ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মারুফ রায়হান

ঢাকার দিনরাত

প্রকাশিত: ০৩:৫৬, ৬ ডিসেম্বর ২০১৬

ঢাকার দিনরাত

আজ ৬ ডিসেম্বর। ফিরে দেখি ১৯৭১ সালের এই দিন। সকালে ও দুপুরে পাকিস্তানের নবম ডিভিশনের সঙ্গে ভারতীয় নবম পদাতিক ও চতুর্থ মাউন্টেন ডিভিশনের প্রচণ্ড লড়াই হয়। বিকেলেই পাক সেনা অফিসাররা বুঝে যায়, যশোর দুর্গ আর কোনভাবেই রক্ষা করা সম্ভব নয়। লে. কর্নেল শামস নিজের ব্রিগেড নিয়ে রাতের আঁধারে গোপনে যশোর ক্যান্টনমেন্ট থেকে পালিয়ে যান খুলনার দিকে। এভাবেই একাত্তরে প্রথম শত্রুমুক্ত জেলা হওয়ার গৌরব অর্জন করে যশোর। ৭ ডিসেম্বর সকালে যুদ্ধের ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে যশোর শহরে প্রবেশ করে যৌথবাহিনী। কিন্তু জনমানবশূন্য শহরে কোন প্রতিরোধের মখোমুখিই হতে হয়নি যৌথবাহিনীকে। পরিত্যক্ত ক্যান্টনমেন্টে একজন পাকসেনাও ছিল না। পাওয়া যায় তাদের ফেলে যাওয়া বিপুল অস্ত্র, গোলা, রসদ। মুক্তিযুদ্ধে যশোর ছিল ৮ নম্বর সেক্টরে। সেক্টর কমান্ডার মেজর মঞ্জুর। তার অধীনে ছিলেন ক্যাপ্টেন আবু ওসমান চৌধুরী ও ক্যাপ্টেন নাজমুল হুদা। এই ফ্রন্টেই ৫ সেপ্টেম্বর প্রাণ উৎসর্গ করেন বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ। যশোর ক্যান্টনমেন্ট ছিল পাকবাহিনীর দ্বিতীয় শক্তিশালী দুর্গ। অবস্থানগত কারণে এটির গুরুত্বও তাদের কাছে ছিল অপরিসীম। যে কারণে অনেক ক্ষয়ক্ষতি শিকার করেও প্রায় দুই সপ্তাহ মাটি কামড়ে পড়েছিল তারা। যদিও শেষ রক্ষা হয়নি। যশোর ক্যান্টনমেন্ট ছেড়ে পালাতে হয় তাদের। মূলত জগন্নাথপুরের ভয়াবহ যুদ্ধের পরই পাকবাহিনীর চৌগাছা ঘাঁটির পতন হয়। ভেঙে যায় তাদের মনোবল। এরপর মুক্তিযোদ্ধাদের চরম আঘাতে পাকসেনারা যশোর ক্যান্টনমেন্ট ছেড়ে পালিয়ে যায় খুলনা ও মাগুরার দিকে। যশোর হানাদারমুক্ত হওয়ার পর থেকেই দ্রুত দেশের বিভিন্ন অঞ্চল মুক্ত হতে থাকে। দুচোখে অশ্রু ও খুশি! এসে গেল আরেক ডিসেম্বর তবে! অবশ্য ডিসেম্বর আসার আগেই বিজয় দিবসের কথা মনে পড়িয়ে দিলেন একজন পতাকা বিক্রেতা। খালি পা, মলিন লুঙ্গি-পাঞ্জাবি পরিহিত এক মধ্যবয়সী ব্যক্তি। পতাকা বিক্রির মৌসুম দুটি- একেবারে বাঁধাধরা। মার্চ এবং ডিসেম্বর। বিশ্বকাপ ফুটবলের মৌসুমে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার পতাকা যে হারে বিক্রি হয় সে তুলনায় বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা এই দুটি মাসে কমই বিকিকিনি হতে দেখি। আসলে তুলনাটা করা ঠিক হলো না। একটি হচ্ছে বছর চারেক পরে হুজুগে মাতা, এক অন্ধ উন্মাদনা; অপরটি বুকের গভীরে লালন করা এক চিরকালীন মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো আত্মগৌরব। তাতে দেখানেপনা নেই। যদিও বিশ্বকাপ ক্রিকেটের বেলায় ভিন্ন হিসাব কাজ করে। সেখানে প্রকাশিত হয় দেশের প্রতি দরদ ও গৌরব। বাংলাদেশ দল হঠাৎ হঠাৎ জয়ের স্বাদ পেলে ঢাকায় আনন্দের ঝড় বয়ে যায় হাজার মাইল বেগে! শুধু কি ঢাকায়? গোটা দেশই তখন এক আনন্দ-পারাবার। তখন ঢাকার রাস্তায় এমন পতাকা বিক্রেতার দেখা মেলে। নিশ্চয়ই এদের আসল পেশা ভিন্ন। বহু বছর আগে বিটিভির বিজয় দিবসের জন্য একটি অনুষ্ঠান করতে গিয়ে এমন ক’জন পতাকা বিক্রেতার সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল। জেনেছিলাম কেউ ক্ষেতমজুর, কেউ রিক্সাওয়ালা, কেউ বা মনোহর দ্রব্যের ফেরিওয়ালা। উত্তরা মডেল টাউনের নর্থ টাওয়ারের দীর্ঘ ছায়ার নিচে দাঁড়ানো আমাদের এ খণ্ডকালীন পতাকা বিক্রেতাটির মাথার গামছায় ডমিনেট করছে সবুজ রং, খুব লক্ষ্য করে দেখলে লাল স্ট্রাইপ নজরে পড়ে। কাঁধে ঠেস দেয়া দেড়তলা সমান দণ্ডে বিভিন্ন মাপের জাতীয় পতাকা আটকানো। উত্তুরে হাল্কা হাওয়ায় উড়ছে পতপত লাল-সবুজের অহঙ্কার। আহা আমার প্রাণের পতাকা। এটি অর্জনের জন্য আমাদের আপনজনদের রক্তগঙ্গায় স্নাত হয়ে উঠেছিল বাংলার মাটি। এর গৌরব রক্ষা করতে গিয়ে বিগত চার দশকেরও বেশি সময় ধরে আমাদের কতই না সংগ্রাম আর সাধনা। হায়েনা হটিয়ে হটিয়ে আশ্চর্য রক্তগোলাপকে চিরঞ্জীব রাখা। পুবমুখো হয়ে আমি চলেছি, পেছনে স্বভাবতই পশ্চিম। সূর্যকে পিছনে রেখে তরুণটি হেঁটে আসছে। তার পেছনের সব দৃশ্য যদি অদৃশ্য করে দিই, তাহলে বলতে পারব সূর্যের ভেতর থেকেই সে হেঁটে আসছে যেন। পরনে জিন্সের প্যান্ট, গায়ে চেক শার্ট। মাথায় বাঁধা রঙিন গামছাই তাকে আলাদা করে দিয়েছে শহুরে দশটা তরুণ থেকে। তাছাড়া তার পাও খালি, নগ্ন পদেই সে রাজধানীর কঠিন সড়কের ওপর দিয়ে হেঁটে চলেছে! দু’হাতে তার পতাকা। ডান কাঁধে ঠেস দিয়ে রাখা বাঁশের লাঠিতে নানা মাপের লাল-সবুজ বস্ত্রখণ্ড- আমাদের প্রাণের পতাকা। বাম হাতে কাগজ ও কাপড়ের তৈরি ছোট ছোট পতাকা। একটু লক্ষ্য করলে দেখা যায় এসব পতাকার সঙ্গে কপালে বাঁধার জন্য ফেটিও আছে, যেগুলোয় প্রিন্ট করা রয়েছে পতাকা, তার নিচে কিছু কথা। সম্ভবত দেশাত্মবোধক গান বা কবিতার লাইন হবে। ডিসেম্বরের শুরুতে এমন পতাকা বিক্রেতার দেখা মেলে ঢাকার অলিতে গলিতে। পতাকা বিক্রি সাময়িক পেশা বটে ওই তরুণের। তবু তাকে আমার নিছক পতাকা-বাহক বলে মনে হয় না। মন জানিয়ে দেয় ছেলেটি মুক্তিযুদ্ধের উত্তরাধিকার। প্রতিদিনের জীবনযুদ্ধে শামিল এই অল্পবয়সী ছেলেটি স্বাধীনতা যুদ্ধেরই ফসল, মুক্তিযুদ্ধের প্রতিনিধি সে। তার হাতের পতাকা সে পৌঁছে দিচ্ছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার মূল্য ওই পতাকার দিকে তাকিয়ে আমাদের অবশ্যই অনুধাবন করতে হবে। যেসব পুরনো শকুন ওই পতাকাকে ছিঁড়েখুঁড়ে ধুলায় মেশাতে চায়, তাদের প্রতিরোধ করতে হবে। বিজয় দিবস আসন্ন। বিজয়ের পেছনে কত অশ্রু আর রক্তনদী বয়ে গেছে, ওই পতাকা আমাদের সে কথা কখনই যেন ভুলতে না দেয়। প্রতিটি বিজয়ের আগে উদার অসীমে বিজয় নিশানের দিকে চোখ রেখে আমরা যেন বলতে পারি, রাজাকারমুক্ত ভবিষ্যতের দিকে আমরা আরও এক কদম এগিয়ে গেলাম। বছরের শেষতম এ মাসটি ফি বছর এসে উপস্থিত হয় আনন্দ-বেদনার এক মিশ্র অনুভূতি নিয়ে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়েছিল এ মাসটিতে, অর্জিত হয়েছিল চূড়ান্ত বিজয়। ষোলোই ডিসেম্বরে হানাদার পাকিস্তানী বাহিনী বাধ্য হয়েছিল অস্ত্র সমর্পণ করতে। কিন্তু তার অব্যবহিত আগে তাদের দোসর রাজাকার আলবদরদের সহায়তায় তারা ইতিহাসের বর্বরতম মানব-নিধনে মেতেছিল। চৌদ্দই ডিসেম্বরে শ্রেষ্ঠ সন্তানদের, দেশবরেণ্য বুদ্ধিজীবীদের হত্যার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার শত্রুরা আমাদের মেধা ও মননশীলতার সঙ্কটে নিমজ্জিত করতে চেয়েছিল। ডিসেম্বর ফিরে এলে তাই আমাদের এক চোখে অশ্রু টলমল করে। অন্য চোখে খেলে যায় খুশির ঝিলিক। বাসের মধ্যে আধুনিক বাউল জিন্সের প্যান্ট, ছোট করে ছাঁটা চুল। হাতের দোতরাটি না থাকলে তাকে গায়ক বলে মনে হতো না। তার সঙ্গীটির পরনেও জিন্সের প্যান্ট। খেয়াল করলে দেখা যায় পেছনে ছোট্ট ঝুটি রয়েছে। ছোট্ট ভূমিকা দিয়েই গান শুরু করে দিলেন। লালনগীতি। বাসযাত্রীরা ঘুরে তাকাতে বাধ্য হলেন, কেননা কানে পশার মতো ছিল সেই গান। দুখানা গান শেষ হলে সঙ্গী বাসযাত্রীদের উদ্দেশে বললেন, বাউলের গান ভালো লাগলে আপনারা পুরস্কৃত করতে পারেন। দশ টাকা নাকি শত টাকা- কে কত দিচ্ছেন সেদিকে ভ্রƒক্ষেপ করলেন না বাউল, সমান শ্রদ্ধায় গ্রহণ করলেন। পথেঘাটে লোকের সামনে সরাসরি হাতটা বাড়িয়ে না দিয়ে গানটান শুনিয়ে কিছুটা মনোরঞ্জন করে সাহায্য প্রার্থনা করা অতটা দোষের বলে মনে হয় না। যদিও বাসের ভেতর দোতারা বাজিয়ে গান শোনানোর মানুষ কালেভদ্রে মেলে। এর আগে যে বাউলের দেখা পেয়েছিলাম বাসের ভেতর তার ছিল লম্বা চুল, পোশাকে ভিন্নতা। বুঝতে দেরি হয়নি যে মানুষটির বসবাস সুরের জগতে। কিন্তু পার্থিব ভুবনের নিত্য প্রয়োজনও তাকে পূরণ করতে হয়। মুখ ফুটে টাকাপয়সা চাইতে নিশ্চয়ই তাদের সংকোচ হয়। কিন্তু না চাইলে যাত্রীরাও নিজে থেকে আগ বাড়িয়ে টাকাপয়সা দেন না। ব্রিটেনের পথেঘাটে, যানবাহনে গিটার বাজিয়ে বহু লোক গান শোনান। এর একটা পোশাকি নাম আছে- বাস্কিং। এই বাস্কিংয়েরও প্রচলিত রীতিনীতি আছে, মুখ ফুটে কেউ অর্থ দাবি করেন না। সামনে থাকে খোলা টুপি। বিলেতে জন্মগ্রহণকারী এক মধ্যবয়সী সিলেটী বলছিলেন তার যৌবনের গল্প। বাবার চা বাগান থাকলে কী হবে, পাউন্ডের টানাটানি পড়লে তিনি গিটার নিয়ে ট্রেনে উঠে পড়তেন। আন্ডারগ্রাউন্ড রেল স্টেশনের এক কোনায় দাঁড়িয়ে একের পর এক গান শোনাতেন। সেই আশির দশকে এভাবে তিনি ভালই রোজগার করতেন। ঢাকায় উত্তরা থেকে মতিঝিলগামী বিআরটিসির এসি বাসে একহারা গড়নের এক তরুণ প্রায়ই উঠতেন, বড় নিঃশব্দে। দরোজার পাদানিতে দাঁড়িয়ে বাঁশির সুর তুলতেন বাঁশি ছাড়াই। বিষয়টা অভিনব বটে। রডের ওপর কয়েকটি আঙুলের সঞ্চালনে যে ধ্বনি তুলতেন তা কিছুটা তবলার বোলের মতো বৈকি। মানবজীবন নিয়ে ক’লাইনের যে গানটি তিনি যাত্রীদের শোনাতেন, তার আবেদন একেবারে ফেলনা নয়। তবে চমকিত হওয়ার মতো বিষয় হলো গানের ফাঁকে তরুণটি যে বাজনা শোনাতেন তা বাদ্যযন্ত্র ছাড়াই, শুধু মুখ দিয়ে সেই বাজনা বাজাতেন। গান শেষ করে নিজের ক্ষীণ দৃষ্টিশক্তির সীমাবদ্ধতার কথা বলে আর্থিক সাহায্য প্রার্থনা করতেন। তবে সেটাও মিহিস্বরে, নিম্নকণ্ঠে। সেখানেও একটা সুর কাজ করত। বাসের চালকরা বিনা বাক্যব্যয়ে যন্ত্রের সুইচ টিপে তরুণটির ওঠানামার সুযোগ করে দিত। মানুষের কাছে থেকে অর্থপ্রাপ্তির জন্য স্নিগ্ধতা ও বিনয়েরও প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে হয় আমাদের। সেই তরুণটিকে বহুকাল দেখি না। কিন্তু মনে রয়ে গেছে তার রেশ। গজল ও কবিতা গজল শিল্পী মনজুরুল ইসলাম খান এবং অতিথি শিল্পী ভারতের আইভী ব্যানার্জী আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের ‘গীত ও গজল’ শীর্ষক আয়োজনে গাইলেন। ছোটবেলায় মায়ের কাছে গানে হাতেখড়ি আইভীর। এরপর ভারতী অমল মুখার্জি, ভারতী কর চৌধুরী, নিহার রঞ্জন ব্যানার্জীর কাছে শাস্ত্রীয়সঙ্গীতের তালিম নিয়েছেন। বিশ্বপুর ঘরানায় শিখেছেন বীদূষী শিপরা বসুর কাছে। আর রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে সম্পন্ন করেছেন মাস্টার্স। অন্যদিকে মনজুরুল ইসলাম খান বাংলাদেশের গজল গায়কীয় ধারায় একজন পরিচিত মুখ। ভারতের মুম্বাই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শাস্ত্রীয়সঙ্গীতে ‘মাস্টার অব মিউজিক’ ডিগ্রী অর্জন করেছেন তিনি। শাস্ত্রীয়সঙ্গীত চর্চাসহ তালিম নিয়েছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় ওস্তাদদের কাছে। আঁলিয়াসের পাশেই ধানমন্ডির তিন নম্বর রোড, সরাক্ষণ হর্ন বাজছে। তাই নিচতলার এক চিলতে খোলা প্রাঙ্গণে গানের জলসা হলে সেই উচ্চশব্দ রসভঙ্গ ঘটাতে পারে- এমন শঙ্কা অসঙ্গত নয়। জানি না সেজন্যেই এখানে যতগুলো গানের আসর হয়েছে তার সবগুলোতেই আসন শতভাগ পূর্ণ হয়নি। অবশ্য গজলসন্ধ্যায় গান থামলেই কেবল হর্নের আওয়াজ শুনেছি। অন্য সময় নয়। তাই কর্র্তৃপক্ষের এই আইডিয়াটাকে পুরোপুরি নাকচ করাও যাবে না। তবে ভবনের ভেতরে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কোনো কক্ষে এধরনের আসর করলে তা আরো উপভোগ্য ও সার্থক হবে, এটা নির্দ্বিধায় বলা যায়। মনজুরুল জাগজিৎ সিংয়ের জনপ্রিয় কয়েকটি গজল এদফায়ও পরিবেশন করলেন। আর আইভি শোনালেন মূলত বেগম আকতারের কালজয়ী গান, তাতে বাংলা গানও ছিল। সব মিলিয়ে শ্রোতাদের ভালো লাগার মতোই। কবি আসাদ চৌধুরীকে সম্মাননা জানানো হবে। কবিরাই তো আসবেন। তবে কবি নন, এমন বহুজনও এসেছিলেন ওই অনুষ্ঠানে। অনুষ্ঠানটির নামকরণ অবশ্য করা হয়- কবিতার আড্ডা কথায় কবিতায়। ঘাসফুল-এর সপ্তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রবিবার বিকেলে সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্রের মুক্ত প্রাঙ্গণে এক মনোজ্ঞ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক। ঘাসফুল-এর উপদেষ্টা কথাসাহিত্যিক আতা সরকার উপস্থিত ছিলেন। কবিদের স্বকণ্ঠ কবিতা পাঠ, আবৃত্তিশিল্পীদের দরাজকণ্ঠের আবৃত্তি পরিবেশনার মাধ্যমে অনুষ্ঠান হয়ে ওঠে জমজমাট। কবি আসাদ চৌধুরীর কবিতা নিয়ে সুলিখিত প্রবন্ধ পড়েন জুনান নাশিত। তাতে বলা হয়েছে- ‘রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে কবি সচেতন। কবিতায় রয়েছে কবির কঠোর আদর্শিক অবস্থান।’ আসাদ চৌধুরী তার প্রতিক্রিয়া জ্ঞাপনে স্বভাবসুলভ ভংগীতে বহু বিষয়ের অবতারণা করে শ্রোতাদের আকৃষ্ট করে রাখেন। উল্লেখ্য ‘কাশফুল’ কবিতাপাঠের জন্য কবিদের সম্মানী প্রদানের রীতি চালু করেছে। অনুষ্ঠানে ২৬ কবির কবিতাপাঠের কথা থাকলেও বেশ ক’জন অনুপস্থিত ছিলেন। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে আমন্ত্রিত কবির বাইরে এধরনের অনুষ্ঠানে পরিচিত কবিরা সাধারণত উপস্থিত হন না। এটি আয়োজকদের ব্যর্থতা, নাকি কবিদের প্রবণতা- সেটি একটি প্রশ্ন বটে। ৪ ডিসেম্বর ২০১৬ [email protected]
×