ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

লেকভিউ আইল্যান্ড

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি কাপ্তাইয়ের পর্যটন স্পট

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১৫ নভেম্বর ২০১৬

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি কাপ্তাইয়ের পর্যটন স্পট

মাকসুদ আহমদ ॥ কাপ্তাই। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। এখানকার পাহাড় আর লেক হাতছানি দিয়ে ডাকছে পর্যটকদের। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত কাপ্তাই লেককে ঘিরে গড়ে তোলা ‘লেক ভিউ আইল্যান্ড’ সাড়া জাগাচ্ছে পর্যটকদের মাঝে। একদিকে নীল আকাশ। অন্যদিকে কাপ্তাই লেকের পানিতেও যেন নীলের আভাস পর্যটকদের বিমোহিত করে তুলছে নিমিষেই। জলকৌড়ি, জলকিন্নরী ও নীলকৌড়ি যেন লেকের পানিতে ভেসে পর্যটকদের হাসি আর আনন্দে মাতিয়ে তুলছে। রাতযাপনে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার মধ্যে পর্যটকরাও আয়োজকদের বার বার ফিরে আসার বাণী শোনাচ্ছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এ আয়োজন এখন হাতের মুঠোয় চলে এসেছে ফেসবুকের কল্যাণে। যোগাযোগ থেকে শুরু করে বুকিং এমনকি বিভিন্ন দিকনির্দেশনাও দেয়া রয়েছে অতিথিদের জন্য। পাহাড়ের ওপর দিয়ে বেয়ে চলা সড়কপথে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পরিবহনেই যেতে হবে কাপ্তাই। এখানে রয়েছে দেশের একমাত্র কর্ণফুলী পানিবিদ্যুত কেন্দ্র। সম্পূর্ণ সরকারী নিয়ন্ত্রণ ও বিজিবির প্রহরায় এ পানিবিদ্যুত কেন্দ্রে প্রবেশে রয়েছে নানা নিয়ম। এ পানিবিদ্যুত কেন্দ্রের গেট পার হলেই নখের পিঠের মতো মসৃণ আঁকাবাঁকা সড়ক চলে গেছে লেকের ধারে। অপরূপ দৃশ্য অবলোকন করতে প্রতিনিয়ত জেটিঘাট এলাকায় সর্বসাধারণ জড়ো হলেও লেকের অপর প্রান্তে থাকা এলাকা সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। ২০০৪ সালে এখানে গড়ে তোলা হয়েছিল কর্ণফুলী রিসোর্ট। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুদ্দিন হায়দার পিএসসি, রিজিওন কমান্ডার কাপ্তাইয়ের উদ্যোগ ও পৃষ্ঠপোষকতায় ২০০৪ সালের জানুয়ারিতে তৈরি হওয়া এ রিসোর্টের আনুষঙ্গিক কিছু পরিবর্তন এনে তৈরি করা হয়েছে এ নৈসর্গিক স্পট। এখন সেই স্থাপনায় গড়ে তোলা হয়েছে সিন্ধু সারস রেস্তরাঁ। রয়েছে হিলটপ কটেজ, মিনি সুইমিংপুল। অনেকটা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে হয় পাহাড়ের ওপর কৃত্রিম সুইমিংপুলের দিকে। জলকৌড়ি ও জলকিন্নরী নামক ইঞ্জিনের নৌকায় চড়ে সোজা চলে যাওয়া যায় লেকভিউ আইল্যান্ডে। সেখানেও রয়েছে নিসর্গ নিলীমা রেস্তরাঁ। রয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কটেজ। আরও কাঠ, কাচ আর রশিতে তৈরি ঝুলন্ত সেতু রয়েছে। গাছের মগডালে কাঠের কটেজ, কিডস জোন, ওয়াটার জেট স্কি, তাঁবু ও বাঁশের তৈরি বাঙ্কার আর জমিয়ে আড্ডা দেয়ার স্থানগুলো যেন আগতদের হাতছানি দিয়ে ডাকে। পাহাড় আর লেকের মিলনমেলায় গড়ে তোলা হয়েছে পিকনিক স্পট। ছুটির দিন ৫০ জনের জন্য পনেরো হাজার টাকায় স্পট ভাড়া পাওয়া যায়। সপ্তাহের অপর দিনগুলোতে পাঁচ হাজার টাকা ছাড় পাওয়া যায়। এ স্পটকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। আগতরা বার বার একই স্থানে ফিরে আসছে গ্লাস হাউস, রেস্টুরেন্ট, মাছ ধরার বিভিন্ন স্পট, ওয়াটার জেট স্কি, ঝুলন্ত ব্রিজ, কিডস কর্নার, বোট কটেজ, টি-হাউস, হাইকিং ও সুইমিংপুল এবং লেকভিউ আইল্যান্ডের টানে। দিনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সময় কাটাতে নির্দিষ্ট ফিতে মাছ ধরার ব্যবস্থা রয়েছে। হিলটপে রয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত জ্যোৎস্না চন্দ্রিমা আর অধরা নামের অবকাশযাপনে সুদৃশ্য কটেজ। বোট হাউস থেকে পূর্ণিমার চাঁদের আলো দেখা যায় লেকে ভাসতে ভাসতে। চারদিকে ঝিঁঝি পোকা আর শিয়ালের ডাকসহ বিভিন্ন পাখ-পাখালির গুঞ্জনে রাত্রি ক্রমশ ভোরের আলোয় পরিণত হয়। সুসজ্জিত আবাসস্থল খ্যাত এ বোটে পর্যটকরা জনপ্রতি ৮শ’ টাকায় লেক ভ্রমণ করতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে কমপক্ষে ছয়জন পর্যটক থাকতে হয়। রাতযাপনে ১৮ ঘণ্টার জন্য এ বোট হাউসের ভাড়া ১০ হাজার টাকা। ছয়জনের রাতযাপনের ব্যবস্থা আছে এতে। তবে হিলটপ কিংবা অন্যান্য অবকাশ স্থানগুলোতে তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে রাতযাপনের সুযোগ রয়েছে। সাত বছরের কম বয়সী শিশুরা এ স্পটে সুবিধা ভোগ করছে ৫০ ভাগ ছাড়ে। কর্মরত সেনা সদস্যরা ছাড় পাচ্ছেন শতকরা ২৫ ভাগ। এছাড়াও অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্যরা পাচ্ছেন ২০ ভাগ ছাড়। রেস্টুরেন্ট লেকভিউ শ্রাবণ, ইয়ামি ও সুধায় ফ্যামিলি প্যাকেজ ছাড়াও মেনু অনুযায়ী খাবার পরিবেশনের সুবিধা রয়েছে। গত ৪ অক্টোবর থেকে চালু হওয়া এ স্পটটি ফেসবুক পেজে লেকভিউ আইল্যান্ড/কাপ্তাই অথবা কাপ্তাই আইল্যান্ড ২০১৬ এ ঠিকানায় বিস্তারিত তথ্য রয়েছে। পর্যটকরা চাইলে পেজটি ভিজিট করতে পারে। জি-মেইলে লেকভিউ আইল্যান্ড ডট ২০১৬ এ ঠিকানায় বুকিং দেয়া যায়। তবে এক্ষেত্রে কমপক্ষে ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ ফি জমা দিয়ে বুকিং নিতে হয়। ট্রাস্ট ব্যাংকের চট্টগ্রাম সেনানিবাস শাখার হিসাব নং-০০০৬-০৩১০০৬৫৮১৩-এ অর্থ জমা দিতে হয়। মোবাইলে যোগাযোগ করা যায় -০১৭৬৯৩২২১৮২ নম্বরে।
×