ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী বিচার

রাজাকার লিয়াকত আলী ও আলবদর আমিনুলের বিচার শুরুর আদেশ

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২ নভেম্বর ২০১৬

রাজাকার লিয়াকত আলী ও আলবদর আমিনুলের বিচার শুরুর আদেশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত হবিগঞ্জের দুই রাজাকার লাখাই থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি রাজাকার কমান্ডার মোঃ লিয়াকত আলী ও কিশোরগঞ্জের আলবদর আমিনুল ইসলামের বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। পলাতক এই দুই আসামির বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে। প্রসিকিউশনের প্রারম্ভিক বক্তব্য উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে ৪ ডিসেম্বর এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে শরীয়তপুরের রাজাকার ইদ্রিস আলী সরদারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের যুক্তিতর্ক শেষ হয়েছে। আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শুরু হয়েছে। আজ আবারও আসামিপক্ষের আইনজীবীকে যুক্তিতর্ক করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ মঙ্গলবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। হবিগঞ্জের লিয়াকত আলী একাত্তরে ছিলেন মুসলিম লীগের কর্মী। আর আমিনুল ইসলাম ওরফে রজব আলী ওই সময়ে ছাত্রসংঘের সদস্য ছিলেন। পলাতক এই দুই আসামির বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ গঠনের শুনানিতে প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন রানা দাশগুপ্ত, প্রসিকিউটর হৃষিকেশ সাহা ও রেজিয়া সুলতানা চমন। পলাতক দুই আসামির পক্ষে ছিলেন রাষ্ট্র নিয়োজিত আইনজীবী গাজী এমএইচ তামিম। ২০০৩ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত লিয়াকত আলী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। সভাপতি থাকা অবস্থাতেই যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ২০১০ সালে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ২০১৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দেয়। সেখানে বলা হয়, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাশাপাশি তিন থানা হবিগঞ্জ জেলার লাখাই, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর ও কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামে ব্যাপক যুদ্ধাপরাধ ঘটান দুই আসামি। চলতি বছর ১৮ মে সন্দেহভাজন দুই যুদ্ধাপরাধীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল। তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব না হওয়ায় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। শেষ পর্যন্ত তাদের পলাতক দেখিয়েই বিচার চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত দেয় ট্রাইব্যুনাল। দুই রাজাকারের বিরুদ্ধে ৭টি অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে- ১৯৭১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানী সেনা সদস্য ও রাজাকার বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে লাখাই থানার কৃষ্ণপুর গ্রামে গণহত্যা, লুটপাট। ওইদিন কৃষ্ণপুর গ্রামে নৃপেন রায়ের বাড়িতে রাধিকা মোহন রায় ও সুনীল শর্মাসহ ৪৩ জন হিন্দুকে গুলি করে হত্যা। হবিগঞ্জের লাখাই থানার চন্ডিপুর গ্রামে গণহত্যা ও লুটপাট। লাখাই থানার গদাইনগর গ্রামে গণহত্যা ও লুটপাট। অষ্টগ্রাম থানার সদানগর গ্রামে শ্মশানঘাটে হত্যা। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর থানার ফান্দাউক গ্রামের বাচ্চু মিয়াকে অপহরণ এবং রঙ্গু মিয়াকে অপহরণ ও হত্যা। অষ্টগ্রাম থানার সাবিয়ানগর গ্রামে চৌধুরী বাড়িতে হামলা চালিয়ে হত্যা ও সাবিয়ানগর গ্রামে খা বাড়িতে হত্যাকা-। মিষ্টি বিতরণ ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, হবিগঞ্জের দুই রাজাকার লিয়াকত ও রজব আলীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ গঠন, বিচার কার্যক্রম শুরুর লক্ষ্যে সাক্ষীর তারিখ নির্ধারণ করায় হবিগঞ্জ ও লাখাইসহ বি-বাড়ীয়ার নাসিরনগর, কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামেও ছড়িয়ে পড়েছে আনন্দের ঢেউ। মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি মোঃ আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ ওই অভিযোগ গঠনের আদেশ দেয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে এসব অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত ও বীরাঙ্গনা পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ মানুষ আনন্দ প্রকাশ করে। হবিগঞ্জ শহরের বেশ কয়েকটি এলাকায় মিষ্টি বিতরণ করা হয়।
×