ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

পল্লী চিকিৎসকদের বলির পাঁঠা করে কোটি টাকার বাণিজ্য

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ২৪ নভেম্বর ২০১৬

পল্লী চিকিৎসকদের বলির পাঁঠা করে কোটি টাকার বাণিজ্য

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ কোটি টাকার বাণিজ্যের টার্গেট নিয়ে যশোরে পল্লী চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের নামে মাঠে নেমেছে একটি প্রতারক চক্র। এজন্য তারা ইতোমধ্যে গ্রামে গ্রামে গিয়ে চিকিৎসকদের চিঠি দিয়েছে। সিভিল সার্জনের তত্ত্বাবধানে এই প্রশিক্ষণ হবে উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হচ্ছে, এই প্রশিক্ষণ না থাকলে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে সরকার। আর এই কাজটি করা হচ্ছে খোদ সরকারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই। তবে বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন সিভিল সার্জন অফিস। পল্লী চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সম্প্রতি যশোরের বিভিন্ন উপজেলায় পল্লী চিকিৎসকদের কাছে চিঠি পৌঁছে দেয়া হয়েছে। এ্যাসোসিয়েশন ফর হেল্প অব প্যাসেঞ্জার এভরিহোয়ার (এহোপ) নামের সংস্থা এই চিঠি দিয়েছে। বলা হচ্ছে, তারা সরকারীভাবে মাসব্যাপী আরএমপি রিফ্রেসার্স প্রশিক্ষণ দেবে। যে প্রশিক্ষণ সরাসরি সিভিল সার্জন ও উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার তত্ত্বাবধায়নে দেয়া হবে। এই প্রশিক্ষণ না থাকলে কোন পল্লী চিকিৎসক চিকিৎসা সেবা দিতে পারবেন না। যারা এই প্রশিক্ষণের সার্টিফিকেট ছাড়াই চিকিৎসা সেবার কাজে নিয়োজিত থাকবেন তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবে। আয়োজক সংস্থার জেলা কোর্স কো-অর্ডিনেটর ডাঃ আবুল হাসান স্বাক্ষরিত চিঠিতে সব পল্লী চিকিৎসকদের ঝিকরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। এছাড়া এই কোর্সের ফি ধার্য করা হয়েছে চিকিৎসক প্রতি ছয় হাজার টাকা। সূত্র বলছে, যশোরের আট উপজেলার প্রায় সব পল্লী চিকিৎসককে এই চিঠি দেয়া হয়েছে। এজন্য তারা প্রাথমিক পর্যায়ে ঝিকরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অফিস খুলেছে। পরে অন্যান্য উপজেলাতেও কাজ শুরু করা হবে। পুরো যশোর জেলায় দুই হাজার পল্লী চিকিৎসককে টার্গেট করে জনপ্রতি ছয় হাজার হিসেবে কোটি টাকারও বেশি হাতিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে এ্যাসোসিয়েশন ফর হেলথ অব প্যাসেঞ্জার এভরি হোয়ার (এহোপ)। মনিরামপুরের পল্লী চিকিৎসক দীপক কুমার রায়, চিঠি পেয়ে আমি সংস্থার কো-অর্ডিনেটর আবুল হাসানের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি আমাকে জানিয়েছেন, যদি এই কোর্স না করা হয় তাহলে সরকার ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আমাকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করবে। একই সঙ্গে কারাদ-ও হতে পারে। দীপক কুমার আরও বলেন, আমাকে জানানো হয়েছে এখনই মনিরামপুরে প্রশিক্ষণ কোর্স শুরু হচ্ছে না। তবে দ্রুত আমাদের উপজেলায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। এজন্য আবুল হাসান আমাকে ২৭ নবেম্বরের মধ্যে ঝিকরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। আর এজন্য ছয় হাজার টাকা, চার কপি সদ্য তোলা ছবি ও নাগরিক সনদপত্রের ফটোকপি লাগবে। তবে সিভিল সার্জন গোপেন্দ্রনাথ আচার্য বলেন, পল্লী চিকিৎসকদের চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য প্রশিক্ষণের দরকার হয়। এজন্য বেসরকারীভাবে তারা বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তবে সরকারীভাবে পল্লী চিকিৎসকদের আরএমপি প্রশিক্ষণ দেয়া হয় না। এমন কোন প্রশিক্ষণ চালু হচ্ছে কিনা তা আমার জানা নেই। অন্যদিকে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের কোর্স কোঅর্ডিনেটর ডাঃ আবুল হাসান জানান, এখনও এর জন্য অনুমোদন পায়নি। তবে দুই-একদিনের মধ্যেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক অনুমোদন দেবেন।
×