ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

ই-হজ ব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ৩ ডিসেম্বর ২০১৬

ই-হজ ব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা

আজাদ সুলায়মান ॥ ই-হজ ব্যবস্থায় অভাবনীয় সুফল পাবার পরও একটি মহল তা প্রশ্নবিদ্ধ করতে সক্রিয় রয়েছে। এক শ্রেণীর অসাধু হজ এজেন্সী আগের মতো নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে ই-হজ ব্যবস্থাপনায় দুর্নীতি ও জালিয়াতির মতো অভিযোগ তুলে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা চালাচ্ছে। এ চক্রটি ইতোমধ্যে অপপ্রচার চালাচ্ছে- ই-হজ ব্যবস্থায়ও জালিয়াতি দুর্নীতি করা হচ্ছে। এ সব অভিযোগে গত কয়েক বছর ধরে ই-হজ ব্যবস্থাপনায় নিযুক্ত আইটি ফার্ম বিজনেস অটোমেশানের বিরুদ্ধে চালানো হচ্ছে অপপ্রচার। সদ্য সমাপ্ত হজে এ বছর ৭৫১ জনকে বিনা রেজিষ্ট্রেশনেই সৌদি আরবে পাঠানোর অভিযোগের তদন্ত চললেও দু’পক্ষের বিরোধ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। হজ এজেন্সীর সংগঠন হাব ও আইটি ফার্ম বিজনেস অটোমেশান পরস্পরের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করছে। গণমাধ্যমে মিথ্যা, বানোয়াট এবং মানহানিকর বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে মেগাটপ ট্রাভেল ইন্টারন্যাশনাল লিঃ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ ইব্রাহীম বাহারের বিরদ্ধে ১০০ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণের মামলা দায়ের করেছে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় নিয়োগকৃত আইটি প্রতিষ্ঠান বিজনেস অটোমেশন লিঃ। বিজনেস অটোমেশনের পক্ষে বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও জাহিদুল হাসান। গত বুধবার ঢাকার একটি যুগ্ম জেলা জজ আদালতে মামলাটি দায়ের করা হলে বিবাদীর বিরুদ্ধে আদালত সমন জারির আদেশ দেন। আদালত আগামী ২ ফেব্রুয়ারি বিবাদীর উপস্থিতির জন্য দিন ধার্য করে দেন। এ মামলার বাদী আর্জিতে অভিযোগ করেন মোঃ ইব্রাহীম বাহার গত ৬ নবেম্বর বেসরকারী একটি টেলিভিশনের সকাল ৭ টায় সম্প্রচারিত সংবাদে ‘নিবন্ধন ছাড়াই হজে গিয়েছিল ৯৮১ বাংলাদেশী-হজ জালিয়াতি’ শিরোনামে প্রচারিত প্রতিবেদনে বিজনেস অটোমেশন ও ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে জড়িয়ে আপ্িত্তকর, মানহানিকর ও মিথ্যা বক্তব্য প্রদান করেন। অনলাইন এবং ইলেকট্রনিক মাধ্যমে বিবাদীর এরূপ বক্তব্যের কারণে বাদী প্রতিষ্ঠানের সুনাম জাতীয় ও আর্ন্তজাতিকভাবে ক্ষুণœ হয়েছে এবং জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে। ফলে প্রতিষ্ঠানটি ব্যবসায়িকভাবে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। বাদী প্রতিষ্ঠানের পক্ষে মামলার আরজীতে হজযাত্রী নিবন্ধনের বিষয়ে স্পষ্ট অবস্থান তুলে ধরা হয়। বাদী সাংবাদিকদেরকে জানান- ডিজিটাল ব্যবস্থাপনার সফল বাস্তবায়নের ফলে হজ ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয়েছে । সে কারণে অসাধু চক্র এ প্রতিষ্ঠানের প্রতি ক্ষুব্দ। বেসরকারী হজ ব্যবস্থাপনায় ভিসা লজমেন্ট এবং ভিসা ব্যবস্থাপনার সঙ্গে আইটি প্রতিষ্ঠানের কোন সংশ্লিষ্টতা না থাকার পরও বিবাদী মোঃ ইব্রাহীম বাহার বিজি অটোমেশানের বিরুদ্বে ঢালাও অভিযোগ তুলেন। অথচ এই বাহার ২০১৫ সালে ওমরাহর নামে মানব পাচারের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন। তার বিরুদ্বে আরও অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান- আসলে হাব-এর শীর্ষ নেতৃবৃন্দের মূল টার্গেট আগের মতো ম্যানুয়েল সিষ্টেমে হজ প্রক্রিয়া স¤পন্ন করা। যাতে দুর্নীতি স্বজনপ্রীতি ও জালিয়াতি করা যায়। কারণ ম্যানুয়েল সিস্টেমে অনেক ফাঁক ফোঁকর থাকে। সেটার সুযোগে অসাধু এজেন্সীগুলো হাজীদের নানাভাবে প্রতারিত করতে সক্ষম হয়। গত দু’বছর ধরে ই হজ চালু হওয়ায় হাব কিংবা অন্যান্য এজেন্সীর পক্ষে আগের মতো অনৈতিক পন্থায় তেমন কিছুই করতে পারেনি। এজন্যই তারা ইহ্জ সিষ্টেমকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য মাঠে নেমেছে। এ থেকে সতর্ক হতে হবে হজ অফিস, বিজনেস অটোমেশান ও এয়ারলাইন্সগুলোকে। বিশেষ করে হাব যেভাবে গত হজের সময় হজ অফিসার ও ধর্ম সচিবেরর বিরুদ্ধে জোরাল প্রতিবাদ ও সভা-সমাবেশ করেছে- তা আমলেও নেয়া না হলেও ধর্ম মন্ত্রণালয় শেষের দিকে কিছুটা বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে। এ বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়-প্রতি বছর হজের মওসুম শুরু হলেই হাব নানা দাবিতে কোমর বেধে মাঠে নামে। তুচ্ছ দাবি দাওয়ার অজুহাতে পদত্যাগ দাবি করে হজ্জ অফিসার ও অন্যান্য কর্মকর্তার। তারা হজের মত স্পর্শকাতর ইস্যু নিয়ে যেভাবে মিডিয়ায় শোরগোল তুলে তাতে বুঝা যায়-মূলত তাদের টার্গেট ই-হজ ও সরকার। বর্তমানে সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলার উদ্দেশ্য নিয়েই এ চক্রটি এখনও সক্রিয়। প্রশ্ন ওঠেছে কেন তারা হজ নিয়ে সরকারকে বিপাকে ফেলতে চায়। এ সম্পর্কে একটি গোয়েন্দা সূত্র জানায়- হাব এর বর্তমান নেতৃত্বে যারা আছেন তাদের বেশিরভাগই বিএনপি জামায়াত সমর্থিত। তারা তুচ্ছ অজুহাতেই সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য সক্রিয় হয় হজ্ব মওসুমে। এদিকে হাব সভাপতি ইব্রাহিম বাহারের বিরুদ্বে দায়েরকৃত মামলায় উল্লেখ করা হয়- বিজনেস অটোমেশনের দীর্ঘদিনের সুনাম ক্ষুন্ন করে হজ ব্যবস্থাপনার কাজ হতে সরানোর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ইলেকট্রনিক মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে মিথ্যা এবং মানহানিকর বক্তব্য প্রচার করেছেন তিনি। তিনি ই-হজ সিস্টেম কে প্রশ্নবিদ্ধ করে ডিজিটাল হজ ব্যবস্থাপনার মত একটি আধুনিক ও গতিশীল সরকারী উদ্যোগকে ভন্ডুল করার উদ্দেশে কোটারি স্বার্থ পুনঃ প্রতিষ্ঠিত করার জন্যই মিডিয়ায় সরব। ৭৫১ জন হাজী বিনা রেজিষ্ট্রেশনে হজে যাবার বিষয়ে হাব সভাপতির অভিযোগ ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় তদন্ত করে দেখছে। এ সব অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে হাব সভাপতি ইব্রাহিম বাহার বলেন, ৭৫১ জন হাজীকে বিনা রেজিষ্টেশনে হজে পাঠানোর অভিযোগ করাটা কি অপরাধ ? এ অভিযোগ মিথ্যা হলেও কি আইটি ফার্ম বিজনেস অটোমেশানের ১০০ কোটি টাকার সুনাম নষ্ট হয়? ওদের সুনামের এত দাম? এ সব মামলা মোকদ্দমা করে কোন লাভ হবে না। এ বিষয়ে ধর্ম সচিব আবদুল জলিল বলেন, হাব কি অভিযোগ করেছে- বিজনেস কি মামলা করেছে তা তাদের বিষয়। পসৌদি সরকার ই- হজ ব্যবস্থাপনা চালু করেছে। এটা মানতে বাধ্য বাংলাদেশ। কে কোন স্বার্থে কি বলছে- সেটা মন্ত্রণালয়ের করার কিছু নেই। ৭৫১ জনকে বিনা রেজিস্ট্রেশনে হজে পাঠানোর অভিযোগ তদন্ত চলছে। তদন্তের আগে বলা যাবে না কে সাধু কে অসাধু।
×