ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নেতাকর্মীর নিয়ন্ত্রণ দরকার

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ৩১ অক্টোবর ২০১৬

নেতাকর্মীর নিয়ন্ত্রণ দরকার

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের নেতাকর্মীদের জনগণের দুঃখ-দুর্দশা, সমস্যা, কষ্টের কথা জেনে তা সরকারকে অবহিত করার যে নির্দেশ দিয়েছেন তাতে সাধারণ মানুষের প্রতি তাঁর ভালবাসা ও দায়বদ্ধতা আবারও স্পষ্ট হলো। এ জন্য তিনি সাধুবাদ পেতেই পারেন। কিন্তু কথা হলো কাজটা খুব সহজ হবে বলে মনে হয় না, তেমনি এর সাফল্য কতটা ঘরে তোলা যাবে তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। কেননা রাজধানীসহ তৃণমূলের কিছু নেতাকর্মীর সাম্প্রতিক কর্মকা- ও ভাবমূর্তি সাধারণ মানুষের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের গভীরতার মাত্রাকে করেছে প্রশ্নবিদ্ধ। প্রধানমন্ত্রী শুক্রবার রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের প্রেসিডিয়ামের প্রথম বৈঠকে সূচনা বক্তব্যে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আরও জনসম্পৃক্ত হওয়ার নির্দেশনা দিতে গিয়ে তাদের মনের কথা, চাহিদা, প্রত্যাশার কথা জানতে জনগণের দোরগোড়ায় যেতে বলেছেন। এটা তো সবাই জানেন একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় জনগণই হলো মূল ভিত্তি। তাদের অন্তরের স্পন্দন জানা সরকারের জন্য অত্যাবশ্যক। এমনটা না হলে ক্রমশই জনগণ থেকে দূরে সরে যেতে হয়। এ বাস্তবতা অব্যাহত থাকলে এক সময় গণবিচ্ছিন্ন হওয়াও বিচিত্র নয়। আওয়ামী লীগ এ উপমহাদেশে একটি অন্যতম প্রাচীন রাজনৈতিক দল। গণতন্ত্রের মাধ্যমে মানুষের সকল অধিকার প্রতিষ্ঠাই এর প্রধান লক্ষ্য। এর সত্যতা বাস্তবায়িত হওয়ার দৃষ্টান্ত ইতিহাস সাক্ষ্য দেবে যুগে যুগে। এ উপমহাদেশের গ-ি ছাড়িয়ে গেছে এর দায়বদ্ধতা ও সুনামের কথা। অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে এখন বাংলাদেশ ও বাঙালীর আশা ভরসারস্থল এ দলটি। রাজনৈতিক দলের চেয়ে এটা বর্তমান এক বিশাল প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বার বার পরীক্ষিত নেতা। জনগণকে দেয়া ইশতিহার, ঘোষণাপত্র ও সুনির্দিষ্ট কর্মপন্থা নিয়ে এগোচ্ছেন তিনি। এবারের কাউন্সিলে আবার নেতা নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম প্রেসিডিয়াম সদস্যদের সভায় যে নির্দেশ দিয়েছেন তা যথার্থই। তবে কথা হলো দলের কিছু বিপথগামী নেতাকর্মীর কারণে ভাবমূর্তিতে পড়েছে নেতিবাচক ছাপ। ছাত্রলীগ-যুবলীগের টেন্ডারবাজি, চাঁদবাজি, জমি দখল, নারী নির্যাতন, হত্যা, অভ্যন্তরীণ কোন্দলে উজ্জ্বল ভাবমূর্তি ম্লান হয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। রাজধানীতে অবৈধ হকার উচ্ছেদে ছাত্রলীগের অবৈধ অস্ত্রের প্রদর্শন ও ব্যবহার, গরিবের জন্য বরাদ্দ ১০ টাকা কেজি চাল নিয়ে যে লেজে-গোবরে অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে সেই বাস্তবতায় নেতাকর্মীদের সাধারণ মানুষ কিভাবে তাদের দরজায় স্বাগত জানাবে, কতটুকু বিশ্বাস করবেÑ এ বিষয়টি ভাবা দরকার। আগে এদের রাশ টেনে ধরা অত্যাবশ্যক। সাধারণ মানুষের কাছে নেতাকর্মীদের গ্রহণযোগ্যতা যদি প্রশ্নবিদ্ধ হয় তা হলে কাকে কিভাবে তাদের মনের কথা বলবে? আর কিভাবেইবা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়ন হবে? মনে রাখা দরকার, অনেক কষ্টে অর্জিত উজ্জ্বল ভাবমূর্তি এক লহমায় ম্লান হয়ে যেতে পারে সামান্য ভুলে। রাজনৈতিক দলের জন্য তো এ কথা আরও বেশি প্রযোজ্য। দলের সুফল ও অর্জন ধরে রাখতে এবং আরও বেশি গণআস্থা সৃষ্টিতে সৎ, চরিত্রবান ও নিয়ন্ত্রিত নেতাকর্মীর বিকল্প নেই। প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশ বাস্তবায়নে এটাও তেমনি জরুরী।
×