ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

জামদানির নক্সার শুদ্ধ পদ্ধতি সংরক্ষণ বিষয়ক সেমিনার

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৬

জামদানির নক্সার শুদ্ধ পদ্ধতি সংরক্ষণ বিষয়ক সেমিনার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নক্সা ও বুননের সমন্বয়ে অনিন্দ্যসুন্দর এক বস্ত্র জামদানি। সে সৌন্দর্যের কারণেই পোশাকটি পেয়েছে বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি। মসলিনের উত্তরসূরি এই বিশেষ ধরনের পোশাকটি নক্সার কারণেই যে কারও নজর কাড়ে। দেশের পাশাপাশি বিশ্ব দরবারেও রয়েছে এ দেশের জামদানির বিশেষ পরিচিতি। ইউনেস্কো জামদানিকে ‘ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ অব হিউম্যানিটি’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। এই কারুশিল্পের সংরক্ষণ, পুনরুজ্জীবন ও কারুশিল্পীদের অনুপ্রাণিত করতে ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদূতের ‘ফান্ড ফর কালচারাল প্রিজারভেশন’-এর পৃষ্ঠপোষকতায় গবেষণা পরিচালিত হচ্ছে। সে গবেষণার অংশ হিসেবে জামদানির নক্সার শুদ্ধ ও প্রচলিত পদ্ধতি সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব তুলে ধরতে অনুষ্ঠিত হলো এ বিষয়ক সেমিনার। রবিবার বিকেলে জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে এ সেমিনারের আয়োজন করে বাংলাদেশ জাতীয় কারুশিল্প পরিষদ। সেমিনারে বক্তারা বলেছেন, বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতির ধারক জামদানিকে টিকিয়ে রাখতে হলে সম্মিলিত উদ্যোগ জরুরী। এর ডিজাইন ও ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখা যেমন জরুরী, তার চেয়ে বেশি জরুরী তাঁতিদের পৃষ্ঠপোষকতা। কারণ ভাল জামদানি তৈরিতে যে সময় লাগে সে তুলনায় টাকা খুব কম পান তাঁতিরা। তাই তাঁতিদের আর্থিক সচ্ছলতা আনার দিকে বেশি নজর দেয়া প্রয়োজন। এর পাশাপাশি তাঁতিদের ভর্তুকি মূল্যে ভালমানের সুতা সরবরাহের দাবিও জানান বক্তারা। সেই সঙ্গে গ্রামীণ নারীরা এই জামদানি বোনার দিকে যাতে এগিয়ে আসে সেজন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ প্রদানের কথাও জানান উদ্যোক্তারা। সেমিনারে জামদানি জিওগ্রাফিক্যাল ইনডিকেশন প্রটেকশন ল’ কার্যকর করা, তাঁতিদের অধিকার রক্ষা করা, চার শতাধিক তাঁতির সাক্ষাতকার নিয়ে জামদানির ঐতিহ্য সংরক্ষণ, গবেষণা ও তা বই আকারে লিপিবদ্ধ করার প্রয়োজনীয়তার কথাও উঠে আসে সেমিনারে। প্রতিটি জামদানি অনন্য, কেননা এ কাজ প্রিন্ট বা কপি করা যায় না। জ্যামিতিক নক্সার এ কাজ ফুটিয়ে তোলা খুব পরিশ্রমের এবং সময়সাপেক্ষ। বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য মসলিনের মতো জামদানিও খুব স্পর্শকাতর। এমনকি শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে বিশেষ পরিবেশ ও পানির লবণাক্ততার পরিমাণটিও এই জামদানির সুতা প্রস্তুতের ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ। যে কোন উপাদান কমবেশি হলে জামদানি সুতার মান ঠিক থাকে না। জামদানির নক্সাও খুব চমকপ্রদ। এসবের ডিজাইনও শত শত বছর ধরে টিকে রযেছে বাংলার ঘরে ঘরে। এসবের নামগুলোও খুব আকর্ষণীয়। বট পাতা বুটি, ইয়ারিং বুটি, আঙ্গুল লতা পাড়, বাঘের পাড় বুটি, গোলাপ ছড় পাড়, ইঞ্চি পাড়-করাত তেছরি। গবেষণায় জামদানির প্রায় ৩৫৯টি ডিজাইন মিলেছে। এর মধ্যে পাড়ের ডিজাইন ৪৫টি, বুটি ৩৩টি, তেছরি ২১টি, জাল ৭টি, ছিটা ৫টি, আঁচল ৭টি, হাইসা ৪টি। জাতীয় জাদুঘরের সহযোগিতায় আয়োজিত এ সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি সচিব আকতারী মমতাজ, জাতীয় জাদুঘরের মহাসচিব ফয়জুল লতিফ চৌধুরী, সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া স্টিফেনস ব্লুম বার্নিকাট। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শিল্পী চন্দ্রশেখর সাহা। আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন শিল্পী নিসার হোসেন ও ডিজাইনার রুবী গজনবী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রকল্প সমন্বয়ক শাহিদ হোসেন শামীম। এছাড়া দুজন তাাঁতিও তাদের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন। তাঁরা হলেন আবুল কাসেম ও আব্দুল জব্বার। মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া স্টিফেনস ব্লুম বার্নিকাট বলেন, বাংলাদেশের ঐতিহাসিক তাঁতশিল্প পৃথিবীজুড়েই বিখ্যাত। এখানকার মসলিন ও জামদানি সমৃদ্ধ ঐতিহ্য বহন করে চলেছে। এটা আশ্চর্যের বিষয় যে, তাঁতশিল্পীরা তাদের স্মৃতির মধ্যে জামদানির নক্সাকে বংশপরম্পরায় বহন করে চলেছেন। এই হাতে বোনা তাঁতশিল্প এখন সঙ্কটের মুখে। সবার মিলিত উদ্যোগে একে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। চন্দ্রশেখর সাহা বলেন, জামদানি গৌরবের স্মারক। একে টিকিয়ে রাখেত বাজার সম্প্রসারণ, তাঁতিদের সঠিক দাম নিশ্চিত করা, ডিজাইন সংরক্ষণসহ সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। রাজধানীর দুই মঞ্চে জোটের বিজয় উৎসব ॥ ‘ঐক্য গড়ো বাংলাদেশ/ সাম্প্রদায়িকতা হবে শেষ’ সেøাগানে ১৩ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সপ্তাহব্যাপী বিজয় উৎসব। রবিবার ছিল এ উৎসবের ষষ্ঠ দিন। এ দিনের উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা ছিল পুরান ঢাকার বাহাদুরশাহ্্ পার্ক মঞ্চ ও উত্তরার রবীন্দ্র সরণির সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক মঞ্চে। আজ সোমবার শেষ হবে সপ্তাহব্যাপী জোটের বিজয় উৎসব। সমাপনী আয়োজনটি অনুষ্ঠিত হবে উত্তরার রবীন্দ্র সরণির সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক মঞ্চে। এতে প্রধান আলোচক থাকবেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ। সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক মঞ্চ উপ-কমিটির আহ্বায়ক মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করবেন জাপানী লেখিকা নওমি ওয়াতানেবা, রতন সিদ্দিকী ও ছফি আহমেদ। সংস্কৃতিসেবীদের আর্থিক সঙ্কটে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি কাদেরের ॥ দেশের সংস্কৃতিসেবীদের আর্থিক সঙ্কট ও সমস্যা দূর করতে ব্যক্তিগতভাবে পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। রবিবার সন্ধ্যায় রবীন্দ্র সরোবরে বিজয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উদ্বোধন করতে গিয়ে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, আমাদের এখানে সংস্কৃতিসেবীদের একটা অনুষ্ঠান করতে গেলে নানামুখী সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। আসলে আমাদের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আর্থিক সঙ্কটটা প্রকট। সংস্কৃতিসেবীরা তাদের প্রতিভার জন্য যেভাবে মূল্যায়ন পাওয়া দরকার, সেটা তারা সেভাবে পাচ্ছেন না। এটাই হলো বাস্তবতা। তিনি বলেন, ‘আমাদের সংস্কৃতিমন্ত্রী তো সংস্কৃতিরই লোক, আপনাদেরই লোক। আমি তাকে অনুরোধ করব বিষয়টিতে নজর দেয়ার জন্য।’ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মেরিনা জাহান। সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল ও মুক্তিযোদ্ধা বিয়ষক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাসের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠানে দেশবরেণ্য শিল্পী বারী সিদ্দিকী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী মনোরঞ্জন ঘোষালসহ অন্য শিল্পীরা গান পরিবেশন ও কবিতা আবৃত্তি করেন। সুদীপ সেনের এরো টেক্সট গ্রন্থের প্রকাশনা ॥ প্রকাশিত হলো কবি সুদীপ সেনের গদ্য-পদ্যের সমন্বয়ে নতুন গ্রন্থ এরো টেক্সট। বইটি প্রকাশ করেছে প্রকাশনা সংস্থা ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড (ইউপিএল)। রবিবার সন্ধ্যায় বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র মিলনায়তনে বইটির প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। মাহবুবুল হক শাকিলের স্মরণসভা ॥ সম্প্রতি প্রয়াত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল। এই পরিচয়ের বাইরে কবি হিসেবে পরিচিত ছিলেন শাকিল। সেই সূত্রে সদ্যা হাস্যোজ্জ্বল এই মানুষটির সঙ্গে সাহিত্য ও শিল্পাঙ্গনের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে ছিল বিশেষ সখ্য। রবিবার মাহবুবুল হক শাকিলের স্মরণসভায় বক্তারা তাকে প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর এক মানুষ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। মানুষকে সহজেই আপন করে নেয়ার কথাও উল্লেখ করেন বক্তারা। বিকেলে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে এ স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলা একাডেমির সহযোগিতায় এ স্মরণানুষ্ঠানের আয়োজন করে জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি। স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। মাহবুবুল হক শাকিলকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি ড. মুহাম্মদ সামাদ, ঢাকা বিশ্ববিদালয়ের ইংরেজী বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ও অধ্যাপক ড. ফকরুল আলম, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ, কবি কাজী রোজি, কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক, কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী, প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব সাইফুজ্জামান শিখর। অনুষ্ঠানে শাকিলের তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ হবে বলে জানান অন্বেষা প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী শাহাদাৎ হোসেন। সভা সঞ্চালনা করেন জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সহ-সভাপতি মাজহারুল ইসলাম। এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া এ অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন ড. মুহাম্মদ সামাদ, ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায় ও জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়। বিএসএমএমইউ সাংস্কৃতিক উৎসবের সমাপনী আজ ॥ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) বার্ষিক সাংস্কৃতিক উৎসব ২০১৬-এর সমাপনী অনুষ্ঠান আজ বেলা সাড়ে ১১টায় এ ব্লকের ২য় তলার অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি। সভাপতিত্ব করবেন বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডাঃ কামরুল হাসান খান। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডাঃ মোঃ শহীদুল্লাহ সিকদার, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডাঃ মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডাঃ এএসএম জাকারিয়া স্বপন, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ মোহাম্মদ আলী আসগর মোড়ল। স্বাগত বক্তব্য রাখবেন সাংস্কৃতিক উৎসবের সমন্বয়ক অধ্যাপক ডাঃ মোঃ হারিসুল হক।
×