ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

ইটভাঁটির দূষণে মরছে গাছ ॥ বাড়ছে রোগব্যাধি

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৬

ইটভাঁটির দূষণে মরছে গাছ ॥ বাড়ছে রোগব্যাধি

স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম ॥ অবৈধ ইটভাঁটির ছড়া-ছড়ি। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা, ব্যক্তি মালিকানাধীন মূল্যবান গাছের বাগান এবং আবাদি জমিতে যত্রতত্র গড়ে উঠা এসব অবৈধ ভাঁটির কারণে পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে কুড়িগ্রাম জেলা। নাগেশ^র উপজেলার ভিতরবন্দ ইউনিয়নের ভাঙ্গামোড় এলাকায় আনিছুর রহমান সরকার অনুমোদন ছাড়াই চালাচ্ছেন ‘এএমডি ব্রিকস’ নামে একটি ভাঁটি। নেই জেলা প্রশাসনের লাইসেন্স এবং বাধ্যতামূলক পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র। ভাঁটি স্থাপনে মানা হয়নি সরকারী কোন বিধি-বিধান। তিন ফসলি জমিতে স্থাপিত এ ভাঁটির চারদিকে ঘন বসতবাড়ি, হাজার হাজার গাছপালা। অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এসব ইটভাঁটির ব্যবসা চলছে প্রায় কোটি টাকার উৎকোচ বাণিজ্যের জোরে। জানা যায়, জেলায় কাগজ কলমে পরিবেশ অধিদফতরের অনুমোদিত এবং জেলা প্রশাসকের লাইসেন্সপ্রাপ্ত ভাঁটি মাত্র ২৬টি। নতুন আবেদনকৃত ১৭টি ইটভাঁটি লাইসেন্স না পেলেও ইট পোড়ানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এদের একটিরও পরিবেশ ছাড়পত্র নেই। অনেক ভাঁটিতে এখনও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর চিমনি ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে বেসরকারী হিসেবে জেলায় ভাঁটির সংখ্যা ৬০টি। যার অধিকাংশই অবৈধ। লাইসেন্স নেই এবং আবেদনও করেননি লুৎফর রহমান রনির ডিকে ব্রিকস, রাজারহাট ও সাহিদুর রহমান এস এ ব্রিকস। এ রকম কমপক্ষে আরও ১০টি ইট ভাঁটি আইন-কানুনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে চালু রয়েছে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে। ফলে সরকার হারাচ্ছে মোটা অঙ্কের রাজস্ব। এ সুযোগে পকেট ভারি করছেন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা- কর্মচারীরা। আবুল হোসেন ও মোহাম্মদ আলী জানান, শ্বাস কষ্ট,হাঁপানিসহ নানা রোগ দেখা দিয়েছে। শিশু, বৃদ্ধ, নারী কেউ নিস্তার পাচ্ছে না এর হাত থেকে। আবু বক্কর সিদ্দিক একই সুরে বলেন, তিন ফসলি এ জমিগুলোতে এখন আর আগের মতো আবাদ হয় না। ফলে খাদ্য সঙ্কটে পড়েছেন তারা। এ ব্যাপারে তারা জেলা প্রশাসক, উপ-পরিচালক পরিবেশ অধিদফতর, মহাপরিচালক পরিবেশ অধিদফতর এবং সচিব বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় বরাবর অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাননি। এলাকাবাসী নুরনবী, মফিজল ও আব্দুল করিম জানান, বিষাক্ত ধোঁয়ার কারণে এলাকার বেশিরভাগ ফলদ ও বনজ গাছ মরে যাচ্ছে। যেগুলো বেঁচে আছে তা খর্বকায়, চিকন এবং পাতা হলুদবর্ণ ধারণ করেছে। জমিতে ফসল হচ্ছে না ভাল, ধানে চিটা হচ্ছে বেশি, বোরো চাষে পানি ও সার লাগছে বেশি। আম, কাঁঠাল, লিচু, পেয়ারা, বরই, নারকেল, সুপারিসহ কোন ফলফলাদি এবং রবিশস্য ঠিকমতো হচ্ছে না। শিশু-বৃদ্ধসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ চর্মরোগ, শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, যক্ষ্মাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রফিকুল ইসলাম সেলিম জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৬টি ইটভঁটির লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। আর ১৭টি ইটভঁটির আবেদন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও পরিবেশ ছাড়পত্র থাকলে সরেজমিন তদন্ত করে লাইসেন্স দেয়া হবে।
×