স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী আবাসিক এলাকা ধানমণ্ডিকে নবরূপে সাজানোর ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। এর অংশ হিসেবে ধানম-ি লেক এলাকার সৌন্দর্য রক্ষায় ও নিরাপত্তার স্বার্থে সম্পূর্ণ ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার (সিসি) আওতায় আনা ও এলাকার যানজট কমাতে নাগরিকদের সঙ্গে নিয়ে বিশেষ ট্রাফিক ব্যবস্থা গ্রহণের পরিকল্পনার ঘোষণা দেন তিনি। বুধবার দুপুর বারোটায় ধানম-ি ১৫নং ওয়ার্ডের রবীন্দ্র সরোবরে ‘জনতার মুখোমুখি জনপ্রতিনিধি’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র এসব কথা বলেন। ডিএসসিসির ১৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জাকির হোসেন স্বপনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমোডর এমকে বখতিয়ার, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডাঃ শেখ সালাউদ্দিন, কমিশনার হাসিবুর রহমান মানিক, ধানম-ি থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামাল আহমেদ, পুলিশের এডিসি আশরাফ হোসেন, এসি (ট্রাফিক) হাসান মোস্তফা, বিভিন্ন ওয়ার্ডের ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ অন্যান্য কর্মকর্তা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
মেয়র ধানম-িকে নবরূপে সাজাতে ধানম-ি লেককে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যেই সমস্ত ধানম-ি এলাকার ছোটবড় রাস্তা ও অলিগলিতে লাইট এমিটিং ডায়ট (এলইডি) লাইটের ব্যবস্থা করা, আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই সকল ভাঙ্গাচোরা সড়ক মেরামত বা পুনর্নির্মাণ করা, ধানম-ি লেক এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা, আবাসিক এলাকায় তৈরি গেটের সংখ্যা বাড়ানো, যুবক ও বৃদ্ধদের পড়ার জন্য লাইব্রেরী স্থাপন, লেকের মধ্যে মিউজিক্যাল ফাউন্টেন, থ্রিডি লেজার শো চালু করাসহ পুরো ধানম-ি এলাকাকে নবরূপে সাজানোর ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে হাইকোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক আবাসিক এলাকার কমার্শিয়াল স্থাপনাসমূহ ধীরে ধীরে অপসারণের উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানান।
অনুষ্ঠানে ধানম-ির বাসিন্দারা উক্ত এলাকার ভাঙ্গা রাস্তা, রাতের বেলায় পর্যাপ্ত আলো না থাকায় নামাজ আদায় করতে না পারা, নিরাপত্তার মাঝেও ছিনতাই হওয়া, রাস্তার ওপর গাড়ি রেখে যানজট তৈরি হওয়া, আবাসিক এলাকায় অবৈধভাবে তৈরি হওয়া স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে উচ্চ আদালতের নির্দেশ মেনে সরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থার দাবি করেন। একই সঙ্গে ভাঙ্গা রাস্তা ঠিক না করা, রাস্তা কাটলে বছরের পর বছর ধরে পড়ে থাকা, বিভিন্ন মহল্লায় ওয়াসার স্যুয়ারেজের পানি উপচে রাস্তায় বয়ে যাওয়া, ফুটপাথের উপর রাখা গাড়ি জরিমানার মাধ্যমে উচ্ছেদ করা, একটি স্কুল কলেজের ছাত্র বা ছাত্রীর জন্য একটি গাড়ির পদ্ধতি বন্ধ করা, স্কুলগুলোর জন্য স্কুলবাস চালু করা, রাতের বেলায় যত্রতত্র ও বাড়ির সামনে ফুটপাথে ছেলেমেয়েদের আড্ডা দেয়া, সন্ধ্যার পর লেকের পাশে চলমান কিশোর-কিশোরীদের অশালীন কাজকর্ম বন্ধ করা, স্কুল-কলেজের সামনে ও ফুটপাথে গাড়ি পার্কিং বন্ধ করার জন্য নাগরিকগণ জোর দাবি তুলেন। এছাড়া নাগরিকগণ ধানম-িতে নির্দিষ্ট কোন স্থানে ময়লা রাখার ব্যবস্থা না থাকা ও রাস্তার উপর থেকে ময়লার কন্টেনার সরাতে অনুরোধ করেন। এছাড়া কয়েক নাগরিক যে কোন এলাকার নাগরিক সমস্যাসমূহ সরাসরি দেখতে মেয়র সাঈদ খোকনকে কোন প্রকার প্রটোকল না নিয়ে গোপনে পরিদর্শনের জন্য বিশেষ অনুরোধ করেন। উপস্থিত জনগণের দাবির প্রেক্ষিতে মেয়র তাৎক্ষণিক বেশ কিছু সমস্যা সমাধানের নির্দেশ দেন।
উদ্বোধনী বক্তব্যে মেয়র বলেন, সরাসরি জনগণের নিকট থেকে সংশ্লিষ্ট এলাকার সমস্যার কথা শুনে তা সমাধানের ব্যবস্থা গ্রহণ করব। জনগণের সমস্যা সরাসরি শুনতেই আমরা বিভিন্ন ওয়ার্ডে এ ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি। সমস্যার মধ্যে যেসব সমস্যা আজই সমাধান সম্ভব এখনই সমাধান করব। যেসব সমস্যা একটু বড় আকারের তা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সমাধান করব। হাজারও সমস্যা আছে সাধ্যমতো তা সমাধানের জন্য জনগণকে দেয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ সচেষ্ট থাকব।
মেয়র বলেন, প্রাণের শহর ঢাকার ঐতিহ্যবাহী আবাসিক এলাকা হচ্ছে ধানম-ি। যেখানে সমাজের সম্ভ্রান্ত লোকদের বসবাস। আমি নির্বাচিত হওয়ার পর এ এলাকার প্রায় ৮০ ভাগের বেশি রাস্তার নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেছি। আমরা নিজেদের উদ্যোগে অনেক সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি, তবে এর বাইরেও অনেক সমস্যা আমাদের অগোচরে থাকতে পারে। মেয়র বলেন, ধানম-িকে নবরূপে সাজাতে আমরা ধানম-ি লেকের পানি পরিষ্কার করার ব্যবস্থা নিয়েছি। একই সঙ্গে পানির প্রবাহ যাতে সারাবছরই বহমান থাকে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ধানম-ি এলাকার রাস্তায় বাতি লাগানোর ঘোষণার কোন বাস্তবায়ন আজও কেন হচ্ছে নাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, আমরা ১৬৭টি এলইডি লাইট স্থাপন করে ১৫নং ওয়ার্ডে কাজ শুরু করেছি। আগামী জানুয়ারি মাসের মধ্যে ১৪শ’ এবং ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে পুরো ধানম-ি এলাকা এলইডি লাইট স্থাপন করে আলোকিত করা হবে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও দুর্গন্ধ ছড়ানোর বিষয়ে এলাকাবাসী একজনের আলোচনার প্রেক্ষিতে কাউন্সিলর বলেন, ১৬৭টি ভ্যান প্রতিদিন সার্ভিস দেয়। প্রয়োজনে আরও ভ্যান বাড়ানো হবে। ১২/এ নম্বর রোডের উপর সারাবছরের দুর্গন্ধ দূর করতে ব্লিচিং পাউডার দিয়ে দুর্গন্ধ বন্ধের জন্য মেয়র নির্দেশনা দেন। ধানম-ি লেক এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা, গেটের সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়ে মেয়র বলেন, দায়িত্বরত ৭০ জন গার্ডের সঙ্গে জানুয়ারি মাসে আরও ৫০ জন গার্ড বৃদ্ধি করা হবে।
রাস্তায় অযাচিত কার পার্কিং অপসারণের জন্য এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ধানম-ির এসি (ট্রাফিক) হাসান মোস্তফা জানান, এ এলাকায় ইংলিশ মিডিয়ামসহ ১০০টির বেশি স্কুল রয়েছে। প্রতিদিন হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী অভিভাবক আসা-যাওয়া করে। প্রতি স্কুলে ২০০ থেকে ৩০০ গাড়ি আসে যায়। অথচ এর জন্য কোন পার্কিংয়ের ব্যবস্থা নেই। একটি শিশুর জন্য একটি গাড়ি ব্যবহার পরিহার করলে অনেকাংশে যানজট কমে যাবে। এলাকাবাসী আমিনুল হক জানান, ১৩ ও ১৪নং রোডে ওয়াসার পানি ওভারফ্লো হয়, ওয়াসার কাজে রাস্তা কাটা হয়েছে কিন্তু মেরামত করা হয়নি। তিন দিনের মধ্যে রাস্তার পানি বন্ধ করে রাস্তা মেরামতের জন্য নির্দেশনা দেন মেয়র।
ধানম-ি থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামাল আহমেদ বলেন, এলইডি লাইটের সুবিধা নিয়ে ছেলেরা রাত ৯টা হতে গভীর রাত পর্যন্ত ক্রিকেট খেলে, যাতে প্রায়শই নানান অসুবিধার সৃষ্টি হয়। এলাকার অভিভাবকদের সচেতন হয়ে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেন মেয়র। এছাড়া রাত দশটার পর এ স্বচ্ছ আলোর পরিমাণ কিছুটা কমিয়ে দেয়ার ঘোষণা দেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনের নিউজ প্রেজেন্টার নাফিস ইমতিয়াজ উদ্দিন বলেন, বিল পরিশোধ করা সত্ত্বেও ডিপিডিসির লোকেরা তার বাসার বিদ্যুতের লাইন কেটে দিয়েছে। মেয়র তাৎক্ষণিকভাবে ডিপিডিসির এমডিকে ফোন করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেন। এলাকাবাসী সৈয়দ জাহাঙ্গীর হায়দার জানান, লেক এলাকায় একটি লাইব্রেরী স্থাপনের পরিকল্পনা থাকলেও তা করা হয়নি। সঙ্গে সঙ্গেই মেয়র একটি লাইব্রেরী করার আশ্বাস দেন। এছাড়াও মেয়র বলেন, লেক এলাকায় সিসি ক্যামেরা, মিউজিক্যাল ফাউন্টেন, থ্রিডি লেজার শোসহ পুরো ধানমণ্ডি এলাকাকে নবরূপে সাজানো হবে। এছাড়া মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক আবাসিক এলাকার কমার্শিয়াল স্থাপনাসমূহ ধীরে ধীরে অপসারণ করা হবে বলেও মেয়র জানান।