ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

ধর্ষক রুবেল ফের ধরা পড়ল, ৬ দিনের রিমান্ডে

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১৬ নভেম্বর ২০১৬

ধর্ষক রুবেল ফের ধরা পড়ল, ৬ দিনের রিমান্ডে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গারো তরুণী ধর্ষণের বহুল আলোচিত প্রধান আসামি আদালত থেকে পালানো রাফসান হোসেন ওরফে রুবেল অবশেষে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে। এর আগে রুবেলকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। দ্বিতীয় দফায় গ্রেফতারের পর রুবেলকে ছয় দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন ঢাকার সিএমএম আদালত। রুবেলকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তার দেয়া তথ্য মোতাবেক অন্য আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান আছে। মঙ্গলবার ভোরে বাড্ডা থানাধীন মধ্যবাড্ডায় অবস্থিত সুবাস্তু টাওয়ারের কাছ থেকে সাদা পোশাকধারী পুলিশ রুবেলকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। গ্রেফতারকালে রুবেলের হাতে হাতকড়া ছিল। মঙ্গলবার দুপুরে ডিএমপির গুলশান ডিসি অফিসে এক সংবাদ সম্মেলনে গুলশানের উপকমিশনার এসএম মোস্তাক আহমেদ খান জানান, রুবেল নিম্নআদালতের বিচারকের খাস কামরা থেকে গত রবিবার হাতকড়া পরা অবস্থায় পালিয়ে যায়। রুবেলের ডান হাতে হাতকড়া ছিল। পালানোর সময় হাতকড়াসহ হাতটি পকেটে ঢুকিয়ে পালায়। প্রথমে সে একটি তুলার দোকানে ঢুকে। সেখান থেকে তুলা নিয়ে হাতকড়ার উপরে ব্যান্ডেজ করে। এরপর ব্যান্ডেজ করে মসজিদে বসে সে আছরের নামাজ আদায় করে। মসজিদ থেকে বের হয়ে পাশের দোকান থেকে একটি সিগারেট ও এক কাপ চা পান করে। তার এক আত্মীয়ের কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে এক হাজার টাকা নেয়। সন্ধ্যার পর সে মসজিদ থেকে বের হয়ে ব্যান্ডেজ হাতে বাড্ডায় ফিরে যায়। এর পর সে অসুস্থতার ভান করে বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে বেড়াচ্ছিল। বাড্ডা থানাধীন ভাটারার নুরের চালা এলাকায় গিয়ে একটি বাড়ির ছাদে রাতযাপন করে। সকালে টঙ্গি বোর্ড বাজারে যায় হাতকড়া কাটাতে। হাতকড়া কাটাতে ব্যর্থ হয়ে সোমবার সে আবার বাড্ডায় ফিরে। সুবাস্তু টাওয়ারের পেছনে খালের পাশে গিয়ে দুটি ঘরের গলিতে খালি জায়গাতে রাতে ঘুমায়। সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্যরা পিছু নিয়ে মঙ্গলবার সকালে উত্তর বাড্ডা থেকে রুবেলকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। আদালত থেকে পালানোর কারণে রুবেলের বিরুদ্ধে রাজধানীর কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা হয়েছে। পুলিশ জানায়, রুবেল উত্তর বাড্ডার মিশ্রিটোলা এলাকার মফিজ উদ্দিন ওরফে মফু মিয়ার ছেলে। তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, ডাকাতির প্রস্তুতি, মাদকদ্রব্য ও সন্ত্রাসী ঘটনায় বাড্ডা থানায় আটটি এবং রামপুরা থানায় অস্ত্র আইনের একটি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলায় রুবেল সাজাপ্রাপ্ত। আমাদের কোর্ট রিপোর্টার জানান, মঙ্গলবার রুবেলকে আদালতে হাজির করে মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই বি এম মামুন দশ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। ঢাকার মহানগর হাকিম সাদবীর ইয়াসির আহসান চৌধুরী শুনানি শেষে আসামিকে ছয় দিনের রিমান্ডে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন। রুবেলের পক্ষে কোন আইনজীবী ছিলেন না। প্রসঙ্গত, গত ২৫ অক্টোবর বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে ওই তরুণী রাজধানীর উত্তর বাড্ডার পুরান থানার ৬ নম্বর সড়কের হাজী রুহুল আমীনের বাড়িতে যান হবু স্বামী রিপন ম্রংয়ের সঙ্গে দেখা করতে। রিপন আরও ৫/৬ জন গারো যুবকের সঙ্গে ওই বাড়ির মেসে বসবাস করতেন। মেসের ম্যানেজার হানিফের যোগসাজশে সালাহ উদ্দিন সালু মোবাইল ফোনে তার ঘনিষ্ঠ স্থানীয় সন্ত্রাসী রুবেলকে (৩০) মেসে ডেকে আনে। এরপর সন্ত্রাসী আল-আমিন, রনি, সুমন, নাজমুল ও সুমন ওই গারো তরুণীর হবু স্বামীকে মেসে নারী আনার অজুহাতে অপমান অপদস্থ করে। হবু স্বামীর সঙ্গে থাকা ১৭ হাজার টাকা ও একটি স্মার্টফোন ছিনিয়ে নেয়। গত ২৮ অক্টোবর ওই তরুণী বাদী হয়ে বাড্ডা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। দায়েরকৃত মামলায় ওই তরুণী দাবি করেন জোরপূর্বক তাকে পাশের হাজী মোশাররফ মিয়ার পরিত্যক্ত বাড়ির একটি রুমে নিয়ে রুবেল ধর্ষণ করে। মামলা দায়েরের দিনই রুবেলের সহযোগী সালাহ উদ্দিন গ্রেফতার হয়। গত ১১ নবেম্বর হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর থানাধীন রেলস্টেশন থেকে রুবেলকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-১ এর একটি দল। রুবেলের কাছ থেকে ওই গারো তরুণীর হবু স্বামীর কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়া স্মার্টফোন ও সতেরো হাজার টাকার মধ্যে সাড়ে ৯ হাজার টাকা উদ্ধার হয়। র‌্যাব রুবেলকে মামলাটির তদন্তকারী সংস্থা বাড্ডা থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। গত ১৩ নবেম্বর বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে পুলিশ রুবেলকে আদালতে হাজির করে। আদালতে রুবেলের ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়ার কথা ছিল। আদালতে হাজির করার পর রুবেল দোষ স্বীকার করতে রাজী হওয়ায় সিএমএম আদালতের ৮ তলার ২০ নম্বর আদালত কক্ষের ম্যাজিস্ট্রেট এমদাদুল হকের খাসকামরায় তাকে নেয়া হয়। বিচারক রুবেলকে চিন্তা ভাবনা করার সময় দিয়ে মামলা শুনানির জন্য এজলাসে ওঠেন। এমন সুযোগে রুবেল বিচারকের খাসকামরা থেকে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় বাড্ডা থানার উপপরিদর্শক ইমরান উল হাসান ও কনস্টেবল দীপক চন্দ্র পোদ্দারকে দায়িত্বে অবহেলার জন্য সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রুবেলকে হন্যে হয়ে খুঁজছিল।
×