ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

নাসিক নির্বাচন

২৭ ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থী ১৫৬

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২০ ডিসেম্বর ২০১৬

২৭ ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থী ১৫৬

স্টাফ রিপোর্টার/ নিজস্ব সংবাদদাতা, না’গঞ্জ থেকে ॥ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১ নম্বর ওয়ার্ড। ওই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থী ছয় আর বিএনপির দুজন। দুই নম্বর ওয়ার্ডেও অভিন্ন। এই ওয়ার্ডের ৯ কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে বিএনপির দুজনের বিপরীতে আওয়ামী লীগের ছয়। শুধু এ দুই ওয়ার্ডই নয়, ২৭ সাধারণ ওয়ার্ডে একই চিত্র। কাউন্সিলর পদে কোন দলই একক প্রার্থী দিতে পারেনি। কাউন্সিলর পদে একক প্রার্থী ঠিক করতে না পারায় অস্বস্তিতে দুই দলের সমর্থকরা। অন্যদিকে জেলা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা বলছেন, কাউন্সিলর নিয়ে তারা ভাবছেন না। মেয়রই মুখ্য বিষয়। এবার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ২৭টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে লড়ছেন ১৫৬ জন। সংরক্ষিত ৯টি ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন ৩৮ জন। স্থানীয় সূত্র জানায়, দুই দলই কাউন্সিলর পদে একক প্রার্থী ঠিক করতে একাধিকবার বৈঠক করেছে। বৈঠকের পরও কোন কিনারা করতে না পারায় লাগামহীনভাবেই ছেড়ে দিয়েছেন কাউন্সিলর পদ। এ বিষয়ে ৬ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী নেতা ও কাউন্সিলর প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম ম-ল জনকণ্ঠকে বলেন, এ আমাদের ওয়ার্ডে মতিউর রহমান মতিসহ দুই প্রার্থীই আওয়ামী লীগের লোক। তবে আওয়ামী লীগ এখনও কাউকে সমর্থন দেয়নি। সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের আহ্বায়ক মতিউর রহমান মতির সঙ্গে একাধিকবার কল করলেও তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। ৩ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের দুই সমর্থক কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছে। এরা হলেন- ৩ নম্বর ওয়ার্ডের যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক তোফায়েল হোসেন জনকণ্ঠকে জানান, আমাদের দুজনের মধ্যে কাউকে আওয়ামী লীগ সমর্থন দেয়নি। অন্য প্রার্থীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মহানগর ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন ও বিএনপি উজ্জ্বল হোসেন একই ওয়ার্ডের কাউন্সলর প্রার্থী হয়েছে। এ বিষয়ে দেলোয়ার হোসেন খোকন জানান, দল থেকে কাউকে সমর্থন দেয়নি। তবে অধিকাংশ বিএনপির নেতাকর্মীরা আমার সঙ্গে আছে। অন্য প্রার্থীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। ২৭ সাধারণ ওয়ার্ডের প্রার্থী যারা ॥ কাউন্সিলর পদে ১ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ নেতা আবদুর রহিম, যুবলীগ নেতা হাজী ওমর ফারুক, আওয়ামী লীগ নেতা হাজী আনোয়ার ইসলাম, হাজী ইউনুছ মিয়া, জাহিদুল ইসলাম ও কামাল হোসেন খন্দকার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই ওয়ার্ডে বিএনপি নেতা সিরাজুল ইসলাম ও রওশন আলী কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। ২ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থক প্রার্থীরা হচ্ছেনÑ সেলিনা ইসলাম বিউটি (নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামের স্ত্রী), আব্দুল হাকিম, আব্দুর রহিম মিয়া, মোঃ সুজন কাজী, মোঃ ইসমাইল, মাসুদ রানা। এই ওয়ার্ডে বিএনপির সমর্থক প্রার্থীরা হচ্ছেনÑ ইকবাল হোসেন (দলিল লেখক), মোঃ ইকবাল। এই ওয়ার্ডের আরেক প্রার্থী সোহ্্রাব হোসেন। ৩ নম্বর ওয়ার্ডে যুবলীগ নেতা তোফায়েল হোসেন ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক শাহজালাল বাদল কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। এই ওয়ার্ডে বিএনপির একক প্রার্থী মোঃ আলমগীর। ৪ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী ছয় জন। এর মধ্যে মোঃ আরিফুল হক হাসান, মোঃ নজরুল ইসলাম, এর আর রাসেল, মোঃ ফয়সাল নেওয়াজ রানা, মোঃ লোকমান হোসেন আওয়ামী লীগের সমর্থক। এই ওয়ার্ডে বিএনপির একক প্রার্থী সুমন মাহমুদ। ৫ নম্বর ওয়ার্ডে হাজী মোঃ শফিকুল ইসলাম বাবুল, মোঃ আনিসুর রহমান ও মোঃ নজরুল ইসলাম আওয়ামী লীগের সমর্থক। গোলাম মুহাম্মদ সাদরিল ও মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বিএনপির সমর্থক। এছাড়া মোঃ ইমন ও মোঃ ইসমাইল হোসেন এই ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ৬ নম্বর ওয়ার্ডে থানা যুবলীগ আহ্বায়ক মতিউর রহমান মতি, যুবলীগ নেতা মামুনুর রশিদ, আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজুল ইসলাম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই ওয়ার্ডে বিএনপি সমর্থক কোন প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। ৭ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ নেতা আলী হোসেন আলা, রফিকুল ইসলাম বাবু ও মিজানুর রহমান খান কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। এই ওয়ার্ডে বিএনপি নেতা তানভীর কবির, হুমায়ন কবির, আলাউদ্দিন ভূঁইয়া প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ৮ নম্বর ওয়ার্ডে যুবলীগ নেতা মহসীন ভূঁইয়া ও রুহুল আমিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন, বিএনপি নেতা উজ্জ্বল হোসেন, গাজী সেলিম, সাগর প্রধান ছাড়াও এই ওয়ার্ডে আরও তিনজন কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছে। ৯ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপি নেতা ইসরাফিল প্রধান, মহিউদ্দিন শিকদার; আওয়ামী লীগ নেতা সামছুল আলম বাচ্চু, সিরাজুল ইসলাম, সুজন আলী, সেলিম প্রধান, যুবলীগ নেতা বিল্লাল হোসেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ১০ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ নেতা ইফতেখার আলম খোকন, সিরাজ খান, কামরুল হুদা বাবু; বিএনপি নেতা লিয়াকত আলী। ১১ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপি নেতা জমশের আলী ঝন্টু, সাবেক ছাত্রদল সভাপতি অহিদুল ইসলাম ছক্কু এবং আওয়ামী লীগ সমর্থক মোঃ ওমর খৈয়াম (চঞ্চল) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ১২ নম্বর ওয়ার্ডে জিল্লুর রহমান চঞ্চল, মোঃ নাঈম হোসেন, মোহাম্মদ শওকত হাসেম। ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে ফরিদ উদ্দিন আহমেদ রিপন, মাকসুদুল আলম খন্দকার, মোঃ রবিউল হোসেন, মোঃ শাখাওয়াত হোসেন সুমন, শাহ ফয়েজ উল্লাহ। ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে মনিরুজ্জামান মনির, মোঃ শওকত হোসেন, মোঃ শফিউদ্দিন প্রধান, শিশির কুমার চক্রবর্তী। ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে অসিত রবন বিশ্বাস, আজহার হোসেন, আল মামুন খান, জিএম আরমান, মিলন কুমার দাস, মোঃ আনোয়ার হোসেন ভূইয়া কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ নেতা ওবায়েদ উল্লাহ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা নাজমুল আলম সজল। ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে যুবলীগ নেতা আবদুল করিম বাবু, আবদুল কাদিরের ছেলে মিনহাজুল কাদির মিমন। ২০ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ নেতা মোঃ সোহেল করিম রিপন; বিএনপি নেতা জাহাঙ্গীর হোসেন, গোলাম নবী মুরাদ। ২১ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপি নেতা হান্নান সরকার, নূর মোঃ পনেছ; আওয়ামী লীগ নেতা খোরশেদ আলম, আলী আজহার তৌফিক ও ফকির উল্লাহ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ২২ নম্বর ওয়ার্ডে জাপা নেতা শাহ আলম, কাজী শহীদ আহাম্মদ, আজাহারুল ইসলাম ভূঁইয়া; বিএনপির সুলতান আহম্মেদ ভূঁইয়া। ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ নেতা মোঃ হান্নান, সাইফুদ্দিন আহম্মেদ দুলাল, রাহাত মিয়া; বিএনপির আবুল কাউসার আশা, আবদুল হালিম। ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপি আনোয়ারুল আলম রিপন, হাজী মোঃ আলী ও আশিক আহম্মেদ। ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ নেতা সামছুজ্জোহা ও শ্রমিক লীগ নেতা মোজাম্মেল হক এবং ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজুল ইসলাম, আলমগীর মিয়া ও ইমরান চৌধুরী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। অধিকাংশ ওয়ার্ডেই দলের একাধিক কাউন্সিলর প্রার্থীর থাকার বিষয়টি স্বীকার করে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই জনকণ্ঠকে বলেন, মেয়র পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করছি। কাউন্সিলরের প্রার্থীদের ক্ষেত্রে আমরা কোন কিছু করিনি। এ বিষয়ে কেন্দ্রের কোন নির্দেশা নেই। তিনি আরও বলেন, মেয়রের বিষয়ে নির্দেশ আছে। এ বিষয়ে আমরা কিছু বলছি না। ভোটে যে জিতে আসতে পারে সেই আমাদের কাউন্সিলর। এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি এ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার জনকণ্ঠকে বলেন, বিএনপিতে বিদ্রোহী প্রার্থী তেমন নেই। দু-চারটি ওয়ার্ডে থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে যারা আন্দোলনে ভূমিকা পালন করেছেন, জেল-জুলুম-নির্যাতন সহ্য করেছেন, তাদেরই বিএনপি নেতাকর্মীরা ভোট দেবেন। এ বিষয়ে অলিখিত নির্দেশনা দেয়া হবে। আর যারা সরকারের সঙ্গে আঁতাত করেছেন, তাদের প্রত্যাখ্যান করা হবে।
×