ্ধাপরাধ সমর্থন করেনি। এমন উদাহরণ পৃথিবীর অন্য কোন দেশেই পাওয়া যাবে না। কিন্তু এ দেশে করেছে। তিনি আরও বলেন, তারা ইতিহাস বিকৃত করেছে, যা অপরাধ। সঠিক ইতিহাস না পড়ানো এবং তা চর্চা না করার কারণেও এটা তারা করতে পেরেছে। এক্ষেত্রে সরকারের দায়িত্ব অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু ইতিহাসবিদদেরও দায়িত্ব রয়েছে। তরুণ প্রজন্মকে বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাস জানাতে হবে। ইতিহাস না জানলে ভবিষ্যতের পথরেখা নির্দেশ করা দুরূহ হবে। নূর বলেন, ইতিহাস নিরপেক্ষ হয় কিনা, সেটা নির্ণয় করবেন ঐতিহাসিকগণ। আমার মনে হয়, যদি নিরপেক্ষ হতো তবে ইতিহাস সম্মিলনীর অসাম্প্রদায়িক ও গণমুখী ইতিহাস চর্চার সেøাগানের প্রয়োজন হতো না। সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ নীতি’ থেকে দূরে সরে আসায় সমাজের প্রতিটি স্তরে সাম্প্রদায়িকতা ঢুকে পড়েছে। এখন মানুষের মানস গঠনেও সাম্প্রদায়িক ভাবনা কাজ করে। রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার বাড়ছে বিপজ্জনকভাবে। এর বিরুদ্ধে এখনই সজাগ হতে হবে। যারা ডেমোক্র্যাট, লিবারেল তারা ধর্মীয় জঙ্গীবাদের উত্থানকে ধর্ম দিয়ে অনেক সময় প্রতিরোধ করতে চায়। কিন্তু সেটা এক পর্যায়ে বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। সে কারণে রাষ্ট্র থেকে ধর্মকে পৃথক করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। স্বাগত বক্তব্যে অধ্যাপক মেসবাহ কামাল বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসকে দূরে ঠেলে দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ইতিহাসের বিকৃতি ঘটানো হয়েছে। ইতিহাসকে যোগ্য জায়গায় প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ লালন, রবীন্দ্রনাথ, নজরুলের অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাস করে। এই অসাম্প্রদায়িক চেতনা লালন করতে হবে।
×