ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

দাউদকান্দিতে গাড়ির ওপর ব্রাশফায়ার, কুপিয়ে খুন

তিতাসের ইউপি চেয়ারম্যান মনিরকে নৃশংসভাবে হত্যা

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ৯ নভেম্বর ২০১৬

তিতাসের ইউপি চেয়ারম্যান মনিরকে নৃশংসভাবে হত্যা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আবারও ফেনীর স্টাইলে নিজ গাড়িতে হামলা চালিয়ে কুমিল্লার তিতাস উপজেলার জিয়ারকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রিয় চেয়ারম্যান মনির হোসেন সরকারকে (৩৬) নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এ সময় তার সহযোগী মহিউদ্দিন ভুইয়া (১৮) খুন হন। এই হামলায় তিনজন গুরুতর আহত হয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার সকাল পৌনে ৮টার দিকে কুমিল্লা দাউদকান্দি উপজেলার গৌরিপুর আনোয়ার হাসপাতালের সামনে ফিলিং স্টেশনে দিকে চেয়ারম্যান মনির হোসেন সরকারের বহনকারী মাইক্রোবাস যানজটে আটকে পড়ে। এ সময় ১০-১২ জন ‘সন্ত্রাসী’ হেঁটে এসে তাদের গাড়ি লক্ষ্য করে ব্রাশফায়ার করে। এরপর সন্ত্রাসীরা চেয়ারম্যান মনির হোসেনকে গাড়ি থেকে নামিয়ে মাথায় এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও গুলি চালিয়ে পালিয়ে যায়। এ সময় গাড়িতে থাকা চেয়ারম্যান মনিরসহ ৫ জন গুরুতর আহত হন। পরে তাদের উদ্ধার করে সকাল ৯টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে আনা হয়। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক চেয়ারম্যান মনির হোসেন ও তার সহযোগী মহিউদ্দিনকে মৃত ঘোষণা করেন। আর অলি (৩০), সুমন (২২) ও ইসমাইল নামে তিনজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় ভর্তি করা হয়। খবর পেয়ে সকাল ১০টার দিকে হাসপাতালে ছুটে আছেন নিহত চেয়ারম্যানের আত্মীয় স্বজন, বন্ধু ও সমর্থকরা। বুকফাটা আর্তনাদ ও কান্নায় সেখানকার পরিবেশ ভারি হয়ে উঠে। ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির এসআই বাচ্চু মিয়া জানান, সকালে পৌনে ১০টার দিকে পাঁচজনকে রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসক চেয়ারম্যান মনির হোসেন ও মহিউদ্দিনকে মৃত ঘোষণা করেন। হতাহতদের সঙ্গে হাসপাতালে আসা মিন্টু মিয়া সরকার সাংবাদিকদের জানান, সকাল সাড়ে ৭টার দিকে মাইক্রোবাসে করে চেয়ারম্যান মনির হোসেন তারা মামলার হাজিরা দিতে কুমিল্লা আদালতে যাচ্ছিলেন। পথে গৌরিপুর আনোয়ার হাসপাতালের সামনে তাদের গাড়িটি যানজটে আটকা পড়ে। এ সময় হঠাৎ করে হই হই করে ১০-১২ জন ‘সন্ত্রাসী’ হেঁটে এসে তাদের গাড়ির লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে। এরপর চেয়ারম্যান মনিরকে গাড়ির থেকে বের করে এনে মাথায় এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। এক পর্যায়ে তার বুকে ও পেটে এলোপাতাড়ি গুলি করে পালিয়ে যায় সন্ত্রাসী। তাদের লোকজন পরে আহতদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানান, সকালে ব্যস্ততম গৌরীপুর বাজার সড়কে প্রকাশ্যে চেয়ারম্যান ও তার সহযোগীকে নির্মমভাবে খুন হওয়ায় এলাকায় থমেথমে অবস্থা বিরাজ করছে। এর আগে অধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র একইস্থানে গৌরপুর বাজারে ব্রাশফায়ারে নূরুজ্জামান চেয়ারম্যানকে খুন করা হয়। এলাকাবাসীর অভিযোগ করেন, দুই যুগ ধরে জিয়াকান্দি ইউনিয়নের একাধিক চেয়ারম্যান একই কায়দায় খুন হয়েছে। আর প্রায়শই আধিপত্যকে কেন্দ্র করে খুনের ঘটনা ঘটছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানান। এদিকে চেয়ারম্যান মনির হোসেনের খুনের ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। এলাকাবাসীরা জানান, যারা মনিরের উত্থানে ভাল চোখে দেখেনি। তারই তাকে হত্যা করেছে। অবিলম্বে মনিরের খুনীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। নিহতের ভাই আমানউল্লাহ জনকণ্ঠকে জানান, এবার কুমিল্লার দাউদকান্দি তিতাস উপজেলার জিয়ারকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের মনির হোসেন সরকার আওয়ামী লীগ থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। পিতা মৃত রিয়াজ উদ্দিন সরকার। ৫ ভাই ৪ বোনের মধ্যে সবার ছোট মনির হোসেন। তিনি জানান, সকালে একটি মামলা হাজিরা দিতে যাওয়ার সময় গৌরপুর ফিলিং স্টেশনের সামনে ১০-১২ সন্ত্রাসী তার গাড়ি লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে। পরে মনিরকে গাড়ি থেকে নামিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে খুন করে। আমানউল্লাহ জানান, যারা মনিরের উত্থানে ভাল চোখে দেখেননি। তারা পরিকল্পিতভাবে এই খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে। তিনি জানান, আমার ভাই মনির গ্রামের মানুষের সুখ-দুঃখ এগিয়ে যেতেন। এজন্য এলাকার মানুষের কাছে সে খুব জনপ্রিয় ছিল। আমি আমার ভাইয়ের হত্যাকারীর গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। এদিকে দুপুর ১টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে শাহবাগ থানার এসআই জাহাঙ্গীর আলম মনির হোসেন ও তার সহযোগী মহিউদ্দিনের লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে। বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে ঢামেক ফরেনসিক বিভাগে প্রভাষক সহকারী অধ্যাপক ডাঃ প্রদীপ বিশ্বাস তাদের লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেন। ফরেনসিক বিভাগ সূত্র জানায়, মনির হোসেনের পেটে বাম ও ডানপাশে চারটি গুলিবিদ্ধ হয়েছে। তিনটি তার দেহ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। আর অন্য পেট বেদ করে পিঠ দিয়ে বের হয়ে যায়। তার মাথায় একাধিক ধারালো অস্ত্রের কোপের চিহ্ন ছিল। অপরদিকে মহিউদ্দিনের পিটের বাম পাশে গুলি লেগে বুকের ডান পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়। এতে তারও মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে বিকেল ৪টার দিকে মনিরের লাশ তার ভাই আমানউল্লাহের কাছে হস্তান্তর করা হয়। চেয়ারম্যান মনির হোসেনের লাশ তার গ্রামের বাড়ি জিয়াকান্দি নোয়াগাঁওয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। রাতে তার নির্বাচনি এলাকা জিয়াকান্দি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। উল্লেখ্য, এর কয়েক বছর আগে ফেনীতে প্রাকাশ্যে ব্যস্ততম সড়কে নিজ গাড়িতে ব্রাশফায়ার করে ও পুড়িয়ে উপজেলার জনপ্রিয় চেয়ারম্যান একরামুলকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
×