ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অভাবনীয় বিজয়

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ১১ নভেম্বর ২০১৬

অভাবনীয় বিজয়

রাজনীতিতে বিতর্কের ঝড় তোলা একজন আগন্তুক হলেন বিশ্বের শক্তিধর দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্ণধার। বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে দৃশ্যপটে এখন রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড জন ট্রাম্প। চারজন প্রার্থী থাকলেও প্রেসিডেন্ট পদে ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটে তিনি নির্বাচিত হয়েছেন। পপুলার ভোটেও এগিয়ে। তার এই বিজয় অভাবনীয় যেমন, তেমনি অকল্পনীয়। গণমাধ্যমের জরিপ ও নানা হিসাব-নিকাশকে উৎপাটন করে চমক দেখিয়ে বিশ্বের ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্ট হলেন ব্যবসা থেকে রাজনীতিতে আসা ও সরকার পরিচালনায় অনভিজ্ঞ সত্তর বছর বয়সী ট্রাম্প। প্রার্থী বাছাই পর্বে দলীয় সতেরো প্রার্থীকে পরাজিত করে মার্কিন রাজনীতিতে বিস্ময় তৈরি করেছেন তিনি। আগামী ২০ জানুয়ারি শপথ গ্রহণ শেষে হোয়াইট হাউসে আসন গাড়বেন তিনি পরবর্তী চার বছরের জন্য। মাত্র সতেরো মাস আগে দলীয় রাজনীতিতে যোগদান এবং বাঘা বাঘা রাজনীতিককে পেছনে ফেলে দলের নেতাদের বিরোধিতা সত্ত্বেও তিনি প্রার্থী হতে পেরেছেন অনড় সিদ্ধান্তের কারণে। এক নগণ্য উচ্চাশা থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে আসীন হয়ে ওঠা ট্রাম্প আগামী পৃথিবীতে যে অসংখ্য গবেষণার বিষয় হবেন, তাতে মার্কিন সমাজ-অর্থনীতির সঙ্কট এবং বিশ্বায়িত অর্থনীতি ও রাজনীতির বিচিত্র আখ্যানের সঙ্গে আর একটি বিষয়ও থাকবে, ক্রোধের স্থূল প্রকাশে জনমানসের আকর্ষণ। নাট্যরঙ্গ, বিদ্রƒপ-আক্রমণের মাধ্যমে নিজেদের ক্ষোভকে দৃষ্টি আকর্ষক করে তোলার নাছোড় বাসনার ফসল তিনি ঘরে তুলেছেন। অত্যধিক তিক্ততা আর নোংরা বাগ্যুদ্ধ এবং দেশের ভবিষ্যত প্রশ্নে এতটা বিভক্তি নিয়ে মার্কিন ভোটারদের অতীতে কখনও ভোট দিতে দেখা যায়নি। শুরু থেকেই প্রার্থীদের তীব্র বাদানুবাদ বিশ্বকে হতবাক করেছে। আক্রমণ ব্যক্তি পর্যায়েও পৌঁছায়। কটুকথার ব্যবহারও কম হয়নি। ট্রাম্পের বর্ণবাদী ও ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক বক্তব্য মার্কিন শ্বেতাঙ্গ ভোটারদের অনুপ্রাণিত করেছে। গ্রেট আমেরিকার স্বপ্ন তিনি ছড়াতে পেরেছেন, তা বাহাত্তর শতাংশ শ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠীকে তার প্রতি আকৃষ্ট করেছেন। স্বপ্নের গ্রেট আমেরিকা হচ্ছে শ্বেত জাত্যাভিমানী আমেরিকান। ইস্যুকেন্দ্রিক নয় ব্যক্তিকেন্দ্রিক এই নির্বাচনে ট্রাম্প মার্কিন শ্বেতাঙ্গদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছিলেন। মার্কিন নাগরিকরা ক্ষমতাভোগী রাজনৈতিক নেতৃশ্রেণী হতে মুখ ফিরিয়ে তথাকথিত ‘সাধারণ অ-রাজনৈতিক’ প্রার্থীর প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন বৈকি। বৃহৎ পুঁজির সঙ্কোচনের দাম ক্রমে প্রাত্যহিক জীবনকে দিতে হয়েছে। শ্রমিকদের প্রকৃত আয় কমেছে। চাকরির সুযোগ ও ক্ষেত্র সঙ্কুচিত হয়েছে। সামরিক অভিযানের জন্য রাজস্বের ওপর প্রবল চাপ পড়েছে। সামাজিক নিরাপত্তামূলক কার্যক্রম ও বাজেট হ্রাস হয়েছে। মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত কর দাতারা দিনের হিসাব মেটাতে না পেরে খাবি খাচ্ছেন। ট্রাম্পের সমর্থকরা তাই প্রধানত দরিদ্র শ্বেতাঙ্গ। ২৮ শতাংশ মহিলার পাশে ৪৭ শতাংশ পুরুষ এবং পঞ্চাশ হাজার ডলারের নিচে আয় এমন নাগরিকরাই ছিলেন ট্রাম্পের ভোটার। বিজয়ের পরপরই ট্রাম্প তার বক্তব্যে সবাইকে নিয়ে নতুন আমেরিকা গড়ে তোলার অঙ্গীকার করেছেন। কিন্তু সমাজ যে ভাবে বিভক্ত হয়েছে, তাতে এই আহ্বান কতটা কার্যকর হবে, আগামী দিনই তা বলবে। ট্রাম্প কী করবেন, নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নে কী পদক্ষেপ নেন তা আগামীতে স্পষ্ট হবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের বিজয়কে অভিনন্দন জানাই। সেইসঙ্গে বাংলাদেশের সঙ্গে মার্কিন ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষেত্র সম্প্রসারিত হোক বাংলাদেশ তা প্রত্যাশা করে।
×