ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বিদ্রোহী মুক্ত আলেপ্পো

প্রকাশিত: ০৪:৩০, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৬

বিদ্রোহী মুক্ত আলেপ্পো

অবশেষে কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রচণ্ড সংঘর্ষের পর সিরিয়ার দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ শহর আলেপ্পো আসাদ তথা সরকারী বাহিনীর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে। সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের খবর অনুযায়ী বিদ্রোহীদের শেষ ঘাঁটি আলেপ্পোর পূর্বাঞ্চলও ফাঁকা হয়ে গেছে। বিদ্রোহীরা এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ায় এটি ছিল বিদ্রোহীদের সর্বশেষ শক্তিশালী ঘাঁটি। ফলে সেখানকার সশস্ত্র যুদ্ধের অবসান ঘটল বলে ধারণা করা যায়। এই বিজয়ের মাধ্যমে সিরিয়ার বেশিরভাগ অংশই কার্যত সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসল। গত চার বছর আগে দেশটিতে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে আলেপ্পো শহরটি ছিল অর্থনৈতিক প্রাণকেন্দ্র। ধারণা ছিল বিদ্রোহীদের কাছ থেকে পুরো আলেপ্পোর দখল নিতে পারলেই চলমান গৃহযুদ্ধ জয় অনেকটাই এগিয়ে যাবে সরকারী বাহিনী। তাই কয়েক মাসের অবরোধ শেষে লেবাননের হিজবুল্লাহ, রুশ এবং ইরানী কর্তৃপক্ষের সহায়তায় সর্বাত্মক হামলা শুরু করে সরকারী বাহিনী। বিদ্রোহীরা ব্যাপক প্রতিরোধের চেষ্টা করলেও সরকারী বাহিনীর ধারাবাহিক হামলার মুখে নতিস্বীকার করতে বাধ্য হয়। এই বিজয় কেবল সিরিয়ার একক নয়, সিরিয়াকে সমর্থনকারী ইরান ও রাশিয়াসহ অপরাপর দেশগুলোর জন্যও একটি সুস্পষ্ট বিজয় বলা যায়। অভিযোগ আছে, দীর্ঘদিন ধরে আসাদবিরোধী মদদ যোগাচ্ছিল মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ। ঠিক যেমনভাবে আইএস মদদ পায় সৌদি আরব এবং কাতারের কাছ থেকে। অনেকেরই ধারণা এতদিন আলেপ্পো পুরোপুরি মুক্ত হওয়ার পেছনে আমেরিকার নির্বাচনী ফলাফলে প্রশাসনিক বদল ঘটা একটি বড় কারণ। তাদের মতে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় আলেপ্পোর বিরোধী শূন্য হওয়ার পেছনে একটা বড় কারণ হলেও হতে পারে। এক সময়ের বাণিজ্যিক রাজধানী ও দেশটির দ্বিতীয় প্রধান শহর আলেপ্পো ২০১২ সালের গ্রীষ্ম থেকেই সরকারী বাহিনী এবং বিদ্রোহীদের মধ্যে বিভক্ত ছিল। ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়ের প্রভাব সিরিয়ায় যুদ্ধরত বিদ্রোহীদের বিপক্ষে পড়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প সিরিয়া যুদ্ধে আমেরিকার পশ্চাদপসরণ নীতির কথা বরাবরই বলে আসছিলেন। মার্কিন নির্বাচনের আগে থেকেই সিরিয়ার বিদ্রোহীদের ওপর হামলা বৃদ্ধি পায়। এর পরিণতি বাশার আল আসাদের সরকারী বাহিনীর জয়। এই জয় প্রমাণ করে বিদ্রোহীদের জন্য এখন কঠিন সময়। অবশ্য রাশিয়ার সমর্থন পাওয়ার আগ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট আসাদ এতটা শক্তিশালী অবস্থানে ছিলেন না। তার সামরিক শক্তি কমে আসছিল। এতে যে কোন সময় তার পরাজয় ঘটতে পারত। কিন্তু রাশিয়ার সমর্থনে বিদ্রোহীরা বেকায়দায় পড়ে যায়। জাতিসংঘের হিসাব মতে, বর্তমানে আলেপ্পোতে পঞ্চাশ হাজার বেসামরিক ও দেড় হাজার বিদ্রোহী সেনা কার্যত অবরুদ্ধ আছেন। সংবাদ মাধ্যম বলছে, বহু বিদ্রোহী অস্ত্রসমর্পণ করেছে, তাদের সরকারী পুনর্বাসন কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। আলেপ্পোর অস্ত্রের লড়াই শেষ হয়েছে। কিন্তু সিরিয়ার ভবিষ্যতের লড়াই এখনও শেষ হয়নি। সিরিয়ার বহু অঞ্চল এখনও বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে। কিছু অঞ্চল এখনও আইএসের নিয়ন্ত্রণে। অনেক বিদ্রোহী ইদলিব প্রদেশে আশ্রয় নিয়েছে। অতীত অভিজ্ঞতা বলে ইদলিব পরবর্তী রণক্ষেত্রে পরিণত হতে পারে। এমনকি তারা অন্যান্য জঙ্গী ও নাশকতাবাদীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে শক্তিশালী হওয়ার বিষয়টিও হাল্কাভাবে দেখা যায় না। তাই আসাদ সরকারকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবলম্বনসহ মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্কের বন্ধন আরও দৃঢ় করা জরুরী।
×