ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা নির্মূল হোক বন্ধ

প্রকাশিত: ০৩:৪৭, ২১ নভেম্বর ২০১৬

রোহিঙ্গা নির্মূল হোক বন্ধ

যতই বলা হোক ‘থামাও থামাও এই মর্মঘাতী বিনাশ’ ততই নৃশংসতার মাত্রা বাড়ছে। গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ দেশ থেকে বিতাড়ন- সবই চালানো হচ্ছে। নিরীহ, অসহায়, নিরস্ত্র রোহিঙ্গারা এই বর্বরতার শিকার হয়ে নিষ্পেষণের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছেছে। সাংবিধানিক, সামাজিক, মৌলিক অধিকার, ভোটাধিকার দূরে থাক, নাগরিক অধিকারটুকুও নেই রোহিঙ্গা নামক জাতিসত্তার জন্মভূমি মিয়ানমারে। নির্বিচারে গুলি চালিয়ে এমন বীভৎস হত্যাযজ্ঞ চালানোর ঘটনা বিশ্ববাসীকে হতবাক করে বৈকি! মানবতাবাদী গৌতম বুদ্ধের অনুসারী ‘জীবে হত্যা মহাপাপ’ কিংবা অহিংসা পরম ধর্ম, বলে যতই ধর্মবোধে লালিত হোক, রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে তাদের অবস্থান সম্পূর্ণ বিপরীত। ‘ক্লিন রোহিঙ্গা অপারেশন’ এর নামে রোহিঙ্গাদের ওপর সে দেশের সেনা, পুলিশ ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বর্বরতা অব্যাহত রয়েছে। হত্যা, ধরপাকড়, ধর্ষণ, জ্বালাও পোড়াওসহ এমন কোন ঘটনা নেই, যা ঘটছে না। মানবতাবিরোধী জঘন্য অপরাধ তারা দিনের পর দিন ঘটিয়ে চলেছে সেই ১৯৭৮ সাল থেকে। রোহিঙ্গাদের জাতিগত স্বীকৃতি না দিয়ে আন্তর্জাতিক সকল আইন-কানুন লঙ্ঘন করে চলছে সেদেশের সেনাবাহিনী। ২০১৫ সালের নির্বাচনে নোবেল শান্তিজয়ী নেত্রী আউং সান সুচি ও তার দল ক্ষমতায় আসার পরও অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। অবশ্য শাসন ক্ষমতায় সেনাবাহিনী বহাল তবিয়তে রয়েছে। এক-চতুর্থাংশ আসন সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। দেশটির অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা দফতরও তাদের করায়ত্ব। ফলে সুচি সরকার আদতে কতটা ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারছে, সে নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। আরাকানে সংঘর্ষ বন্ধে আইনের শাসন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলেছিলেন সুচি। সুচি রাখাইন বিষয়ে কমিশনও গঠন করেছেন। এই কমিশনের প্রধান জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান। তিনি এলাকা পরিদর্শনও করেছিলেন। কিন্তু যথাযথভাবে কাজ করার সুযোগও মিলছে না। রোহিঙ্গাদের ওপর হামলার ঘটনায় তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আইন মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে সব সম্প্রদায়ের সহিংসতা পরিহারের কথা বলেছিলেন। কিন্তু তার কথায় কেউ কর্ণপাত করছে বলে মনে হয় না। এমনকি সহিংসতা বন্ধে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করছে না জাতিসংঘ। তারা গণহত্যা বন্ধে কোন পদক্ষেপই নিচ্ছে না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও যেমন নিশ্চুপ, তেমনি ওআইসি পর্যন্ত মুখ খুলছে না। বরং তাদের কর্মকা- এই ধারণা দেয় যে, তারা মিয়ানমারের পক্ষে কাজ করছে। রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার বিষয়টিও কেউ কিছু বলছেন না। বরং জাতিসংঘ রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের জন্য বাংলাদেশের সীমান্ত খোলা রাখার আহ্বান জানিয়ে এমন পরামর্শও দিচ্ছে যে বাংলাদেশ যেন নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে। আর মিয়ানমারকে সহিংসতা বন্ধের কোন চাপ না দিয়ে বলছে, মিয়ানমার সরকার যেন সেখানে মানুষদের নিয়মানুযায়ী রক্ষা করে। ৯ অক্টোবর সীমান্ত চৌকিতে সন্ত্রাসী হামলার পর রাজ্যজুড়ে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। তারা গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিচ্ছে। হেলিকপ্টার গানশিপ ব্যবহার করে রোহিঙ্গাদের হত্যা করছে। এ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা তিন শতাধিক। বিশ্বের রাষ্ট্রহীন নাগরিক হিসেবে অভিধাপ্রাপ্ত রোহিঙ্গারা সেই ১৯৭৮ থেকে বাংলাদেশে আশ্রিত। সংখ্যায় এরা ৫ লাখেরও বেশি। বাংলাদেশ এই শরণার্থীর ভার বইতে পারছে না দীর্ঘদিন ধরে। মাঝে কিছু রোহিঙ্গাদের ফেরত নিলেও, এখন আবার তাদের ঠেলে পাঠানো হচ্ছে বাংলাদেশে। যদিও বাংলাদেশ সীমান্তে কড়া পাহারা বসিয়েছে এবং অনেক রোহিঙ্গাকে সীমান্ত থেকে ফেরত পাঠিয়েছে। নিজ দেশে পরবাসী রোহিঙ্গাদের রক্ষায় জাতিসংঘসহ বিশ্ব বিবেক এগিয়ে না এলে রোহিঙ্গারা বিলুপ্ত হয়ে যেতে বাধ্য। বাংলাদেশ চায় রোহিঙ্গা শরণার্থীরা ফেরত যাক এবং নিজ দেশে শান্তিতে বসবাস করুক। মিয়ানমার সরকারের বোধোদয় সবার আগে কাম্য।
×