ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

একাত্তরের অবৈধ দখল

প্রকাশিত: ০৪:০৭, ৬ নভেম্বর ২০১৬

একাত্তরের অবৈধ দখল

প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে অবৈধ দখলে থাকা জমি অবশেষে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন। এই দীর্ঘ সময়ে কোন সরকারই এ জায়গার বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। বিভিন্ন সময়ে অবৈধ দখল উচ্ছেদ অভিযান চালানো হলেও এই জমি তার আওতার বাইরে থেকে গেছে। কেন থেকে গেছে, তার জবাব দিতে পারে জমি বরাদ্দকারী ও স্থাপনা নির্মাণের অনুমতিদাতা প্রতিষ্ঠান রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ তথা রাজউক। অথচ এই অবৈধ দখলে থাকা জমির স্থাপনার কারণে বনানীর ২৭নং সড়কটি সঙ্কীর্ণ হয়ে পড়েছিল। যে কারণে সেখানে সব সময় যানজট লেগে থাকে। যানজট নিরসনে পদক্ষেপ গ্রহণের সময় সিটি কর্পোরেশনের দৃষ্টিগ্রাহ্য হয় যে, জমিটি অবৈধভাবে দখল করা। আর দখলকারী একজন চিহ্নিত কুখ্যাতজন। পাকিস্তান পর্বে সামরিক জান্তাশাসক আইয়ুব খানের পদলেহী হিসেবে চিহ্নিত ‘বটতলার উকিল’ হিসেবে পরিচিত ব্যক্তিটি পূর্ব বাংলার মানুষের কাছে সেই সময় ছিল ঘৃর্ণিত। বিশ্বস্ত এবং বশংবদ বলেই পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান তাকে পূর্ব পাকিস্তানের গবর্নর পদে বসান ১৯৬২ সালে। বাঙালী জাতির বিরুদ্ধে তার নিন্দিত অপতৎপরতা সর্বত্র ঘৃণার অধিকারী এই ব্যক্তি আবদুল মোনায়েম খান। দেশবাসী তো বটেই স্থানীয় জনগণও তাকে ঘৃণার চোখে দেখে এখনও। পারতপক্ষে তাই এই বাড়িটিতে কেউ যায় না। ঊনসত্তর সালে গণঅভ্যুত্থানে আইয়ুব খানের সঙ্গে সঙ্গে তার কেনা গোলাম মোনায়েম খানও ক্ষমতাচ্যুত হয়। তারপর আত্মগোপনে থাকে। একাত্তরে পাকিস্তানী সামরিক জান্তার গণহত্যা এবং বাঙালীবিরোধী সশস্ত্র কর্মকা-কে সমর্থন জানিয়ে হানাদারদের সহযোগী হিসেবে ঘৃণ্য তৎপরতা চালায়। মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষোভ বাড়ে। এক কিশোর মুক্তিযোদ্ধা তাকে নিধন করে। হানাদার বাহিনী তার লাশ দাফন করলেও মুক্তিযোদ্ধারা কবর উপড়ে ফেলেছিল। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাঙালীর প্রতি বিশ্বাসঘাতক মোনায়েম খান বনানীতে পাঁচ বিঘা জমি দখল করে নেয়। ঢাকা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট তাকে ১০ কাঠা জমি বরাদ্দ করেছিল। এর আয়তন ছিল লম্বায় ২০২ ফুট ও প্রস্থে ৩৬ ফুট। এখানে একতলা ভবন তৈরি করে ভোগদখল করে আসছিল তার বংশধররা। গাড়ি বিক্রির শোরুমও স্থাপন করা হয়। বনানী কবরস্থান সড়কে সরকারী প্রায় ৫ বিঘা জমি দখল করে নেয় একাত্তরেই মোনায়েম খান। লুটেরা চরিত্রের বহির্প্রকাশ এভাবেও ঘটিয়েছে সে। এই স্থানে গড়ে তোলা হয় ‘বাগ-ই-মোনায়েম।’ অথচ এই স্থানটি রাজউকের সবুজ বেষ্টনীর আওতায় ছিল। ১১০/এ নম্বরে ভুয়া হোল্ডিং বানিয়ে জমিটি দখল করা হয়। তার বংশধররা দখল বৈধ রাখার জন্য এখানে একটি স্কুল গড়ে তোলে। জমিটি সীমানা প্রাচীর দিয়ে এমনভাবে ঘেরাও ছিল যে, বাইরে থেকে ভেতর দেখা যেত না। এসব কর্মকা-ে সার্বিক সহায়ক ছিল রাজউকের একটি দুর্নীতিবাজ ও স্বাধীনতাবিরোধী চক্র। কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরের মোয়ায়েম খান ছিল মুসলিম লীগ নেতা। পূর্ব বাংলার স্বাধীনতার আন্দোলন দমন ও বাঙালী নিধনে আইয়ুবসহ পাকিস্তানী হানাদারদের সহযোগী ছিল। তার এক নাতি সম্প্রতি কল্যাণপুরে জঙ্গী আস্তানায় নিহত হয়। সে নব্য জেএমবির সদস্য। এই উচ্ছেদ অভিযানটি মেয়র আনিসুল হকের কাছে ইতিহাসের স্মরণীয় দিন হিসেবে প্রতিভাত হয়ে থাকবে। অবৈধ দখলদারের পাশাপাশি স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির জমি ও সম্পত্তি অধিগ্রহণ করা দেশ ও জাতির স্বার্থে জরুরী। বাগ-ই মোনায়েমে উচ্ছেদের জন্য সংশ্লিষ্টরা সাধুবাদ পাবার যোগ্য। এই সম্পত্তি এখন জনগণের কাজে ব্যবহার উপযোগী করাই হচ্ছে বাস্তবসম্মত কাজ।
×