ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

কিশোরীগঞ্জে ১১৯টির অস্তিত্ব নেই

এলজিএসপি প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ২৬ নভেম্বর ২০১৬

এলজিএসপি প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ॥ কিশোরীগঞ্জ উপজেলায় লোকাল গর্ভন্যান্স সাপোর্ট প্রজেক্ট (এলজিএসপি)-২ এর আওতায় বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের ১১৯টি প্রকল্পের অধিকাংশ প্রকল্পের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। উক্ত উপজেলার এলজিএসপি-২ প্রকল্প নিয়ে সাংবাদিকরা প্রতিটি ইউনিয়নের সচিবদের কাছে প্রকল্পে নামসহ কাজের বিবরণ জানতে চাইলে তারা এ সংক্রান্ত তথ্য প্রদানে অস্বীকৃতি জানায়। ফলে ওইসব প্রকল্পের তথ্য সংগ্রহে তথ্য অধিকার আইনের নির্ধারণ ফর্মে উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তার কাছে আবেদন করা হয়। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে সাংবাদিকরা তথ্য সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়। তথ্য অনুযায়ী দেখা যায় ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ওই উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের ১১৯টি প্রকল্পের এক কোটি ৭১ লাখ ৫১ হাজার ৮৪ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এর মধ্যে বড়ভিটা ইউনিয়নের ৫টি প্রকল্পে ১৬ লাখ, পুটিমারী ইউনিয়নে ১৩টি প্রকল্পে ২০ লাখ ৪৮ হাজার ৫৪০, নিতাই ইউনিয়নের ১৯টি প্রকল্পে ২০ লাখ ৯৩ হাজার ৩২০, বাহাগিলি ইউনিয়নে ২৮টি প্রকল্পে ১৬ লাখ ৪৭ হাজার ৩৮৫, চাঁদখানা ইউনিয়নে ১৩টি প্রকল্পে ১৮ লাখ ৫২ হাজার ৩৩৯, কিশোরীগঞ্জ সদর ইউনিয়নে ১৭টি প্রকল্পে ২৩ লাখ ৬০ হাজার, রনচন্ডি ইউনিয়নে ১০টি প্রকল্পে ১৭ লাখ,গাড়াগ্রাম ইউনিয়নে ২১টি প্রকল্পে ২৬ লাখ ও মাগুড়া ইউনিয়নে ১৩টি প্রকল্পে ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রকল্পসমূহের মধ্যে রয়েছে হতদরিদ্রদের মাঝে রিং স্লাবসহ ল্যাট্রিন বিতরণ, ইউ ড্রেন নির্মাণ, এইচবিবি পাকা রাস্তা নির্মাণ, ওয়ার্র্র্ডভিত্তিক শিক্ষা সচেতনা বৃদ্ধির জন্য মেধাবী শিক্ষার্থীদের পুরস্কৃতকরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, রাস্তা আধাপাকাকরণ, বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কক্ষ মেরামত ও ল্যাটিন স্থাপন, কমিউনিটি ক্লিনিকের বারান্দাসহ বসার স্থান নির্মাণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জোড়া বেঞ্চ সরবরাহকরণ, ডিজিটাল সেন্টারে ফটোকপি মেশিন সরবরাহ এবং মালামাল ক্রয়, পাবলিক টয়লেট নির্মাণ, ছোট কালর্ভাট নির্মাণ, মহিলাদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, নদীর বাধ রক্ষায় গাইড ওয়াল নির্মাণ, রাস্তার পার্শ্বে যাত্রী ছাউনিসহ বিভিন্ন প্রকল্প। শুক্রবার এ ব্যাপারে উপজেলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও বড়ভিটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ ফজলার রহমানের সঙ্গে কথা বলা হলে তিনি জানান ১০ নবেম্বর উপজেলা সম্বয়ন কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় তিনি এলজিএসপি-২ প্রকল্প কাজের ইউপি সচিবদের অনিয়মের কথা তুলে ধরেন। পাশাপাশি একটি তদন্ত টিম গঠনের দাবি করেন। তিনি বলেন, এই উপজেলায় উক্ত প্রকল্প বাস্তবায়নে ইউপি সচিবগণ ব্যাপক অনিয়ম করেছে। ওই বরাদ্দকৃত টাকায় নামমাত্র কাজ করে ইতোমধ্যেই সমুদয় টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। তবে পুটিমারী ইউপি সচিব আনোয়ার বেগম জানান, তার ইউনিয়নে ১৩টি প্রকল্পের ২০ লাখ ৪৮ হাজার ৫৪০ বরাদ্দ থাকলেও তিনি ১২টি প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করতে পারেননি। শুধু ১ লাখ ২৩ হাজার টাকা ব্যয়ে কালিকাপুরে ইউ- ড্রেন নির্মাণ করতে পেরেছেন। বাকি কাজ তিনি করতে না পারায় ওইসব প্রকল্পের অর্থ ব্যাংকে জমা রয়েছে। বড় ভিটা ইউনিয়নে ৫টি প্রকল্পের মধ্যে ২টি প্রকল্পের কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। প্রকল্পগুলো হলোÑ চার লাখ ৯৫ হাজার টাকার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিমপাড়া বড় জামে মসজিদ হতে দিঘিরপাড় পর্যন্ত এইচবিবি পাকা রাস্তা তৈরিকরণ ও এক নম্বর ওয়ার্র্ডে দুই লাখ ২০ হাজার টাকায় ডালিয়া-রংপুর রাস্তা হতে ক্যানেল পর্যন্ত ইটের আদলা (খোয়া) দিয়ে রাস্তা নির্মাণ। রনচন্ডি ইউনিয়নে ১০টি প্রকল্পের মধ্যে ৬টি প্রকল্প বাস্তবায়ন দেখানো হয়। এখানকার ইউপি সচিব মফিজুল ইসলাম জানান, ১০ প্রকল্পের জন্য ১৭ লাখ টাকা বরাদ্দ হলেও ব্যাংকে টাকা পাওয়া যায় ১০ লাখ। ওই টাকায় স্কুল কলেজে বেঞ্চ সরবরাহ, কমিউনিটি ল্যাট্রিন স্থাপন করা হয়েছে। এটি তিনি করেননি। পূর্বের ও পুনরায় নির্বাচিত চেয়ারম্যান নিজে করেছে। এখানে তার কোন হাত ছিল না।উপজেলার অন্যান্য ইউনিয়নের একই অবস্থা। এলাকাবাসী জানায় সরকার উন্নয়নের জন্য কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দিচ্ছে। সরকার যদি কঠোরহস্তে সুষ্ঠভাবে তদন্ত করলে দুর্নীতিবাজরা ধরা পড়ে যাবে।
×