ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

খাদ্য নিরাপত্তা

প্রকাশিত: ০৬:৩২, ১০ ডিসেম্বর ২০১৬

খাদ্য নিরাপত্তা

দেশ এখন খাদ্য উৎপাদনে শুধু স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়; বরং উদ্বৃত্ত রয়েছে। সাড়ে ১২ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য উদ্বৃত্ত থাকে জনসাধারণের খাদ্যচাহিদা মিটিয়েও। মঙ্গলবার জাতীয় সংসদের চলতি অধিবেশনে এই তথ্য প্রকাশ করেছেন খাদ্যমন্ত্রী। দেশে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রাক্কলিত জনসংখ্যা প্রায় ১৫ কোটি ৯১ লাখ। বিআইডিএসের সমীক্ষা-২০১২ অনুযায়ী চালের দৈনিক জনপ্রতি চাহিদা প্রায় ৪৬২ গ্রাম এবং গমের চাহিদা প্রায় ৪৬ দশমিক ২১ গ্রাম। সেই হিসেবে চাল ও গম মিলিয়ে মোট খাদ্যশস্যের চাহিদা প্রায় ২৯৩ লাখ মেট্রিক টন। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে চাল ও গমের নিট উৎপাদন ৩০৭ দশমিক ৬০ লাখ মেট্রিক টন। এই হিসাব অনুযায়ী চালের উদ্বৃত্ত প্রায় ২৭ দশমিক ৭০ লাখ মেট্রিক টন। পক্ষান্তরে গমের ঘাটতি প্রায় সাড়ে ১৫ লাখ মেট্রিক টন। অর্থাৎ খাদ্যশস্যের মোট উদ্বৃত্ত প্রায় ১২ দশমিক ২০ লাখ মেট্রিক টন। বাংলাদেশের খাদ্যশস্য উৎপাদনে এই সাফল্যের প্রশংসা করা হয়েছে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা, বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকেও। তবে যেহেতু গমের ঘাটতি রয়েছে দেশে, সেহেতু তা মেটানো হয়ে থাকে বিদেশ থেকে গম আমদানির মাধ্যমে। নিকট অতীতে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে পচা ও নিকৃষ্ট গম আমদানি হওয়ায় নানা বিতর্ক সৃষ্টি হলেও বর্তমানে তা কেটেছে অনেকাংশে। এও সত্য যে, কিছু মানুষ বিশেষ করে নিম্ন আয়ভুক্ত দরিদ্র শ্রেণীর জন্য সরকার ১০ এবং ১৫ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির ব্যবস্থা করেছে। সংসদের পরিবেশিত তথ্যে জানা যায়, ৩০ নবেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে ১০ টাকা মূল্যের ৩ লাখ ৭০ হাজার মেট্রিক টন চাল বিতরণ করেছে সরকার ভর্তুকি দিয়ে। বর্তমানে ১৫ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি করা হচ্ছে রাজধানীসহ বিভিন্নস্থানে। সরকারের এই উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসনীয়। বিশ্বে চাল উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। আরও উন্নতমানের প্রযুক্তি, বীজ, সার, সেচ, কীটনাশক ইত্যাদি ব্যবহার করে এই উৎপাদন আরও বাড়ানো যায়। তবে এখন বরং নজর দেয়া উচিত বিভিন্ন ও বহুমুখী খাদ্যশস্য উৎপাদনে। সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার হলো সব মানুষের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা। গমের ঘাটতির কথা আগে বলা হয়েছে। এর পাশাপাশি ডাল, তেলবীজ, ডিম, মাংস, দুধ, মাছ, মসলা উৎপাদনেও ঘাটতির বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া বাঞ্ছনীয় বৈকি। মনে রাখতে হবে যে শুধু ভাতে পেট ভরে বটে, তবে পুষ্টি ও স্বাস্থ্য নিশ্চিত হয় না। গত কয়েক বছরে শাক-সবজি, ফলমূল উৎপাদন বাড়লেও মাছ, দুধ-মাংস জাতীয় খাদ্য অর্থাৎ প্রোটিনের বিপুল ঘাটতি এখনও রয়ে গেছে। এদিকে সবিশেষ ও সমন্বিত দৃষ্টি দিতে হবে কৃষি, খাদ্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে। সরকারের ‘একটি বাড়ি, একটি খামার’ প্রকল্পটি অত্যন্ত বাস্তবধর্মী ও গণমুখী। মূলত এর মাধ্যমেই সমন্বিত কৃষি ব্যবস্থাপনা ও সুসম খাদ্য উৎপাদন সম্ভব হতে পারে। এর জন্য ব্যয়ও খুব বেশি হবে না। বরং চাই সুষ্ঠু, সমন্বিত ও বহুমুখী পরিকল্পনা। প্রয়োজনে আধুনিক সমবায় প্রথাও সংযুক্ত হতে পারে। সর্বোপরি দরকার তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক চাহিদা ও যোগাননির্ভর বাজারব্যবস্থা। সরকার সম্প্রতি দেশের সব খাদ্য গুদামকে অনলাইনের আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে, যা প্রশংসনীয়। এর পাশাপাশি অত্যাবশ্যক মানসম্মত খাদ্য সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা। তা হলেই বহুমুখী খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি নিশ্চিত হবে খাদ্য নিরাপত্তা।
×