‘জাতীয় ওষুধনীতি-২০১৬’ সোমবার অনুমোদন পেয়েছে মন্ত্রিসভার। দেশে প্রথম ওষুধনীতি হয়েছিল ১৯৮২ সালে, সামরিক শাসনামলে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১১ সালে ওষুধনীতি যুগোপযোগী করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। এরই পরিণতি বর্তমান ওষুধনীতি। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রতিটি দেশকে অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকা করতে বলে। এসব ওষুধের দামও নির্ধারণ করে থাকে সরকার। নতুন ওষুধনীতিতে ২৮৫টি ওষুধকে তালিকার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে ৩৯টি ছাড়া সব ওষুধ কিনতে হবে ব্যবস্থাপত্র দেখিয়ে। প্রেসক্রিপশন ছাড়া কোন এ্যান্টিবায়োটিক কেনা বা বিক্রি করা যাবে না। নকল, ভেজাল, নিম্নমানের ওষুধ সর্বোপরি মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ তৈরি, মজুত ও বিক্রি শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। ওষুধের দাম বেশি নিলেও শাস্তির বিধান থাকবে। সর্বোপরি এসব বন্ধে জাতীয় ওষুধ নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ গঠন করবে সরকার। এর পাশাপাশি ইউনানী, আয়ুর্বেদিক ও হোমিওপ্যাথি ওষুধকে প্রথমবারের মতো আনা হয়েছে ওষুধনীতির আওতায়। ৬৯৩টি ওষুধকে অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এই খাতে। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে বিতর্ক থাকতে পারে। আধুনিক চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপত্রের পাশাপাশি হোমিওপ্যাথি, আয়ুর্বেদিক ও ইউনানী চিকিৎসা পদ্ধতি যে প্রচলিত আছে এবং চলে আসছে দীর্ঘদিন থেকে তা অস্বীকার করা যাবে না। তবে এসব ওষুধের মান ও দাম নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে কঠোর হতে হবে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। যুক্তরাষ্ট্রের এফডিএ-র আদলে গড়ে তুলতে হবে জাতীয় ওষুধ নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষকে। সর্বোপরি নীতিমালা বাস্তবায়নসহ সুফল পেতে হলে প্রণয়ন করতে হবে যুগোপযোগী আইন।
বর্তমানে ওষুধের দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। জীবনরক্ষাকারী ওষুধ দিন দিন দুর্লভ ও দুর্মূল্য হয়ে উঠেছে। সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে ভিটামিনস, ক্যালসিয়াম ও গ্যাস্ট্রিকের ওষুধের। সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে তো বটেই, এমনকি মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তরাও আজকাল ওষুধ কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন। গত বছরে কয়েকটি নামী-দামী গ্রুপের দুই শতাধিক ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছে দফায় দফায়। এক্ষেত্রে মূল্যবৃদ্ধির ঘটনা ঘটেছে ১০ থেকে প্রায় ৩শ’ শতাংশ পর্যন্ত। এ অভিযোগ পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের। তাদের মতে, দাম বাড়ানোর আগে বাজারে ওষুধ সরবরাহ কমিয়ে দিয়ে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে কোম্পানিগুলো। এক্ষেত্রে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েই জিম্মি হয়ে পড়ে তাদের নিকট। আরও অভিযোগ আছে, ওষুধ কোম্পানিগুলো সংশ্লিষ্ট সরকারী কর্তৃপক্ষ তথা ওষুধ প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করেই তা করে থাকে।
বাংলাদেশ উন্নয়ন ও অগ্রগতির ক্ষেত্রে যে কয়েকটি খাত নিয়ে গর্ববোধ করতে পারে ওষুধশিল্প তার অন্যতম। বর্তমানে এ শিল্প খাতটি প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে চলেছে। অভ্যন্তরীণ চাহিদার প্রায় ৯৭ শতাংশ ওষুধ উৎপাদিত হয় দেশেই। আরও যা শ্লাঘার বিষয় তা হলো, বিশ্বের ১২২টি দেশে বাংলাদেশে উৎপাদিত ওষুধ রফতানিও হচ্ছে। তবে এ কথাও সত্য যে, কয়েকটি নামী-দামী ওষুধ কোম্পানির পাশাপাশি কিছু অখ্যাত কোম্পাানিও আছে, যারা তৈরি করছে মানহীন ওষুধ।
মূলত এসব হয়েছে ওষুধের দাম বাড়ার কারণেই। এসব প্রতিরোধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরকে কঠোর ভূমিকা নিতে হবে। নতুন ওষুধনীতি এসব বাস্তবায়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলেই প্রত্যাশা।