ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিনামূল্যে সৌর প্যানেল

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ২৮ নভেম্বর ২০১৬

বিনামূল্যে সৌর প্যানেল

অদম্য বাংলাদেশ স্লোগানকে সামনে রেখে আগামী ৭ ডিসেম্বর শুরু হচ্ছে বিদ্যুত ও জ্বালানি সপ্তাহ-২০১৬। দেশের সর্বস্তরের মানুষকে বিদ্যুত ও জ্বালানি সাশ্রয়ী এবং সচেতন করে তোলার লক্ষ্যে ২০১২ সাল থেকে সকল জেলা সদর ও উপজেলা সদরে আয়োজন করা হয় জাতীয় বিদ্যুত ও জ্বালানি ক্যাম্প। এই প্রোগ্রামে রোভার ও স্কাউটদের কাজে লাগানো হয়ে থাকে ঘরে ঘরে জ্বালানি সাশ্রয়ী বার্তা পৌঁছে দেয়ার জন্য। এবার বিদ্যুতের সুবিধাবঞ্চিত তিন হাজার পরিবারকে বিনামূল্যে সৌর প্যানেল দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার তথা বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। বিদ্যুত- জ্বালানি সপ্তাহের আয়োজন থেকে অর্থ সাশ্রয় করে তিন হাজার গরিব মানুষের ঘরে পৌঁছে দেয়া হবে সৌরবিদ্যুতের আলো। সরকার থেকে অবশ্য রিলিফ প্রোগ্রামের আওতায় অনেক আগে থেকেই দেশের সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের সৌর প্যানেল দেয়া হচ্ছে বিনামূল্যে। বর্তমান সরকারের আমলে দেশে গত কয়েক বছরে বিদ্যুত উৎপাদন ও বিতরণে আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি সাধিত হলেও বাস্তবতা হলো, দেশের সর্বত্র বিদ্যুতের আলো পৌঁছে দেয়া সম্ভব হয়নি। সরকার অবশ্য ২০২১ সালের মধ্যে দেশের সর্বত্র বিদ্যুত সুবিধা পৌঁছে দিতে পদ্ধপরিকর। তবে এক্ষেত্রে সমস্যাও যে নেই, এমন কথা জোর দিয়ে বলা যায় না। দেশে এমন অনেক প্রত্যন্ত এলাকা, দুর্গম চরাঞ্চল এবং উপকূলীয় এ দ্বীপাঞ্জল রয়েছে যে, যেখানে ইচ্ছা করলেই বিদ্যুত সুবিধা পৌঁছে দেয়া যায় না। আবার ছোট ছোট বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণও ব্যয়বহুল। বর্তমানে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কম থাকলেও যে কোন সময় এর দাম চড়তে পারে। তদুপরি জ্বালানি তেল, কয়লা, গ্যাস ইত্যাদি পরিবেশবান্ধব তো নয়ই, বরং আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য রীতিমতো হুমকিস্বরূপ। এমতাবস্থায় বায়ুবিদ্যুত ও সৌরবিদ্যুত হতে পারে সর্বাধিক লাগসই ও সাশ্রয়ী প্রযুক্তি। গরিবদের জন্য এবং অপেক্ষাকৃত দুর্গম অঞ্চলে এর বিকল্প নেই বললেই চলে। সর্বোপরি পরিবেশবান্ধব। বাংলাদেশ গ্রীষ্মপ্রধান এবং রৌদ্রকরোজ্জ্বল দেশ বিধায় এখানে সৌরবিদ্যুতের অফুরন্ত সম্ভাবনা বিরাজমান। সুবিস্তৃত সমুদ্রোপকূলও হতে পারে বায়ুবিদ্যুতের অন্য একটি অফুরান উৎস। গ্রীষ্মম-লীয় অঞ্চল বিধায় এখানে বছরের অধিকাংশ সময় সূর্যকিরণ পড়ে থাকে লম্বভাবে। আকাশ মেঘমুক্ত থাকলে এবং নিবিড় বর্ষা বাদে প্রায় সারা বছরই মেলে সূর্যের আলো। এতে রাজধানীসহ সারাদেশে ঘরে ঘরে এবং এমনকি অফিস-আদালতের ছাদে সৌর প্যানেল বসালে বিদ্যুত পাওয়া অপেক্ষাকৃত সহজ হতে পারে। যারা গরিব এবং সুবিধাবঞ্চিত, তাদের জন্য তো সৌরবিদ্যুত হতে পারে একেবারে সোনায় সোহাগা। প্রাথমিক পার্যায়ে সোলার প্যানেল বসানো কিছুটা ব্যয়বহুল হলেও আখেরে তা সাশ্রয়ী ও টেকসই। তদুপরি নিরন্তর গবেষণার ফলে উন্নত মানের ও প্রযুক্তির সৌর প্যানেলও আবিষ্কৃত হচ্ছে। এর পাশাপাশি বায়ুবিদ্যুত, বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলে। সরকার তথা বিদ্যুত ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় যদি মূল পর্যায়ে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি করতে সক্ষম হয় এবং আর্থিক সহায়তা প্রদান করে তাহলে অচিরেই সৌর ও বায়ুবিদ্যুত জনপ্রিয় হয়ে উঠবে। পরিবেশবান্ধব, সাশ্রয়ী ও সহজলভ্য বিধায় মানুষ যে নিজের ভাল বুঝতে সক্ষম হবে, সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই।
×