ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

সামাল দিতে প্রশাসন বিপাকে

কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ভিক্ষুকের সংখ্যা বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৪:০১, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৬

কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ভিক্ষুকের সংখ্যা বাড়ছে

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার থেকে ॥ মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা ভিক্ষুকের সংখ্যা বেড়ে গেছে কক্সবাজারে। এসব রোহিঙ্গা ভিক্ষুক নারী-পুরুষ ও শিশুর কারণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে স্থানীয় বাসিন্দা ও দেশ-বিদেশের পর্যটকরা। এতে বিদেশী পর্যটকদের কাছে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। সৈকত এলাকা ছাড়াও বার্মিজ মার্কেটসহ নামীদামী শফিং সেন্টারগুলোর সামনে রোহিঙ্গা ভিক্ষুকদের দেখে বিরক্ত বোধ করছেন পর্যটকরা। বিশেষ করে শুক্রবার জুমার নামাজের পর প্রতিটি মসজিদের সামনে লাইন ধরে হাত পাতছে অসংখ্য রোহিঙ্গা ভিক্ষুক। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, গত নবেম্বর থেকে কক্সবাজার জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে রোহিঙ্গা ভিক্ষুকের সংখ্যা বেড়েছে। ৯ অক্টোবর রাখাইনের মংডুর কাইয়ারবিলে পুলিশের তিনটি নিরাপত্তা চৌকিতে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। পরে দেশটির সেনাবাহিনী অপরাধীদের ধরতে শুদ্ধি অভিযান চালায়। বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপের (আরএসও) সদস্যরা রোহিঙ্গা মুসলমান হওয়ায় সেনা ও পুলিশ সেখানে কয়েকটি পাড়ার রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন শুরু করে। এতে দেশত্যাগ করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে মিয়ানমারের গরিব রোহিঙ্গা পরিবারগুলো। টেকনাফ ও উখিয়ার দুটি শরণার্থী ক্যাম্প, একাধিক বস্তি ও জেলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার চাপ ও নতুন করে আসা প্রায় ৩০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা নিয়ে প্রশাসনও বিব্রত অবস্থায় রয়েছে। অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা যত্রতত্র ঝুপড়ি তৈরি করে বসবাস ও মলত্যাগ করায় সড়কে যান চলাচলে বিঘœ ও বিভিন্ন রোগসহ নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। জানা যায়, নিবন্ধিত দুটি আশ্রয় শিবিরে প্রায় ৩২ হাজার শরণার্থীকে সরকার ও এনজিও সংস্থা সহায়তা দিয়ে আসছে ২৫ বছর ধরে। স্থানীয়রা জানান, রোহিঙ্গাদের সরকারীভাবে সাহায্য দিলেও বাড়তি রোজগারের জন্য তারা ক্যাম্প ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে, যেটি তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। কেউ কেউ সস্তায় দিনমজুর, ফিশিং ট্রলার, হোটেল, রেস্তরাঁ, বিভিন্ন যানবাহনে ও বাসাবাড়িতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি ভিক্ষা করে। অনেকে আবার জড়িয়ে পড়ছে অপরাধমূলক কর্মকা-ে। শুক্রবার শহরের লালদীঘির পাড় এলাকায় ভিক্ষা করছিলেন অনুপ্রবেশকারী মংডুর গৌজিবিলের বৃদ্ধ আবুল হাসেম। সঙ্গে রয়েছে তার নাতি শিশু রহিম উল্লাহ। নতুন করে পালিয়ে আসা ৫৫ বছরের বৃদ্ধ আবুল হাসেম জানান, তার বাড়ি মিয়ানমারের মংডুর গৌজিবিল গ্রামে। সেখানে একমাত্র পুত্রকে ধরে নিয়ে গেছে দেশটির সেনাবাহিনী। পুত্রবধূ হাফছা বেগম ও তিন নাতিকে নিয়ে ২০ দিন আগে টেকনাফের হোয়াইকং সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ করে ঠাঁই নেন উখিয়ার কুতুপালং বস্তিতে। পালিয়ে আসার সময় হাতে যা ছিল, তন্মধ্যে পথের খরচ ও দালালকে দিতে খরচ হয়েছে দুই হাজার টাকা। পুত্রবধূর কোমরে ছিল প্রায় তিন হাজারের মতো টাকা। তাও বস্তিতে বসে বসে খেয়ে শেষ হয়ে যায়। সপ্তাহখানেক আগে রাতে ক্যাম্পে অপরিচিত দুজন লোকের দেয়া দুই হাজার নগদ টাকা পেয়েছিলাম। আর কোন সাহায্য ভাগ্যে জুটছে না দেখে ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়ি। শহরে আগে থেকে ভাড়া বাসায় বসবাসকারী স্বজনের কাছে আশ্রয় নেয়া ষাটোর্ধ রোহিঙ্গা আলী আকবর বলেন, আমার কোন পুত-পিতা (পিতা-পুত্র) নেই। বৃদ্ধ স্ত্রীকে নিয়ে এক মাস আগে শহরে এসেছি। স্বজনরা কয়েকদিন পেট ভরে খাবার দিয়েছে। বর্তমানে তাদেরও অবস্থা ভাল নয়। এজন্য ক্ষুধার জ্বালায় ভিক্ষা করতে বেরিয়ে পড়েছি। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের কেউ কেউ যেখানে-সেখানে ঝুপড়ি তৈরি করে বসবাস ও অনেকে শহরে চলে গেছে। আওয়ামী লীগ নেতা এ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম জনকণ্ঠকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যেখানে নিজেদের টাকায় দেশের ৯০ ভাগ উন্নয়ন কর্মকা- সম্পন্ন হচ্ছে, নিজের পায়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াচ্ছে দেশ। সেখানে বিদেশী পর্যটকরা ওসব রোহিঙ্গা ভিক্ষুককে হয়ত এ দেশের বাসিন্দা বলে মনে করতে পারেন।
×