ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

টেস্টে উদীয়মান ব্যাঘ্র!

প্রকাশিত: ০৩:৩৪, ২ নভেম্বর ২০১৬

টেস্টে উদীয়মান ব্যাঘ্র!

ঢাকার মাঠে ব্রিটিশ সূর্য অস্ত গেল! এই সূর্যাস্ত যেমন দুর্দান্ত, তেমনি আকর্ষণীয় ও মনোরম। বাংলাদেশ বনাম ইংল্যান্ড দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচের কথা বলা হচ্ছে এখানে। পাঁচদিনের ম্যাচের মধুর সমাপ্তি ঘটল তিনদিনেই। বিশেষ করে টেস্টে অনভিজ্ঞ ও অর্বাচীন বাংলাদেশের অপেক্ষাকৃত তরুণ খেলোয়াড়রা যে নিপুণ দক্ষতা এবং প্রবল আত্মবিশ্বাস নিয়ে দাপটের সঙ্গে খেলে বিজয় ছিনিয়ে নিল বহু বছরের অভিজ্ঞ ও সুদক্ষ ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়দের কাছ থেকে ভাষায় তার প্রকাশ দুরূহ। এই টেস্টটি এতটাই দৃষ্টিনন্দন, মারকুটে, তেজদীপ্ত ও উপভোগ্য হয়ে উঠে যে, কেবল নয়নসুখের সঙ্গে এর তুলনা চলে। শক্তিশালী প্রবল প্রতিপক্ষ দুর্ধর্ষ ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয়টা ১০৮ রানের বড় ব্যবধানে। এই গৌরবদীপ্ত বিজয়ে খেলোয়াড়দের পাশাপাশি দেশ ও জনগণ প্রবল আনন্দের জোয়ারে ভাসবে- তাতে আর বিচিত্র কী। অথচ ২০০৫ সালে ইংল্যান্ডে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট তিনদিনেই হারের মাধ্যমে শেষ হয়ে যাওয়ায় সে দেশের গণমাধ্যমে লেখা হয়েছিল, ‘ভবিষ্যতে এই বিতিকিচ্ছিরি দলটি যেন লর্ডসের ১০০ মাইলের মধ্যে পা রাখতে না পারে।’ না, বাঙালীর ঐতিহ্যসম্মত সৌজন্য, আতিথেয়তা ও ভদ্রতাবশত আমরা তা লিখব না। বরং দুই টেস্টের সিরিজটি ১-১-এ ড্র হয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের বিজয়ে অভিভূত হলেও আমরা অভিনন্দন জানাই ইংল্যান্ড দলকে। তবে এও সত্য যে, প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা ও আত্মবিশ্বাসের অভাবে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত প্রথম টেস্টটি বাংলাদেশের হয়েও হয়নি শেষ পর্যন্ত। অনুরূপ হয়েছে ওয়ানডে সিরিজের ক্ষেত্রেও। অতঃপর সঙ্গত কারণেই আশা করা যেতে পারে যে, অদূর ভবিষ্যতে যে কোন দেশ ও প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল খুঁটিনাটি ভুলগুলো শুধরে নিয়ে অর্জিত অভিজ্ঞতা কাজে লাগাবে বিজয় ছিনিয়ে নিতে। বাংলাদেশ আগেও টেস্ট জিতেছে সাতটি। তবে সেসবের প্রতিপক্ষ ছিল অপেক্ষাকৃত দুর্বল ও ভগ্নদশাপ্রাপ্ত জিম্বাবুইয়ে এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আর তাই এবারের প্রবল, শক্তিশালী ও সংঘবদ্ধ ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে বিজয়টি এক কথায় বাংলাদেশের জন্য বিশাল অর্জন। তাই ইংল্যান্ড দলের অধিনায়ক এ্যালিস্টার কুক অদম্য সাহসী বাংলাদেশের তরুণ দলটিকে কুর্নিশ জানাতে ভোলেননি। দ্বিতীয় টেস্টের অবশ্যই একচ্ছত্র নায়ক ১৯ বছরের মিরাজ। দুই ইনিংসে ১৫৯ রানে ১২ উইকেট নিয়ে টেস্টে বাংলাদেশের পক্ষে ম্যাচসেরা বোলিং বৈকি। দুই ম্যাচে ১৯ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের হয়ে এক সিরিজে সবচেয়ে বেশি উইকেট নেয়ার রেকর্ডও তার। অভিনন্দন বালক-বীর মেহেদী হাসান মিরাজকে। এর পাশাপাশি ইংল্যান্ড দলের বেন স্টোকসকে আউট করে তুখোড় অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের উদযাপনটিও ছিল উপভোগ্য। ম্যাচ শেষে ইংলিশ অধিনায়ক যথার্থ বলেছেন, এমন স্পিনিং উইকেট ও কন্ডিশনে বাংলাদেশী বোলাররা দুর্দান্ত। তবে এবার ইংল্যান্ড দলের বাংলাদেশ সফরে জয়-পরাজয় সবকিছু ছাপিয়ে জয়ী হয়েছে ক্রিকেট। কেননা নিরাপত্তার অজুহাতে দলটির বাংলাদেশ সফরটিই ছিল অনিশ্চিত। আর তাই ইংল্যান্ড দলের অধিনায়ক উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বলেছেন, ‘এখানে আসতে পেরে সত্যিই ভাল লেগেছে। অন্য দলগুলোরও আরও বেশি করে এখানে এসে খেলা উচিত।’ এই সরল সত্য উচ্চারণের জন্য এ্যালিস্টার কুককেও অভিনন্দন। বাংলাদেশ দলেরও অবশ্য কর্তব্য হবে দেশের বাইরে গিয়ে আরও বেশি করে খেলা। কেননা, স্পিন কন্ডিশনে খেলার পাশাপাশি বাউন্সি উইকেটে অভ্যস্ত ও সাবলীল হতে হবে টাইগারদের। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী অভিনন্দন জানিয়েছেন বাংলাদেশ দলকে। এই বিজয়ে সর্বস্তরের জনগণের পাশাপাশি আমরাও আনন্দিত ও গর্বিত। টেস্ট উইকেটে উদীয়মান ব্যাঘ্রদের অভিনন্দন।
×