ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

উদীচীর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে নানা আয়োজন

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ৩০ অক্টোবর ২০১৬

উদীচীর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে নানা আয়োজন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রতিষ্ঠার চার যুগ পূর্ণ করল লড়াই-সংগ্রাম আর সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ঐতিহ্যবাহী সংগঠন বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। নানা আয়োজনে সংগঠনটির ৪৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্্যাপন করা হয় শনিবার বিকেলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে আয়োজিত অনুষ্ঠানের শুরুতে গণসঙ্গীত পরিবেশন করেন উদীচীর শিল্পীরা। তারা পরিবেশন করেন- ‘এখন দুঃসময় আর নয় দেরি নয়’, ‘আরশির সামনে একা একা দাঁড়িয়ে’ প্রভৃতি গান। এরপর সঙ্গীত পরিবেশন করেন প্রখ্যাত লোকসঙ্গীত শিল্পী সাইদুর রহমান বয়াতী ও তার দল। দু’টি লোক আঙ্গিকের প্রতিবাদী গান পরিবেশন করেন সাইদুর রহমান বয়াতীর শিষ্য আবুল বাশার বয়াতী। এরপর শুরু হয় আলোচনা পর্ব। উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান-এর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের সাধারণ সম্পাদক ইকবালুল হক খান, উদীচী কানাডা শাখার সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সংসদের সদস্য আজিজুল মালিক, উদীচী যুক্তরাজ্য শাখার নেতা ও কেন্দ্রীয় সংসদের সদস্য ডাঃ রফিকুল হাসান জিন্নাহ, উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি হাবিবুল আলম, উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক প্রবীর সরদার এবং উদীচীর অন্যতম উপদেষ্টা সাইদুর রহমান বয়াতী। আলোচনা পর্বে বক্তারা বলেন, প্রতিষ্ঠার ৪৮ বছরে উদীচীর ওপর বারবারই আঘাত হেনেছে প্রতিক্রিয়াশীল ও মৌলবাদী চক্র। ১৯৯৯ সালে যশোরে দ্বাদশ জাতীয় সম্মেলন এবং ২০০৫ সালে নেত্রকোনা উদীচী কার্যালয়ে বোমা হামলায় শিল্পী-কর্মীরা প্রাণ দিয়েছেন। কিন্তু, সত্য প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম, ন্যায়ের সংগ্রাম, মৌলবাদ-সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম থেকে উদীচীকে কখনই বিচ্যুত করা যায়নি। বক্তারা বলেন, যে একবার জীবনে উদীচীর আঙ্গিনায় পা রেখেছেন, তিনি কখনই সাবেক হতে পারেন না। উদীচীতে কোন সাবেক নেই, সবাই বর্তমান। শারীরিকভাবে সক্রিয় না থাকলেও মানসিকভাবে কেউ কখনই উদীচী থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারেন না। তাঁরা আরও বলেন, বর্তমানে আকাশ সংস্কৃতির সর্বব্যাপী প্রভাবের যুগেও উদীচীর কর্মীরা বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্যকে ধরে রাখার জন্য এখনও সংগ্রাম করে যাচ্ছে। আলোচনার পর গান ও আবৃত্তি পরিবেশন করেন উদীচীর শিল্পীরা। পদাবলী কীর্তন এ্যালবাম মেঘ যামিনীর প্রকাশনা ॥ বাঙালী সংস্কৃতির স্বতন্ত্র এক সঙ্গীতশৈলী কীর্তন। মূলত এই আঙ্গিকের গানে উঠে আসে ঈশ্বরের নাম, গুণ ও লীলা বিষয়ক বর্ণনা। পদাবলী সুর ও তালবদ্ধ গায়নরীতি হচ্ছে কীর্তন। তবে চর্চার অভাবে সঙ্গীতের এই ধারাটি এখন ম্রিয়মাণ। এ অবস্থায় বাংলা গানের এই প্রাচীন ধারার পুনরুজ্জীবনে এগিয়ে এসেছেন জনপ্রিয় লোকসঙ্গীত শিল্পী কিরণ চন্দ্র রায়। এই শিল্পীর কণ্ঠ আশ্রিত পদাবলী কীর্তন গান নিয়ে প্রকাশিত হলো মেঘ যামিনী শীর্ষক এ্যালবাম। বেঙ্গল ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত সঙ্গীত সঙ্কলনটির মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় শনিবার। সন্ধ্যায় রাজধানীর কাজী নজরুল ইসলাম এ্যাভিনিউয়ের ডেইলি স্টার-বেঙ্গল আর্টস প্রিসিঙ্কটে এ্যালবামটির প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। সঙ্কলনের মোড়ক উন্মোচন করেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কবি আবুল মোমেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী। আবুল মোমেন বলেন, এ এ্যালবামের মাধ্যমে আমরা বাঙালীর হাজার বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচিত হতে পারছি। পদাবলী বাংলা সাহিত্যের সব চেয়ে উজ্জ্বল সৃষ্টি। পদাবলীর মতো গীতিকবিতা এখনও বাংলা সাহিত্যে সব চেয়ে জনপ্রিয়। কিরণ চন্দ্র রায় বলেন, এই এ্যালবাম করার পেছনে আমার একটিমাত্র উদ্দেশ্য, সেটি হলো পুরনো ও মধ্যযুগের কিছু গান শ্রোতাদের হাতে তুলে দেয়া। পদাবলী দিয়ে শুরু হয়েছিল বাংলা গানের উৎকর্ষ। বর্তমান শিল্পী ও শ্রোতাদেরও অবশ্যই পদাবলী গান সম্পর্কে ধারণা থাকা উচিত, এছাড়া আমাদের সঙ্গীতের শ্রেষ্ঠত্ব অনুভব করা সম্ভব না। মাঠে-ময়দানে, আসরে যেভাবে কীর্তন পরিবেশিত হয়, সেই আঙ্গিকটি আমি ধরতে চেয়েছি। আয়োজনে প্রকাশনা অনুষ্ঠান শেষে সঙ্গীত পরিবেশন করেন কিরণ চন্দ্র রায়। গানে গানে শ্রোতাদের মুগ্ধ করেন শিল্পী। ১০টি গানে সাজানো সঙ্গীত সঙ্কলনটির যন্ত্রানুষঙ্গ পরিচালনা দুর্বাদল চট্টোপাধ্যায়। এ্যালবামে ঠাঁই পাওয়া গানগুলো হলোÑ মধাব বহুত মিনতি করি, ঢল ঢল কাঁচা অঙ্গের লাবণি, সই, কেবা শুনাইল শ্যাম-নাম, রূপ লাগি আঁখি ঝুরে, সুখের লাগিয়া এ ঘর বাঁধিনু, গোঠে আমি যাব মাগো, আজু রজনী হম ভাগে গমওল, মেঘ যামিনী চললি কামিনী, ওই বেণু বাজে ও অল্প বয়সে মোর। শেষ হলো নজরুল মেলা ॥ ‘আমরা সৃজিব নতুন জগৎ, আমরা গাহিব নতুন গান’ সেøাগানে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয় ব্র্যাক ব্যাংক নজরুল মেলা। নজরুল সঙ্গীত শিল্পী পরিষদ আয়োজিত তিন দিনের এ মেলার শেষ দিন ছিল শনিবার। বাকি দুই দিনের মতো সমাপনী দিনেও ছিল জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সৃষ্টি আশ্রিত গান-কবিতা ও নৃত্যে সাজানো বহুমাত্রিক পরিবেশনা। সব মিলিয়ে অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণ বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তন হয়ে ওঠে নজরুলময়। সকাল ও বিকেলের পর্বে পরিবেশিত হয় পরিষদের জেলা শাখার শিল্পীদের সঙ্গীত পরিবেশনা। জেলা শাখার শিল্পীদের পাশাপাশি সমবেত সঙ্গীত পরিবেশন করে দোলন চাঁপা, বুলবুল একাডেমির অব ফাইন আর্টস ও আবাসউদ্দীন সঙ্গীত একাডেমি। সান্ধ্যকালীন আয়োজনে নৃত্য পরিবেশন করে রেওয়াজ পারফর্মার্স স্কুল। কবিতা আবৃত্তি করেন সিমা ইসলাম। নজরুলের বাণী ধারণ করে সুরের মায়াজাল বুনে একক কণ্ঠে গান শোনান বুলবুল মহলানবীশ, রওশন আরা সোমা, ইউসুফ আহমেদ খান, ডালিয়া নওশিন, বদরুন্নেসা ডালিয়া, আশিষ কুমার সরকার, ছন্দা চক্রবর্তী, মুনতারিন মহল, নওশিন লায়লা, নাসিমা শাহীন ফেন্সি, প্রদীপ নন্দী ও রাহাত আরা গীতি। সব শেষে ছিল এদিনের বিশেষ আকর্ষণ ইয়াসমিন মুশতারীর সঙ্গীত পরিবেশনা। শিল্পকলায় আবৃত্তিসন্ধ্যা ॥ শিল্পকলা একাডেমি ও আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের যৌথ উদ্যোগে শনিবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হলো ‘এই তো জীবন, এই তো মাধুরী’ শীর্ষক আবৃত্তি অনুষ্ঠান। শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আবৃত্তি পরিবেশন করেন নাজমুল আহসান, সুপ্রভা সেবতি ও মু. সিদ্দিকুর রহমান। তাঁদের কণ্ঠে শোনা যায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, সুকান্ত ভট্টাচার্য, সৈয়দ শামসুল হক, রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ, শামসুর রাহমান, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়সহ প্রখ্যাত কবিদের কবিতা।
×