ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মারুফ রায়হান

ঢাকার দিনরাত

প্রকাশিত: ০৩:১৭, ২৯ নভেম্বর ২০১৬

ঢাকার দিনরাত

আচ্ছা, সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রবিবার কি দিনভর যানজটের ধকল পোহাবে ঢাকাবাসী? রবিবার বেলা সাড়ে বারোটার পরও রাস্তায় সারি সারি গাড়ি! কী তাজ্জব কথা উত্তরা থেকে মহাখালী পর্যন্ত বেজায় যানজট! দুপুরেও যানজট থাকবে! ঢাকার সমস্যার শেষ নেই। গত সপ্তাহে জনকণ্ঠের সমাজ ভাবনার সাবজেক্ট ছিল- রাজধানীর রোগ, ডাক্তার কোথায়? মফস্বলের একজন পাঠক ঢাকার সমস্যাগুলোকে ‘ভাইরাস ও ব্যাক্টেরিয়া’ আখ্যা দিয়েছেন। যানজট, জলাবদ্ধতা, গণপরিবহন সমস্যা, লোডশেডিং, গ্যাস ও পানির স্বল্পতা, অপর্যাপ্ত ও বিপর্যস্ত ড্রেনেজ সিস্টেম, পয়ঃ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সমস্যা, পানি, বায়ু ও শব্দ দূষণ, প্রাকৃতিক সম্পদ ও পরিবেশের বিনাশ, বস্তি ও আবাসন সমস্যা, খেলাধুলার মাঠ ও পার্কের অপর্যাপ্ততা, ফুটপাথ দখল ইত্যাদি আস্ত একেকটা রোগ বটে, রোগের উপসর্গ নয়। সুরের উৎসব রাতভর সুরের ধারায় অবগাহনের সময় আবার ফিরে এসেছিল, মানে গতকাল তা শেষ হয়ে গেল। সে প্রসঙ্গে যাবার আগে জরুরী কথা বলে নেয়া যাক। ফোক ফেস্টের সময় কথাটা বলা হয়নি। সব সংগীতপ্রেমীর পক্ষে, ঢাকার বাইরের সুরপিয়াসীদের পক্ষে বনানীর আর্মি স্টেডিয়ামে যাওয়া সম্ভব নয়। অথচ তাদের ইচ্ছে থাকে ষোলো আনা। তাদের তৃষ্ণা নিবারণের কথা ভাবতে হবে না? বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে আয়োজিত বইমেলা নিয়েও এ ধরনের সমস্যা দেখা দিয়েছিল। প্রতিদিন সবাই বইমেলায় যেতে পারেন না, অথচ প্রতিদিনই সেখানে থাকে নানা সাংস্কৃতিক আয়োজন এবং প্রকাশিত হয় গুচ্ছ গুচ্ছ নতুন বই। এটি সঠিকভাবে প্রথম যে মিডিয়া অনুধাবনে সমর্থ হয় সেটি একুশে টেলিভিশন। এক দশক আগে তারা পঁচিশ মিনিটের প্রামাণ্যচিত্র প্রচারের সিদ্ধান্ত নেয়। বিকেলে বইমেলা শুরু হলে টিভি ক্যামেরা মেলায় প্রবেশ করত, বইমেলার সার্বিক পরিবেশ ধারণ করা হতো, একাডেমি প্রাঙ্গণে আয়োজিত সেমিনার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের চুম্বক অংশর ফুটেজ নেয়া হতো। মেলায় আগত লেখক-পাঠক-প্রকাশকদের মিনি ইন্টারভিউ থাকত, সেই সঙ্গে সেইদিন বইমেলায় আসা নতুন বইয়ের তথ্য প্রদান করা হতো। বইমেলা শেষ হলে টিভি টিম ফিরে যেতেন স্টেশনে, তারপর এডিট করে পঁচিশ মিনিটের প্রামাণ্য অনুষ্ঠান প্রচার করা হতো প্রায় মধ্যরাতে। বেশ খাটুনি ও কমিটমেন্টের কাজ। উপস্থাপক ও সার্বিক দেখভালের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তিন সপ্তাহ পর আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি, ধুলোর আক্রমণেই এটা হয়, কণ্ঠ-সমস্যায় ভুগি। তাই বাধ্য হয়ে একজন সহউপস্থাপক নিয়ে বইমেলার বাদবাকি দিনগুলো পার করি। কথা হলো ফোক ফেস্ট বা উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের উৎসব নিয়েও কোন টিভি মাধ্যম অনুরূপ কাজটি করতে পারে। এ দুটি উৎসবে যেহেতু রাতভর সঙ্গীত পরিবেশিত হয়, তাই খাটুনি একটু বেশিই হবে। প্রতিদিন সন্ধ্যাবেলা আগের দিনের উৎসবের সামগ্রিক চিত্র ও সঙ্গীতের চুম্বক অংশ তুলে ধরতে পারে। কমপক্ষে এক ঘণ্টা আয়োজন হতে হবে। তবে ডিজিটাল উন্নতির যুগে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা নিয়েই এটা করা সম্ভব। এ ধরনের অনুষ্ঠান প্রস্তুত করে উৎসব আয়োজকদের ওয়েবসাইটে তার ভিডিও সন্নিবেশ করা সম্ভব। তাহলে দর্শকশ্রোতারা তাদের সুবিধামতো সময়ে ওই সাইটে গিয়ে উৎসব উপভোগের সুযোগ পেতে পারেন। একটি সংবাদপত্র তাদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর নানা আয়োজনের নির্বাচিত অংশ এভাবেই প্রদর্শন করেছে। প্রতি বছর নবেম্বর-ডিসেম্বর মাসে আর্মি স্টেডিয়ামে পাঁচ দিনব্যাপী উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসব হয়ে থাকে। গত কয়েক বছর ধরে এটা সঙ্গীতপ্রেমী নাগরিকদের বার্ষিক উৎসবে পরিণত হয়েছে। তারই অনুসরণে এবার পক্ষকাল আগে একই ভেন্যুতে ফোক ফেস্টিভ্যাল বা লোকসঙ্গীত উৎসবও হলো সফলভাবে। এ ধরনের উৎসবের জন্য শিক্ষিত সঙ্গীতপ্রেমী মানুষের মন যে তৃষ্ণার্ত থাকে তার দৃষ্টান্ত মিলেছে। বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আয়োজিত উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসবে ভারতের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক খ্যাতিমান সঙ্গীতজ্ঞ অংশ নেন। প্রতি বছরই নতুন নতুন জগৎখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী উৎসবে যুক্ত হচ্ছেন। হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া, রশিদ খান, অজয় চক্রবর্তী ও তার কন্যা কৌশিকী প্রায় নিয়মিতই আসছেন এ উৎসবে। একবার এসেছিলেন ওস্তাদ জাকির হোসেন, শুভা মুডগালসহ কয়েক জন। বিদুষী বোম্বে জয়শ্রীর পরিবেশনা শুনেছি একাধিক উৎসবে। ভারতে ছোট পরিসরে উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের উৎসব হয়। সেগুলোতে আড়াই বা তিন হাজার মানুষ হয়। আর ঢাকার বনানীর আর্মি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসবে পঞ্চাশ হাজার পর্যন্ত লোকসমাগমের রেকর্ড রয়েছে যার সিংহভাগই তরুণ-যুবা। কে ভেবেছিল এদেশের তরুণরা যারা ব্যান্ড গানে উন্মাতাল হয় তাদেরই বড় একটি অংশ শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সুধাপানে আগ্রহী হবে! তবে এটা তো ভুলে গেলে চলবে না উপমহাদেশের বড় বড় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের পণ্ডিতদের অনেকে এ দেশের মাটিতেই বেড়ে উঠেছিলেন। তাঁদের প্রায় প্রত্যেকেরই শিকড় বাংলাদেশে। আলাউদ্দিন খাঁ, আলী আকবর খাঁ, রবিশঙ্কর, উদয় শঙ্কর, নিখিল ব্যানার্জি, অজয় চক্রবর্তী, বেলায়েত খাঁ, ইমদাদ খাঁ- এঁরা সবাই এদেশেই মাটিতে বেড়ে উঠেছেন। বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসব এখন সকল সঙ্গীতপ্রেমীর তীর্থভূমিতে পরিণত হয়েছে। দেশ এবং বিদেশের অনেকেই এই উৎসবে যোগ দেয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকেন। উল্লেখযোগ্যসংখ্যক প্রবাসী ও বিদেশী এই অনুষ্ঠানের কথা ভেবে তাঁদের বাংলাদেশ সফরের সময়সূচী নির্ধারণ করছেন। দেশ-বিদেশে ধর্মান্ধদের উগ্র আক্রমণ ও হুমকির জন্য এই উৎসব অনুষ্ঠান নিয়ে অনেকের মনেই শঙ্কা ছিল। কিন্তু সকল উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাকে উপেক্ষা করে প্রতিবারই যথারীতি আয়োজিত হয়ে আসছে উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের এই মহা-অনুষ্ঠান। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর একই ভেন্যুতে উদ্বোধন হলো পঞ্চম বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসব ২০১৬। এই উৎসব উৎসর্গ করা হয়েছে কবি সৈয়দ শামসুল হককে। ক’দিন আগেই চলে গেছেন গত উৎসবে সঙ্গীত পরিবেশন করা বালমুরালিকৃষ্ণ। তাঁকে এবং ওস্তাদ আলী আহমেদ হোসেনকে এই উৎসবে স্মরণ করা হলো শ্রদ্ধাভরে। শঙ্কার দোলাচল কাটিয়ে শুদ্ধ সংস্কৃতি দিয়েই সব অশুভকে জয় করার প্রত্যয়ে উদ্বোধন হলো কণ্ঠ ও যন্ত্রসঙ্গীতে আবিষ্ট থাকার পঞ্চম বর্ষ। এবারের উৎসবে বিশেষভাবে লক্ষণীয় হলো দেশের শিল্পীদের ব্যাপক অংশগ্রহণ। শিল্পী সংগতকারী মিলে এবার পরিবেশনায় ছিলেন দেশের ১৬৫ ও ভারতের ৮২ জন। দেশে উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের এই জাগরণ কাক্সিক্ষত সাফল্য ধরে রাখুক- এটাই প্রত্যাশা। শনিবার রাত ৩টা ৫৫, আর্মি স্টেডিয়াম আর্মি স্টেডিয়াম প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর, কে বলবে রাত ভোর হতে বাকি নেই তেমন! মনে হচ্ছে সবে সন্ধে হলো। তিনটা কুড়ি মিনিটে পণ্ডিত সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায় সেতারবাদন শেষে নেমে গেছেন মঞ্চ থকে। তার পরপরই ওস্তাদ রশিদ খানের পরিবেশনার ঘোষণা। সাধারণত এক শিল্পীর প্রস্থান ও আরেক শিল্পীর আগমনের মাঝখানে প্রস্তুতির জন্য বড়জোর পনেরো মিনিট সময় প্রয়োজন। সেই সময় কখন পেরিয়ে গেছে, তবু কেউ মনের উসখুশ মুখে আনছেন না, অস্বস্তি প্রকাশ করছেন না। রাত তিনটের সময়েও সামনের বেশ কয়েকটা সারি ফাঁকা ফাঁকা দেখেছি, কিন্তু রশিদ খানের নাম ঘোষণার পর পরই প্রায় সকল আসন পূর্ণ হয়ে গেছে। যারা ফুড কোর্টে গিয়ে জমজমাট আডডা দিচ্ছিলেন, যারা কফি স্টলের সামনে জটলা পাকাচ্ছিলেন, কিংবা কালো কাপড়ে ঢাকা ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থানে সময় কাটাচ্ছিলেন- তারা সবাই যেন মঞ্চের সামনে কিংবা জায়ান্ট স্ক্রিনের সামনে এসে শান্ত ভঙ্গিতে বসে পড়লেন। এত মানুষ এসেছেন এবং অপেক্ষা করে আছেন কখন রশিদ খান মঞ্চে আসবেন, উচ্চাঙ্গসঙ্গীত পরিবেশন করবেন। আমি যে সারিতে ছিলাম সেখানে এক পাশে দেখলাম ষোল-সতেরো বছর বয়সী তিন মেয়ের দু’জন ঘুমিয়ে পড়েছে, অন্যজন জেগে থাকলেও সঙ্গের দুজনের ঘুম ভাঙছে না। একজন তো চেয়ারের ওপর শাল জড়িয়ে শুয়েই পড়েছে। আরেক পাশে এক তরুণ জুটি এসে বসল। দু’জনে নিচু স্বরে গল্প করছে, গায়ে গা ঘেঁষে বসে আছে। নিচু স্বরে কথা বললেও যে ধ্বনিটুকু কানে ঢুকে পড়ছে তাতে শঙ্কা হলো রশিদ খানের পরিবেশনা শুরু হলে তার রসাস্বাদনে প্রতিবন্ধক হয়ে উঠতে পারে তা। অন্ধকার মঞ্চ থেকে মাঝেমধ্যে রশিদ খানের ভয়েস শোনা যাচ্ছে, খেয়ালের খ-াংশ আউড়ে শব্দযন্ত্র ব্যবস্থাপকদের নির্দেশনা দিচ্ছেন। অবাক ব্যাপার হলো রশিদ খান যতক্ষণ সময় নিলেন প্রস্তুতির, মানে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা- ততক্ষণই এইসব গুঞ্জন ও আড্ডাবাজি চলল নিচু লয়ে। মঞ্চে আলো জ্বলে উঠলে সব আওয়াজ বন্ধ হয়ে গেল। শুধু বাতাসে ভেসে থাকল ওস্তাদ রশিদ খানের খেয়াল। তার গায়নে বিশেষত্বের ছাপ রেখেছেন বিলম্বিত আলাপের আবেগময়তায়, বিস্তারের গভীরতায় ও তানের ব্যতিক্রমী দক্ষতায়। প্রায় প্রতিবছরই রাত জাগছি শুধু রশিদ খানেরই জন্যে। তার খেয়াল শুনতে শুনতে খেয়াল করে দেখলাম আমার আশপাশের বেশিরভাগ শ্রোতারই বয়স কুড়ি থেকে ত্রিশের ভেতর। এর শতভাগই যে উচ্চাঙ্গসঙ্গীত ভালোবেসে আর্মি স্টেডিয়ামে এসেছে, তা সম্পূর্ণ নিশ্চিত হয়ে বলা যাবে না। কিছু ফ্যাশন, রাত জেগে ঘুরে বেড়ানোর আড্ডাবাজি, আর লোক দেখানো ব্যাপারস্যাপার রয়েছে বটে। তবে বেশিরভাগ তরুণ যে গানের টানে রাতভর জেগে থাকছেÑ এটা অস্বীকার করলে বড় ভুল হবে। রাত নয়টার পরে আর্মি স্টেডিয়ামে ঢুকেছিলাম ১ নং গেট দিয়ে, যদিও এসে বসেছি ‘গণকাতারে’। এবার গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা না থাকায় একটু অসুবিধে হয়েছে বহুজনেরই। প্রধান সড়কের ওপর প্রধান ফটকে কয়েকটি ছোট প্রবেশপথ রয়েছে। নিরাপত্তা রক্ষীদের বাহুল্য ও বাড়াবাড়ি রয়েছে বটে। সেখানেই গাড়ি থেকে সবাই নেমে পড়ছেন। পুরুষ ও মহিলাদের জন্য বরাবরের মতো পৃথক প্রবেশদ্বার। স্টেডিয়ামের চৌহদ্দিতে প্রবেশের পর মূল স্টেডিয়ামে ঢোকার জন্য আলাদা লাইন। সেখানে বডি চেক হচ্ছে। বিবিধ নিরাপত্তা বেষ্টনী পেরিয়ে মঞ্চের সামনের আসনগুলোর দিকে হাঁটতে হাঁটতে মন ভাল হয়ে যায়। এত মানুষ! কোথাও কোন বিশৃঙ্খলা নেই, উচ্চকিত কিছু নেই। মঞ্চে তখন ছিলেন প্রভা আত্রে, ৮৪ বছর বয়সী এক গুণী শিল্পী। তার পরিবেশনা মিস করি কিনা এমন একটা সন্দেহ আমার মনে খেলা করছিল। ভাগ্যিস তার খেয়াল শোনার সৌভাগ্য হলো। এবারই তিনি প্রথমবারের মতো এলেন। কিরানা ঘরনার অগ্রজ এ শিল্পী খেয়াল, ঠুমরি, দাদরা, গজল ও নাট্যসঙ্গীতে সমান পারঙ্গম। তার পরিবেশনায় তবলায় সঙ্গত করেন রোহিত মজুমদার। প্রভা আত্রের পরিবেশনা শেষ হলে মাঠে হাঁটতে বেরুলাম। স্টেডিয়ামের এক অংশে চলছে বাদ্যযন্ত্রের প্রদর্শনী। এ প্রদর্শনীতে রয়েছে উপমহাদেশের নানা ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র। তার কোনোটি বহুল পরিচিত, কোনোটি আবার চর্চার অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে। বাদ্যযন্ত্রের পাশে রয়েছে এর পরিচিতিও। প্রদর্শনীতে রয়েছে পাখোয়াজ, সরোদ, টিকিয়া, অ্যাকর্ডিয়ান, সুনাদ, নাকাড়া, হারমোনিয়াম, ইন্ডিয়ান ব্যাঞ্জো, সারেঙ্গী, এস্রাজ, যুগী সারেঙ্গী, কর্ণেট, ক্ল্যারিনেট, বিউগল, ট্রাম্পেট, সানাই, মেঁকুড়, প্রেমজুড়ি, তানপুরা, মাদল, স্বরাজ, গোপীযন্ত্র, সারিন্দা, আনন্দনহরিসহ আরও অনেক বাদ্যযন্ত্র। রশিদ খানের কথা বলছিলাম। তার জনপ্রিয় গান ‘ইয়াদ পিয়া কি আয়ে’ (প্রিয়াকে মনে পড়ে) গানটি শুনে এক শ্রোতা ফেসবুকে মন্তব্য করেছেন- ‘যখন বাসায় ঢুকলাম তখনো ভোরের আলো উঁকি দেয়নি! কানে অনুরণিত হচ্ছে রাশিদজীর ইয়াদ পিয়া কি আয়ে...। আহা! বাসায় সবাই ঘুমাচ্ছে, ঘুমাক। ওস্তাদজীর পিয়া থাকুক কানে যতক্ষণ ঘুম না আসে। বিশ্বাস করুন এখনো রয়েছে কানে! আমি ওস্তাদজীর গান সরাসরি দেখিনি (শুনিনি) আগে। কাল রাত জাগলাম তার জন্য। তুলনাহীন অভিজ্ঞতা! আমি কৃতজ্ঞতা জানাই দর্শকদের! কী সমজদার দর্শক! রাত শেষ হয়ে যাচ্ছে, শীত লাগছে, অনেকে কিভাবে বাসায় যাবেন তা জানেন না! তবু আছেন!...?’ তিনি শেষ করলে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি পাঁচটা বেজে গেছে। বাইরে মূলসড়কে এসে দেখি দশ-বারোটি দোতলা বাস অপেক্ষমাণ। কিছুক্ষণের মধ্যে প্রতিটি বাস যাত্রীবোঝাই হয়ে গেল। উত্তরে সাভার, দক্ষিণে যাত্রাবাড়ী, পুবে ধানমণ্ডি কোথায় না গন্তব্য এইসব পরিবহনের। উৎসবে আগত সঙ্গীতপ্রেমীদের ভোরবেলা বাড়ি পৌঁছনোর দায়িত্বও পালন করছে আয়োজকরা! প্রশংসা না করে উপায় আছে? ২৭ নবেম্বর ২০১৬ [email protected]
×